১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৫:১৬:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


ট্রাম্প প্রশাসনের অনুদানে স্থগিতাদেশ কোর্টে রোহিত
মেডিকেইডসহ একাধিক কর্মসূচি বন্ধের শঙ্কা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
মেডিকেইডসহ একাধিক কর্মসূচি বন্ধের শঙ্কা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকের মাধ্যমে ফেডারেল অনুদান ও ঋণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার জারি করা এই স্মারক দেশের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ট্রাম্প-এর এই আদেশ মেডিকেইডসহ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যদিও হোয়াইট হাউস দাবি করেছে যে আদেশটি ততটা বিস্তৃত নয় যতটা প্রথমে মনে হয়েছিল, বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন যে এই স্থগিতাদেশ ইতোমধ্যে মেডিকেইড কর্মসূচির ওপর প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল অনুদান স্থগিতাদেশের ফলে, প্রধানত অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য মেডিকেড কর্মসূচি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে, যা তাদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করবে। সিনেটর রন ওয়াইডেন জানান, ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই মেডিকেইড পেমেন্টের জন্য ব্যবহৃত পোর্টাল বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, আমি নিশ্চিত নই মেডিকেড কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে কিনা। আমি এ বিষয়ে পরে জানাবো। সোশ্যাল সিকিউরিটি, মেডিকেয়ার এবং সরাসরি ব্যক্তিগত সহায়তা কর্মসূচিগুলি এই স্থগিতাদেশের আওতার বাইরে থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ২৭ জানুয়ারি সোমবার বিকাল ৫টা থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্ত ফেডারেল ব্যয়কে প্রেসিডেন্টের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে নেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনপ্রণেতা ও রাজ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রায় ৭০ মিলিয়ন নিম্ন আয়ের আমেরিকানের স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্ভরশীল মেডিকেড কর্মসূচি ফেডারেল ও স্টেট গভর্নমেন্টের সাথে যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত হয়।

এই আদেশে শুধু অভ্যন্তরীণ কর্মসূচিই নয়, বরং বৈদেশিক সাহায্য এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সরবরাহও স্থগিত করা হয়েছে। স্মারকে বলা হয়েছে যে সমস্ত ব্যয় প্রেসিডেন্টের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অলাভজনক সংস্থা এবং শিক্ষা খাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ন্যাশনাল হেড স্টার্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপ-পরিচালক টমি শেরিডান জানান যে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। 

মিলস অন হুইলস বয়স্কদের জন্য খাবার সরবরাহ করে, সেটিও এই স্থগিতাদেশের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। মিলস অন হুইলসের মুখপাত্র জেনি ইয়ং বলেন, প্রধান উৎস বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ প্রবীণ নাগরিকের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, প্রবীণরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন, কারণ তারা জানেন না তাদের পরবর্তী খাবার কোথা থেকে আসবে।

স্থগিতাদেশ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিউ ইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ ছয়টি রাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেলরা এই স্থগিতাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছেন। নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এই নীতিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, বিপজ্জনক, অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছেন। ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া ক্যাম্পবেল বলেছেন, কংগ্রেস জনগণের অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, এবং শুধুমাত্র প্রশাসনের অপছন্দ হলেই তারা এই অর্থায়ন বন্ধ করতে পারে না।

স্থগিতাদেশ ঘোষণার পর বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থা ফেডারেল আদালতে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, স্মারকটি কোন আইনি ভিত্তিতে সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত করছে, তা পরিষ্কার নয়। মামলার বাদী ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নন-প্রফিটস এবং আমেরিকান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে যে এই আদেশ ফেডারেল সরকারের প্রতিটি কর্মসূচিকে বিপদে ফেলেছে। ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, কংগ্রেস অনুমোদিত এই অনুদান ঐচ্ছিক নয়; এটি আইন। এই স্থগিতাদেশ দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।

অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির মতে, তাদের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রধানত গবেষণার জন্য ফেডারেল অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। এই অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় ধরনের ধস নামবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। আইন প্রণেতা, অলাভজনক সংস্থা এবং সাধারণ জনগণ এখন উদ্বেগে রয়েছে। আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে এই সংকট কতটুকু সমাধান হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল অনুদান স্থগিতাদেশ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জনকল্যাণ কর্মসূচিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, যা লাখ লাখ আমেরিকানের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব আনবে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনগত ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তীব্র হতে শুরু করেছে, এবং কংগ্রেস ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত। যদিও প্রশাসন এই সিদ্ধান্তকে ফেডারেল ব্যয়ের নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে দেখাতে চায়, বাস্তবে এটি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আইনি লড়াই এবং রাজনৈতিক চাপের মধ্যে এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে, সেটি আগামী দিনগুলোতে পরিষ্কার হবে।

এদিকে গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসি ডিষ্ট্রিক্ট কোর্টের ফেডারেল বিচারক টিমোথি কেলি ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল অনুদান ও ঋণ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের ওপর অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। এই বিষয়ে আদালতের পরবর্তী শুনানি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এই ফান্ডিং ফ্রীজ এর ভবিষ্যত নির্ধারণ করা হবে।

মামলায় স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলরা বলেছেন, ওএমবি নির্দেশিকা ক্ষমতার বিভাজন নীতি লঙ্ঘন করছে কারণ এক্সিকিউটিভ শাখা কংগ্রেসের সুনিপুণ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বহু ফেডারেল অনুদান প্রোগ্রামের জন্য অর্থ বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, এই ফ্রীজ বিশেষভাবে এমন অনুদান প্রোগ্রামের জন্য অবৈধ, যেগুলোর জন্য কংগ্রেসের নির্দিষ্ট আইনি সূত্র রয়েছে। বিচারকের এই আদেশের পর ২২টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং ফেডারেল অনুদান ফ্রীজের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক এবং ক্ষমতাবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং দাবি করেছে যে এটি কংগ্রেসের ক্ষমতা লঙ্ঘন করছে। 

শেয়ার করুন