০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৯:৩৪:৩৩ পূর্বাহ্ন


মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা
মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একইসূত্রে গাঁথা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৪-২০২৪
মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একইসূত্রে গাঁথা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ


দেশের ন্যায় প্রবাসেও যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসু্যুলেটে এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক মতামতকে সুসংহত করেছে। তারা বলেন, মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একইসূত্রে গাঁথা এবং মুজিবনগর সরকারের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করে গত ১৭ এপ্রিল বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান কর্তৃক দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান মিনস্টার (কমার্স) মো. সেলিম রেজা ও ফার্স্ট সেক্রেটারি অহিদুজ্জামান নুর। এরপর ‘মুজিবনগর : বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুজিবনগর সরকার’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারের আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ইমরান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং ৩০ লাখ শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, মুজিবনগর দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন এবং মুজিবনগর বাঙালি জাতির বীরত্বের প্রতীক। তিনি আরো বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক মতামতকে সুসংহত করেছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একইসূত্রে গাঁথা এবং মুজিবনগর সরকারের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিসহ-সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই সাফল্য গাথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত ইমরান বাঙালি জাতির হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নতুন প্রজন্মসহ-সবার ভালোভাবে জানার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এটি জাতিকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি ও প্রেরণা জোগাবে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানান। কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল) আরিফা রহমান রুমা সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ঐতিহাসিক এই দিবসের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি মন্তব্য করেন বাংলার শোষিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমর্থনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ছিল মুজিবনগর সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী সব শহিদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে একটি বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। কর্মসূচি পরিচালনা করেন ফার্স্ট সেক্রেটারি আতাউর রহমান।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন

প্রতিবারের মতো এবারও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটির শুরুতে মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদসহ জাতীয় চার নেতা, এ সরকারের প্রয়াত সদস্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অতঃপর দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। 

বাঙালির মুক্তির ইতিহাসে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠানটিতে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে ২৩ বছরের স্বাধীনতা-সংগ্রাম বাঙালি জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল। আর ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে শুরু করে। ঠিক সে সময়ে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরবর্তী সময়ে ২৬ মার্চে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে। ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও আইনগত ভিত্তি স্থাপনে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অসামান্য।

মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্ব, কৌশল ও সময়োপযোগী দিকনির্দেশনার ফলে মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায় মর্মে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, মুজিবনগর সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে বিশ্ব জনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে আনা, যা তারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছিল। এই সরকার বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পক্ষে আনতে বেশ কিছু সময়োযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকরা যেন দ্রুত পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেন, সে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যও তুলে ধরেন। 

প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুজিবনগর সরকারের ইতিহাস, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মুহিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করতে আমরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যাবো, মুজিবনগর দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

উন্মুক্ত আলোচনাপর্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন আলোচকরা। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে গত ১৭ এপ্রিল যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস’ পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করা হয়। প্রথমেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। 

কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার অনন্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি মুজিবনগর সরকার গঠনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ভূমিকা বর্ণনা করেন এবং তা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারান্তরীণকালীন মুজিবনগর সরকার দেশে ও বিদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও সমর্থন আদায়সহ মুক্তিযুদ্ধের পথনির্দেশনায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে বলে কনসাল জেনারেল যোগ করেন। কনসাল জেনারেল নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সবাইকে স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ-সব শহিদের রুহের মাগফিরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

শেয়ার করুন