১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৪৯:১৯ পূর্বাহ্ন


জ্বালানি সংকটে নতুন শঙ্কা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
জ্বালানি সংকটে নতুন শঙ্কা


তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা এবং রাশিয়া ওপেক+, এক ঘোষণায় মে ২০২৩ থেকে দৈনিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল হারে তেল চাহিদা থেকে উৎপাদন কমানোর ষোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য গড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে গেছে। ব্রেন্ট  ক্রুড  মূল্য এখন প্রতি ব্যারেল ৮৪ দশমিক ৭৭ মার্কিন ডলার এবং ডাবলু টিআই প্রতি ব্যারেল  ৮০ দশমিক ৩৭। জ্বালানি বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচিরেই জ্বালানি তেলের মূল্য মার্কিন ডলার ১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে জ্বালানি তেলের মূল্যের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা, গ্যাস, এলএনজি মূল্য এবং পেট্রোলিয়াম জাত জ্বালানি মূল্য নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে। 

বৃত্তাকার প্রভাবে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে যাতায়াত ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়ানো বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। বিশ্ব অর্থনীতি কিন্তু সবে জ্বালানি মূল্যক্রম হ্রাসমান হতে থাকায় স্বস্তির পর্যায়ে উপনীত হচ্ছিল। করোনার অভিঘাত এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় এমনিতেই উন্নত, উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছিল। ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আর্থিক মন্দার কারণে জ্বালানি চাহিদা ব্যাপক হ্রাস পায়। সবচেয়ে বড় জ্বালানি আমদানি কারক দেশ চীন অনেক কমিয়ে ফেলে জ্বালানি আমদানি। আর তাই বিশ্ববাজারে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে কমছিল জ্বালানি মূল্য। এমতাবস্থায় জ্বালানি চাহিদা ধরে রাখার যুক্তিতেই উৎপাদন হ্রাস করেছে ওপেক+। 

এদিকে চীন নিজেদের সম্পূর্ণ কোভিড মুক্ত ঘোষণা করায় দ্রুত বাড়ছে জ্বালানি চাহিদা। এমতাবস্থায় তেল উৎপাদন এবং সরবরাহ কমে গেলে অবিশাস্য দ্রুততার সঙ্গে বাড়বে তেল, কয়লা, গ্যাস, এলএনজি, এলপিজি মূল্য। বাংলাদেশ কিন্তু ২০১৯ কোবিদ অতিমারী শুরু হওয়ার আগেই অনুন্নত দেশের সারি থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ২০২৬ থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা। বিদ্যমান অবস্থায় কিন্তু প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। নিজেদের কিছু ভুল কৌশল আর দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ কিন্তু অর্থনীতিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

দেশীয় জ্বালানিকে উপেক্ষা করে আমদানিকৃত কয়লা, এলএনজির দিকে ধাবিত হয়ে বাংলাদেশ ৪৮ শতাংশ জ্বালানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন পুনরায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশকে গভীর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। এর সঙ্গে রয়েছে বিদেশি ঋণের সুদ প্রদানের মহা দুশ্চিন্তা। কারণ ২০২৪ থেকেই বাংলাদেশকে বিভিন্ন উন্নয়ন খাত ও প্রজেক্টের জন্য নেয়া ঋণের দেড় হাজার কোটি ডলার বিদেশি ঋণ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। 

পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে, দেশের দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। নিজেদের উৎপাদন এবং স্পট মার্কেট সহ এলএনজি আমদানি নিয়ে সর্বোচ্চ ২৯০০-৩০০০ সরবরাহ করা সম্ভব। দেশের উৎপাদন কমছে। অচিরে আমদানি বাড়ানোর সুযোগ নেই। ১০০০ এমএমসিএফডি ঘাটতির কারণে কিছু কিছু খাতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক। এখনো গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ চাহিদা সৃষ্টি হয়নি। এমতাবস্থায় গ্যাস, তেল, কয়লার মূল্য বৈশ্বিক যে ধারা সে অনুপাতে সম্ভব্য বৃদ্ধি গভীর সংকটে ফেলবে বাংলাদেশকে। ডলার সংকটের সময় উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানি করা সাধ্যের সীমা অতিক্রম করবে।

শেয়ার করুন