০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৬:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বাংলাদেশ : জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০২-২০২৩
বাংলাদেশ : জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ


আর্থিক সংকটে বাংলাদেশের জনগণের এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা। সীমিত আয়- ‘নুন আন্তে পান্তা ফুরানো’ জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া মূল্যের চাপে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্যের অতিরিক্ত চাপ। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অবধারিতভাবে চক্রাকারে বৃদ্ধি হচ্ছে বাড়িভাড়া, যানবাহন ভাড়া। ধারাবাহিক তিন মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ২০০৯ থেকে ২০২৩ অর্থনীতির পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, সমগ্র দেশবাসী এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, আমেরিকা, ভারতের  সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন যজ্ঞে অংশীদার এবং সম্পৃক্ত। 

কিন্তু একথাও স্বীকার করতে হবে উন্নয়ন সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে সুসমন্বিত হয়নি। মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব সুস্পষ্ট। যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতিতে। প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি। সাথে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে অনেক কাজে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করেই ব্যাপক প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হওয়ায় এবং একই সঙ্গে কোভিড অতিমারির অভিঘাত এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বৈষয়িক প্রভাবে টালমাটাল হয়ে পড়েছে সরকার। কোভিড শক্তহাতে প্রশংসনীয় উপায় সামাল দিলেও অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছে গোটা বিশ্বের ন্যায়। এরপরও ঘুরে দাঁড়ানের প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছিল যখন সব তখন শুরু ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। এ যুদ্ধ অনেকটাই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো। এটা সামাল দেয়ার প্রস্তুতির কথা বিশ্বের অনেকেই যেমন ভাবেনি। বাংলাদেশও না। ফলে এ চাপটা এসে ভীষণ ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। সেটাই এখন বয়ে বেড়াচ্ছে। এটা সামাল দিতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কঠিন কিছু শর্তে আইএমএফের লোন নেয়া।  

ওদিকে আবার নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় বিরোধীদলগুলো নানাভাবে সরকারের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে সরব হচ্ছে। কিন্তু সরকার বলুন বা বিরোধীদল বলুন, কারোরই যেন জনদুর্ভোগের বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনায় নেই। দুই পক্ষই জনগণের কথা, জনগণের অবস্থার কথা ভুলে যেন বিদেশি পরাশক্তির সহানুভূতি পেতে মরিয়া।  

বাংলাদেশের জনগণ বিভিন্ন মেয়াদে তিনটি মূল দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির শাসন, অপশাসন দেখেছে। বর্তমানে সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে অনেক কিছুই জানতে পারছে মুহূর্তের মধ্যেই এবং সেটা দেশের প্রায় সকল স্তরের জনগণ। সৎ-অসৎ প্রোপাগান্ডা বাছবিচার করার ক্ষমতাও অর্জন করেছে জনগণ।

কোনো দুঃসশাসন কখনই জনগণ মেনে নেয়নি। দুই দিন আগে বা পরে সেটার পরিবর্তন তারা চেয়েছে। করেও ছেড়েছে। বর্তমান দুঃসহ অবস্থার পরিবর্তনও অবশ্যই চায় জনগণ। তবে এটাও ঠিক, সেই পরিবর্তন কীভাবে হবে বা কি আছে বিকল্প কেউ জানেন না। এটি স্বীকার করতেই হবে বর্তমান সরকার গ্রামগঞ্জের (তৃণমূলে) দায়িত্বে যারা, তারা সবাই কিছু না কিছু কাজ করছেন। তবে একই সঙ্গে কঠোর নজরদারির অভাবে কিছু কিছু স্থানে দুর্নীতি ক্যানসার হয়ে অক্টোপাস বাঁধনে বেঁধে ফেলেছে সমাজব্যবস্থাকে। 

যাতে করে ক্ষমতাসীনদের মধ্যেও যে সৎ, নিষ্ঠার যে নেতৃত্ব ছিল সেটা বর্তমান রাজনীতিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। 

যে সুযোগে বিদেশি শক্তিগুলো অনায়াসে নাক গলাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে কোনো কোনো পরাশক্তি সুযোগ নেয়ারও চেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অসহায় জনগণ মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না। ঠিক যেন ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ অবস্থা।’ 

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে (জন) বিস্ফোরণ ঘটলে বিস্মিত হবো না। সেই পরিস্থিতি কারো জন্যই শুভকর হবে না। আশাকরি, দেশপ্রেমিক নেতা-নেত্রীরা জাতীয় সংকটে সচেতন হবেন।

শেয়ার করুন