০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৩:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


‘কোটা ইস্যুতে সরকারের কিছু করার নেই’
দেশ অনলাইন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৭-২০২৪
‘কোটা ইস্যুতে সরকারের কিছু করার নেই’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলন হলেও দুর্নীতি, বিএসএস-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোটা আন্দোলন থেকে শিক্ষকদের আন্দোলন, তিস্তা প্রকল্প, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ড. আহসানুল ইসলাম টিটু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।

কোটা ইস্যুতে সরকারের কিছু করার নেই


সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসা পর্যন্ত তাদের কিছু করার নেই।


কোটা নিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী দাঁড়ানোর কোন অধিকার সরকারের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। আদালতের রায়ের বিষয়, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। এ বাস্তবতা তাদের (কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী) মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই।
সরকার প্রধান বলেন, রাজপথে আন্দোলন করছে, তবে কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। তবে এর বাইরে কিছু করলে কিংবা পুলিশের গায়ে হাত দিলে, গাড়ি ভাংচুর করলে বা তারা যদি অন্যকিছু করতে যায়, তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে।


চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কী রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? তারা নিজের জীবন বাজি রেখে, সংসারসহ সব ফেলে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধ করে এদেশের বিজয় এনেছে। তাঁরা (মুক্তিযোদ্ধা) বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই আজ উচ্চপদে আসীন। নইলে তো পাকিস্তানের বুটের তলায় থাকতে হতো।


কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করেছিল, শুধু আন্দোলন না, আরো সব ঘটনা ঘটাচ্ছিল যেমন আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের কিছু জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতর বসে তারা মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিল। এ সমস্ত দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন এক পর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা।


প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশিদূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন, ফরেন সার্ভিসে দুই জন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চার জন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ শতাংশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন। আমরা বলেছিলাম যে, কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তীতে থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হল সব বন্ধ করলাম।


এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করব, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? তারা যদি এই বড় কথাগুলো না বলত, কোথাও না কোথাও চাকরি করত। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না।


তিনি বলেন,  অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেইসব মানুষের কি কোনও অধিকার থাকবে না? সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ যাতে চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা কী দাঁড়িয়েছে? কোন কোন জেলা নয়, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি, প্রশাসন বা কোথাও না।
কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পরে কোর্ট যখন কোনও রায় দেয়, সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারাতো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কি তারা চিনবেন না। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে, তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজ হয়, সেটা কি তাদের জানা আছে? ধারণা তো দেখি না।


তিনি আরও বলেন, যখন আদালতে চলে গেল, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না করে তারা রাজপথে সমাধান করবে, আমাকে তাই বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালিবিধিও বলে না। কিছুই না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের একটি দাবিনামা আমার কাছে এসেছে। সেখানেও তাদের ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেগুলো আমার মার্ক করা আছে। এর মধ্যে তুলতে চাই না। আমার কাছে লেখা আছে।
তিনি বলেন, পেনশনটা দেয়া হচ্ছে যারা আমাদের ট্যাক্স দেয়, তাদের টাকা থেকেই।  আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম করতে যাচ্ছি সবার জন্য। তাদের (বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষকদের) অনেকগুলো ভুল ধারণা। এত বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। পেনশন নিয়ে তাদের ধারণা এত বিভ্রান্তিকর! এর মধ্যে দুই একটা জিনিস আছে, সেটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। কোনও ব্যাপার না। আর কয়েকটি বিষয় আমি দেখে রেখেছি। মার্ক করে রেখেছি। সেগুলো আমরা দেবো।


শেখ হাসিনা সকল গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন না করা এবং ১০ম ওয়েজ বোর্ড প্রদানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সাংবাদিকদের এই সমস্যা জানি বলেই তাদের জন্য পেনশন স্কিম দিয়েছি। সাংবাদিকদের আজ কারও চাকরি না থাকলে কাল কিছুই করার নেই। কোথায় যাবে তারা, তার পরিবার কোথায় যাবে? সেজন্যই পেনশন স্কিম এমনভাবে করা হয়েছে, বিপদের সময় যাতে হেল্প হয়।  আপনারা সবাই এর  (পেনশন স্কিম) সঙ্গে যুক্ত হন। আপনাদের পরিবারের সদস্যদেরও অন্তর্ভূক্ত করতে পারবেন। তবে, ওয়েজ বোর্ড নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।


এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা সরকারি চাকরি পরীক্ষায়  প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
বিসিএসের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে যারা উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি করছেন, খুঁজে বের করা গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ব্যবস্থা নেবো না কেন? তাদের তো চাকরি করার কোনও অধিকারই থাকবে না। এখন সেটা খুঁজে দেবে কে? ওরা (প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া) যদি বলতে পারে যে অমুকের কাছে বিক্রি করেছে- তখন প্রমাণ করতে পারলে সেটি দেখা যাবে।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কোনো পরীক্ষা নয়, হাওয়া ভবন থেকে পাঠানো তালিকায় বিসিএসে চাকরি হতো । তিনি বলেন, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সালে। বিএনপির আমলে সেই সময়ে যত পরীক্ষা হতো, চাকরি হতো, সব হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো। সেই তালিকা অনুযায়ী চাকরি হতো। ঢাকা কলেজে সেই সময় একটা বিশেষ কামরা রাখা হতো। সেখানে বসে তাদের লোক পরীক্ষা দিতো। তাদেরই চাকরি হতো।


সরকার প্রধান বলেন, প্রশ্নফাঁস করে নিজেদের লোককে চাকরি দেয়া সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু হয়েছিল। খালেদার আমলে সেটা চলেছে। আমরা এটা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি। তথ্যসূত্র: বাসস।


শেয়ার করুন