২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন


দেশকে রুহিন হোসেন প্রিন্স
সরকার জনগণের পকেট কাঁটার পথে হাঁটছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
সরকার জনগণের পকেট কাঁটার পথে হাঁটছে রুহিন হোসেন প্রিন্স


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, জনগণের প্রকৃত আয় কমে গেছে, মানুষ হতাশাগ্রস্ত। এর পাশাপাশি তারা ভয়ের রাজত্বের মধ্যে আছে বলেই এখনো পর্যন্ত প্রতিবাদী এবং প্রতিরোধী হচ্ছে না।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে দেশ পত্রিকার সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করলে তিনি একথা বলেন। দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের সাথে আলাপকালে রুহিন হোসেন প্রিন্সের অভিমতটি তুলে ধরা হলো। 

দেশ: রমজান মাস। পরিবারগুলোর জন্য বেশি খরচের মাস হিসেবে পরিচিত। রমজানের আগে একসাথে অনেক কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এমন পরিস্তিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। এমনিতেই সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া যেমন বড় একটা ধাক্কা। অন্যদিকে মার্চ থেকে কার্যকর হওয়া বিদ্যুতের নতুন দাম। ইউনিট প্রতি ৩৪ এবং ৭০ পয়সা বাড়ানো হচ্ছে দাম। যা এক বছর আগের তুলনায় ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেশি। সার্বিক বিষয়গুলি বিভাবে দেখেন?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমরা তো এসব বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলেছি। প্রথমত আমরা বলবো সরকার একটা আর্থিক দূরাবস্থার মধ্যে আছে। তারা এখন সঠিক পথ বাদ দিয়ে জনগণের পকেট কাঁটার পথে হাটছে। এমন অবস্থা আমরা নির্বাচনেও দেখেছি। এটাই মূল কারণ। আরেকটি কারণ হচ্ছে আইএমএফে’র প্রেসক্রিপশান। তাদের কথা মত কাজ করতে হলে যে সব জায়গায় তারা ভূতর্কি প্রত্যাহার করতে বলবে তা সরকারকে করতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শই মেনে চলতে হবে। তাই বিদ্যুতের দামতো বাড়বেই। এই যে আম এখন বরেন্দ্র আঞ্চলে আছি। এখানে এমাস থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এখন থেকে জমিতে সেচ দিতে হলে প্রতি ঘন্টায় বাড়তি ত্রিশ টাকা দিতে হবে। এবং এই রেট বাড়তেই থাকবে। এর অলটারনেটিভ ছিল যদি সরকার যদি বিদেশে প্রাচারকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারতো..। খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারতো..। লুটপাট দুর্নীতি বন্ধ করতে পারতো। কিন্তু সরকারতো এধরনের শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারবে না। কারণ এরাইতো সরকারের চালকের আসনে আছে। সরকার যে নীতিতে চলতে তাতে দেখা যায় সরকার মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের সে-ই ধারাকেই তারা প্রমোট করে। একারণে সে নিজের দিকে না তাকিয়ে জনগণের পকেট কাটার তালে আছে। এজন্য এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আর দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ নিয়ে এতোদিন যে গালগল্প করেছে তা ফাঁস হয়ে গেছে। এরা শুধু দাম বাড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি লোড শেডিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে। এজন্য অনেক আগেই বলেছি যে দুর্নীতি লুটপাটের কারণে বিদ্যুৎ খাত সঙ্কটে পড়বে..এবং তা-ই হতে যাচ্ছে। 

দেশ: কিন্তু বিষয়গুলো কি কেবল আপনারাই বুঝতে পারছেন? জনগণ কি বোঝে না? তাদের মধ্যেতো এনিয়ে কোনো বাদ-প্রতিবাদ বা বিক্ষুব্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই। বিষয়টি কি আসলে?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: এ ব্যাপারে বলতে গেলে বলা যায় যে এখন আমি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে। ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে তিনটি গ্রামে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষে সাথে কথা বলছি। তারা দেশের দ্রব্যমূল্যসহ সব পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। এসব ব্যাপারে জনগণের অভিমত হলো, ভাই করবো কি? কথা বললেতো কেউ শোনে না। কথা বললে বক্তব্য রাখলে আমাদের ওপর আরো নির্যাতন নেমে আসে। মানুষ হতাশাগ্রস্ত। আমি আমার পার্টি মনে করি এই কমরেডদের নিয়ে এসবের বিরুদ্ধে জাগ্রত করতে হবে। আমরা সে-ই কাজটি করার চেষ্টা করছি। 

দেশ: আসলে বিষয়টি কি এরকম যে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি দেশ এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত অবস্থায় আছে। উন্নয়নের ছোয়ায় মানুষ এখন এসব কষ্টকে কষ্ট মনে করে না..কি বলেন আপনি?

রুহিন হোসেন প্রিন্স : না না..। আমি তা মনে করি না। জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি লুটেরাদের প্রশয় দেয়, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সরকারের সিদ্ধান্তে জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ বিক্ষুব্ধ। জনগণ মনে করে সরকারের বিরুদ্ধে বলেতো কোনো কাজ হবে না। তাই দেখি আমি অন্যভাবে মেনেজ করে ফেলি। বিশেষ করে করে কেউ কেউ বাড়তি কিছু কাজ করে বিষয়টি পুষিয়ে নিতে চায়। দেখেন সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কিন্তু বাড়েনি। দেখেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের আয় বেড়েছে এটা কোনো পরিসংখ্যানেই বলা হয়নি বা সরকারও দাবি করেনি। বরং সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য দেয়া হচ্ছে যে মানুষ এখন কম খেয়ে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেমন বিদ্যুতের দাম যখন বাড়বে তখন সে কম ভোগ করবে। কম খেয়ে কম ভোগ করে সে পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করবে। এই যে ধরেন সেচের পানির দাম বেড়ে গেলো..। সে-ই কৃষক তো পানি ব্যবহার করবে, ফসলের দাম তো বাড়াতে হবে। সেচের পানি দেয়াতো সে কমাতে পারবে না। সেতো অন্যখাতে ব্যয় কমিয়ে এমন সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। তাই অধিকাংশ মানুষের আয় বাড়ছে এটা সরকারি তথ্যই সার্পোট করে না। বরং জনগণের প্রকৃত আয় কমে গেছে, মানুষ হতাশাগ্রস্ত। এর পাশাপাশি তারা ভয়ের রাজত্বের মধ্যে আছে বলেই এখনো পর্যন্ত প্রতিবাদি এবং প্রতিরোধী হচ্ছে না। এখানে জনগণকে সাহসী করে গড়ে তোলা একটি সচেতন রাজনৈতিক দলেরই কর্তব্য। আমরা সে কাজটিই করে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন