২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৩৮:১৫ পূর্বাহ্ন


দেশকে শর্মিলা ঠাকুর
আমার পরিবার আমি কখনোই চাইনি অভিনয় করব
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
আমার পরিবার আমি কখনোই চাইনি অভিনয় করব বলিউড অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর


শর্মিলা ঠাকুর। বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী। তার প্রথম সিনেমা সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার। এখন বয়স ৭৯। এই বয়সেও তিনি বেশ পরিপাটি। সস্প্রতি তিনি এসেছিলেন ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারক হয়ে। উঠেছিলেন ঢাকার ইন্টারকন্টিনাল হোটেলে। সেখানে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: উপমহাদেশ জুড়ে আপনার ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা। শুরু দিকের স্ট্রাগলিংটা একটু শোনতে চাই। 

শর্মিলা ঠাকুর: শুরুতে আমার কোনো স্ট্রাগল ছিল না। অপুর সংসার সিনেমাটি মুক্তির পর ‘অপর্ণা’ চরিত্রটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। মানুষের ঘরে ঘরে অপর্ণার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। সে কারণে অভিনয়ে আমাকে খুব একটা সংগ্রাম করতে হয়নি। আমার পরিবার কিংবা আমিও কখনোই চাইনি, অভিনয় করব। মানিকদার (সত্যজিৎ রায়) সঙ্গে কাজের সুযোগ না পেলে হয়তো আমি শান্তিনিকেতনে পড়তাম।

প্রশ্ন: আপনি একই সঙ্গে বাংলা এবং হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দুই জায়গায় ভাষার বাইরে মূল পার্থক্যটা কি?

শর্মিলা ঠাকুর: বাংলা কিংবা হিন্দি-যেখানেই সিনেমা করেছি মন দিয়ে করেছি। আমি দুই ইন্ডাস্ট্রিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। বাংলা ছবিতে যখন কাজ করতাম, তখন সবাই বলত, এটা তোমাদের হিন্দি সিনেমা নয়; একটু ভেবে, সময় নিয়ে ক্যামেরার সামনে রিঅ্যাক্ট করবে। আবার হিন্দি সিনেমায় কাজ করার সময় শুনতাম, এটা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা নয়। দ্রুতলয়ে সংলাপ আওড়াবে।

প্রশ্ন: ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অভিজ্ঞতা কেমন?

শর্মিলা ঠাকুর: এর আগেও আমি ঢাকায় এসেছি। তবে এবার নতুন ভূমিকায় আসায় আরো ভালো লাগছে। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই এমন আয়োজনে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলাম বলে অনেক সিনেমা দেখতে হয়েছে। এ নিয়ে ব্যস্ত সময় কেটেছে। যে হোটেলটিতে উঠেছি, সেটিও সুন্দর। মনে হচ্ছে না কোনো হোটেলে উঠেছি। এদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ। বেশ কিছু খাবারের আবদার করেছি। সবই পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। অনেক মূল্যবান সময় দিয়েছেন তিনি। একসঙ্গে ছবি তুলেছি। 

প্রশ্ন: এই চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

শর্মিলা ঠাকুর: আয়োজকরা চেষ্টা করেছেন আন্তর্জাতিক মানের একটি উৎসবের। অনেক দেশের ছবির সঙ্গে দর্শকরা পরিচিতি হতে পেরেছেন। ভালো কিছু সিনেমা এসেছে উৎসবে। সিনেমা দেখতে দর্শকরা আসছেন, যা খুবই ইতিবাচক।

প্রশ্ন: বিরতি দিয়ে আপনি নতুন করে সিনেমায় কামব্যাক করেছেন। এই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলুন?

শর্মিলা ঠাকুর: এটাকে ‘কামব্যাক’ কেন বলছেন? এ শব্দটি আমার মোটেও পছন্দ নয়। আমি তো কোথাও যাইনি যে, কামব্যাক করব। যখন কোনো চরিত্র আমার ভালো লাগে, সেটা করতে চাই। ‘গুলমোহর’ সিনেমার চিত্রনাট্য ভীষণ ভালো লেগেছে। শুনেই মনে হয়েছে গল্পের চরিত্রটিতে আমাকে মানাবে। একটা কমফোর্ট জোন ছিল। আমি যা ভেবেছিলাম, তার থেকে অনেক ভালো হয়েছে। যদিও এটি ওটিটিতে এসেছে। 

প্রশ্ন: ওটিটি পুরো বিশ্বের বিনোদন মাধ্যম বদলে দিয়েছে। এই পরিবর্তনকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

শর্মিলা ঠাকুর: এখন সারা বিশ্বেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম প্রসারিত হচ্ছে। সিনেমা, থিয়েটার সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। করোনার সময় ওটিটির কারণেই অনেক পুরনো সিনেমা দেখার সুযোগ হয়েছে। এটা দরকার ছিল। 

প্রশ্ন: বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আপনার জীবনে কার প্রভাব বেশি ছিল? 

শর্মিলা ঠাকুর: শিল্পকলার প্রতি টানও তৈরি হয়েছিল পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণেই। ঠাকুরমাই আমার মেন্টর ছিলেন। ওনাকে আমি দাদু বলে ডাকতাম। মধ্যবিত্ত মূল্যবোধেই বেড়ে উঠেছি। গাড়িতে চড়ে কোনো দিন স্কুলে যাইনি। বাসে যেতাম, কখনও হেঁটেও ফিরতাম। বাবা বড় চাকরি করতেন, কিন্তু দূরে থাকতেন। আমি বড় হয়েছি ঠাকুরদা-ঠাকুমার সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবেশে। ঠাকুরমা খুব ভালো বাংলা বলতেন। শাড়ি পরতেন, ভালো রান্না করতেন। তাঁকে দেখেই অনেক কিছু শিখেছি। সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। এ কারণেই এখন অনান্দনিক, এলোমলো দেখলে আমার চোখে লাগে। 

প্রশ্ন: সমালোচনাকে কীভাবে নেন?

শর্মিলা ঠাকুর: আমি সমালোচনাকে কখনও পাত্তা দিইনি, তবে গঠনমূলক সমালোচনা মেনে নিই। আমার সম্পর্কে যখন অহেতুক কোনো লেখালেখি হতো, তখন খারাপ লাগত। যে ম্যাগাজিনগুলোতে লেখা হতো, তা পড়তাম না। কেউ যদি ফোন করে বলত তোমার সম্পর্কে লিখেছে, তখন একটু খারাপ লাগত। আর আমায় নিয়ে খারাপ কিছু লিখলে সবসময় চুপচাপ থাকতাম। জানতাম, এসব এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন