০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:১৬:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


পানির অধিকার নিশ্চিত না হলে অস্থিরতা বাড়বে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
পানির অধিকার নিশ্চিত না হলে অস্থিরতা বাড়বে আলোচনা সভায় অতিথিবৃন্দ


ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমাতে সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন। পানির অধিকার একটি মানবাধিকার, আর তা নিশ্চিত না হলে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। আর এজন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যত নিরাপদ পানির অপ্রতুলতা প্রশমনে ব্যক্তি পর্যায় থেকে পানির অপব্যবহার বন্ধের চর্চা শুরু করতে হবে। এর পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদানুযায়ী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে দক্ষ প্রযুক্তি ও কার্যকরী পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকাস্থ সিরডাপ এর এটিএম শামসুল হক মিলনায়তনে “ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট: কৃষি ও পরিবেশের ওপর প্রভাব মোকাবেলায় করণীয়” শীর্ষক এক অনুষ্ঠান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা এমন অভিমত জানিয়েছেন।

এলআরডি ও বেলা’র যৌথ আয়োজনে এবং পানি অধিকার ফোরামের উদ্যোগে এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, “বাংলাদেশের বরেন্দ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যার ফলে পানির প্রাপ্যতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। দেশের ৯৭% মানুষ পানীয় জল এবং ৮০% কৃষির সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে। বরেন্দ্র অঞ্চলে বিশেষ করে বোরো ধান চাষের সময় (মার্চ-মে) অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ৭-৮ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যায়, ফলে অনেক নলকূপ শুকিয়ে যায় এবং মানুষ নিরাপদ পানির সংকটে পড়ে। 

একইভাবে, উপকূলীয় অঞ্চলের ৫৩% এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে, যা কৃষিজমি ও ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, দীর্ঘ খরা এবং পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এই সংকটকে আরও তীব্র করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুকুর ও খাড়ি পুনঃখনন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নদীর পানি দিয়ে সেচ এবং ড্রিপ সেচ, অডউ পদ্ধতির মতো পানির সাশ্রয়ী কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে পানি আইন ২০১৩ ও পানি বিধিমালা ২০১৮ এর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এই পদক্ষেপগুলো এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ঢাকা ওয়াসা ৭১ শতাংশ পানি ভূ-গর্ভস্থ থেকে উত্তোলন করলেও মেঘনা নদী থেকে পানি আনতে হচ্ছে, কারণ অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে পানির স্তরর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের জায়গা বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প দখল করে নিয়েছে। তাই, খরচ কমে যাওয়ায় এবং নজরদারির অভাবে সেচের পানি ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে।

পানির সুশাসনে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এএলআরডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি বলেন, গ্রামীণ নারীদের ৭২% কৃষিতে যুক্ত এবং তারা মূলত ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করে টেকসই চাষে অবদান রাখছে। নারীদের এই প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক পানি নীতিতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ইনসিডিন বাংলাদেশ এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, পানি সুশাসনে ৫টি ‘প’ গুরুত্বপূর্ণ- প্রাধান্য, প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রয়োগ; যেখানে কৃষক, নারী, আদিবাসী, প্রান্তিক মানুষ ও পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও প্রয়োগের অদক্ষতা দূর করে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. শাহাজাহান মন্ডল বলেন, সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় বোরো ধানের আবাদ বন্ধ ও খাল পুনঃখননের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আইন, নীতি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পানির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদ বলেন, দেশে বছরে ৩২ বিলিয়ন ঘনমিটার ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন হয়। তিনি কম পানি প্রয়োজন এমন শস্য চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুজ্জামান মনে করেন, দেশের পানি সংকট মূলত ব্যবস্থাপনার অভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ধানের চাহিদা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন