১৭ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৪:০৪:০০ পূর্বাহ্ন


পদ্মা সেতু প্রয়োজন আরো ধৈর্য
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২২
পদ্মা সেতু প্রয়োজন আরো ধৈর্য


পদ্মা সেতু এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস ওয়েতে যান চলাচল শুরু হয়েছে।  সামগ্রিক ব্যবস্থা সমন্বিত করে সুনিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কিছুটা সময় লাগবে। ছোটোখাটো বিচ্ছুতি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো কারণ নেই। আধুনিক টেনোলজি সংযোজিত এই সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশ কেন, এশিয়ায় বিরল। নতুন দাঁত ওঠার ব্যাথা সহ্য করে জনগণকে কিছু দিন ধৈর্য্য ধরতেই হবে। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই একটু বেশীই আবেগপ্রবণ। পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের পর এখানে একটু হাটতে হবে। কে আগে মোটরসাইকেলে পার হবেন। কোন বাস সবার আগে পার হবে। কে আগে যেয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দেবে। কে টিকটক করে ভাইরাল হবে।

এখানে দাড়িয়ে সেলফি তুলতে হবে। এখানে দাড়িয়ে গানের তালে তালে নাচ করবে। এক মিনিটের জন্য হলেও চলমান রাস্তায় শুয়ে ছবি তুলতে হবে। একটু কোরআন তেলওয়াত করতে হবে। নামাজ পড়তে হবে। বিবাহবার্ষিকীর কেকটাও এখানে দাড়িয়ে কাটতে হবে। এগুলো আবেগী বাংলাদেশিদের আনন্দ উচ্ছাস, এটা অনুমেয়। কেউই খারাপভাবে কিছুই করেনি। সবাই পদ্মা সেতুকে যে মণ থেকে গ্রহন করেছে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে এ স্মৃতিটাকে স্বরণে রাখবে এটুকুই।

নতুবা উদ্ধোধনের আগের দিন যেয়ে সারারাত মশার কামড় খেয়ে ওই এলাকায় শত শত মানুষ বসে থাকার কারন কী। খারাপ উদ্দেশ্য, তা কিন্তু নয়। তবে আবেগতাড়িত হয়ে গেলে কিছু ভুলত্রুটি হয়ে যাবেই। বঙ্গবন্ধু সেতু নিয়েও কী কম হয়েছিল? কিন্তু এই মেগা স্থাপনা সমূহ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে সবাইকে আরো দায়িত্বশীল আচরণের প্রয়োজন রয়েছে।

সঠিক তথ্য না জেনে কিছু হুজুগে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সরকার বিরোধী মহল দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণতার কারণে নানা কথা বলতেই পারেন। কিন্তু দায়িত্বশীল প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং সংবাদ প্রকাশ করে জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদান করলে দ্রুত বিভ্রান্তি দূর হবে। 

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সেতুতে পায়ে হেটে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া সুবিবেচনা প্রসূত ছিলনা। বাঁধ ভাঙা জোয়ায়ের মতো সেতুতে উঠেছে মানুষ। একে মাঝে সবার উদ্দেশ্যই যে এক তাও কিন্তু একেবারে বলা যায়না। সেতুতে সিসিটিভি , স্পিড ক্যামেরা সংযোজন না করে সব ধরণের যান বহণ চলতে দেয়া ঠিক হয়নি। সেতুর কিছু প্রান্তিক কাজ বাকি থাকা অবস্থায় সবার চলাচলে সেতু উন্মুক্ত করা না হলে সেতুর উপর দুর্ঘটনা, মৃত্যু এড়ানো যেত। হুজুগে বাংলাদেশিদের নদী  শাসনের মতো নিয়ন্ত্রণ জরুরি সেটি যেন অর্জনের উচ্ছাসে ভেঙে গিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। 

বাংলাদেশিরা ই টোল বা স্বয়ংক্রিয় টোল ব্যাবস্থায় মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ বাংলা মুখী অধিকাংশ যানবাহন এখন পদ্মা সেতু ব্যবহার করছে। অথচ আরিচা -গোয়ালন্দ সংযোগে যাতায়াত এখন অনেক কমে গাছে। এমন ধরণের অবস্থা হবে সেটি আগাম অনুমান করে কর্তৃপক্ষকে আরো একটু সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সমীচীন ছিল। 

যাহোক শুরুতেই বলেছি নতুন দাঁত ওঠার স্বাভাবিক ব্যাথা সইতেই হবে। তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের মাদ্ধমে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়েছে। অচিরেই ঈদ সময়ে দক্ষিরের যাত্রী পরিবহনে পদ্মা সেতুর উপর প্রচন্ড চাপ পড়বে।  জনগণ শুভ প্রভাব অনুভম করবেন। এই সময়ের মাঝে সকল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পাদন করে মোটর বাইক সহ সকল বাহন উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত।

কারন পদ্মার ওপাড়ে শরীয়তপুর,মাদারীপুর এমনকি বরিশালেরও অনেক মানুষ বাইক নিয়ে ঢাকায় এসে তাদের অফিস-আদালত,ব্যাবসায়ী কাজ সম্মাদনের মত গুরুত্বপুন কাজগুলো করবেন। তাদের দীর্ঘদিনের প্লানও এমনটা। যা বাস্তবায়িত হয়েছে। এখণ সেটা যদি তারা না পারেন, তাদের বড় ক্ষতি। তবে সেতুর দুই পাড়ের পুলিশ স্টেশন , সেতুর নিরাপত্তার সঙ্গে সংযুক্ত সবাইকে আরো সজাগ সতর্ক হতে হবে। আশা করি মূল ধারার মিডিয়া অনুমান নির্ভর সংবাদ প্রচার বিষয়ে অধিকতর সচেষ্ট হবেন। 


শেয়ার করুন