১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:১৩:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


নাগরিক জীবনে বেড়েছে আতঙ্ক
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৫
নাগরিক জীবনে বেড়েছে আতঙ্ক


গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা বন্ধ করা যায়নি। বরং সরকারের নিষ্কৃয়তায় এ বিষয়ে নাগরিকদের জীবনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তহীনতা বেড়েছে। ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর পক্ষ মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন জুন প্রকাশ করে এমন্তব্য করা হয়। এতে আরও বলা হয় যে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুন, ২০২৫ সময়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকালে গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি জেলে-স্থানীয় জনতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ ও গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। সংস্কার সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে দরকষাকষি ছাড়া রাজনৈতিক কর্মকান্ড তেমন না থাকলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বকালীন সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দুস্কৃতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার পর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ যে কোনো ব্যক্তিকে আন্দোলন বিরোধী বলে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মে মাসের ধারায় একইভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন; ধর্ষণ, আত্মহত্যা, হত্যা, শিশু ও নারীদের প্রতি শারীরিক নির্যাতন ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। এ মাসে কারা- হেফাজতে মৃত্যুর ধারাবাহিকতাও রয়েছে । সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা বন্ধ হয়নি বরঞ্চ দিনে দুপুরে বুলডোজার দিয়ে মন্দির ভংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তে হতাহতের ঘটনা বন্ধ হয়নি বরং পুশইনের ঘটনা বেড়েছে। অপরদিকে পার্বত্য এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানাচ্ছে।

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে কারা হেফাজতে নারীসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে এর সংখ্যা ছিল ৮। নিহত বন্দিদের মধ্যে একজন আত্মহত্যা করেছেন, অপর এক বন্দি নির্যাতনে মারা গেছেন বলে পরিবারের অভিযোগ। বাকি এ মাসে ১ জন কয়েদি ও ৫ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে রংপুরে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশু-কিশোরীদের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ও মামলার সংখ্যা কমে গেলেও দুস্কৃতিকারি কর্তৃক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাসহ রাজনৈতিক দলসমূহের নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিএনপির দলীয় কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। যা জনমনে নিরাপত্তাহীনতা ও ভীতির সৃষ্টি করেছে। 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৫ টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৪৩৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন নিহত এবং ৪৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহতদের মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ১ জন বৃদ্ধসহ ৬ জন, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের আঘাতে বিএনপির ১ জন, কথিত বিএনপি-জামাত সংঘর্ষে জামায়াতের ১ জন নিহত হয়েছেন। 

এ মাসে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের উপর দুস্কৃতিকারিদের হামলার ১৬ টি ঘটনা ঘটেছে এবং এ সকল ঘটনায় ২১ জন আহত ও ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।

শেয়ার করুন