২০ মে ২০১২, সোমবার, ০২:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন


১ হাজার গ্রেফতার, হার্ভার্ড থেকে ইয়েল, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আহ্বান
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন বিক্ষোভকারীদের দখলে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন বিক্ষোভকারীদের দখলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা


যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিক্ষোভ বন্ধে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করে গত ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিক্ষোভস্থল ছেড়ে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করতে শুরু করেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সপ্তাহ দু-এক আগে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে গত ১৮ এপ্রিল প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় তাঁবু খাটিয়ে চলছে বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁবু সরিয়ে নিতে এবং বিক্ষোভ বন্ধ করতে গত ২৯ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করে গতকালও প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।

গত ২৯ এপ্রিল দিনের শুরুর দিকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন দখল করে নেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হ্যামিল্টন হলের’ নিয়ন্ত্রণ নেন। একপর্যায়ে ভবনের দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নেন তাঁরা। ভবনের জানালা দিয়ে ‘হিন্দ’স হল’ নামের একটি ব্যানারও ঝুলিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ছয় বছরের শিশু হিন্দ রজবের সম্মানে হিন্দ’স হল নাম দেওয়া হয়েছে।

ফিলিস্তিনের পক্ষে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিক্ষোভে উত্তাল

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং সেটির জেরে ইসরায়েল গাজায় যে হামলা চালাচ্ছে তাতে এখনো পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ক্রমশ। এই বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

এ ধরনের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর থেকে অন্যান্য জায়গাও বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে ছয় শতাধিক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। টেক্সাসের অস্টিনে সেখানকার গভর্নর ট্রুপারদের নির্দেশ দিয়েছে বিক্ষোভকারীদের আটক করতে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সর্বপ্রথম বড় ধরনের বিক্ষোভ হয় কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। যেসব বিশ্ববিদ্যালকে ইহুদি বিদ্বেষের জন্য অভিযুক্ত করা হয় তার মধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। গত সপ্তাহে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বললে ১০০-এর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টকে। এরপর ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন তিনি। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গ্রেফতারের ঘটনা বিক্ষোভকে আরো উসকে দেয়।

আটককৃতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি ইলহান ওমরের কন্যাও রয়েছেন। ইলহান ওমর মিডিয়াকে বলেন, বিক্ষোভ শুরু করেছিল হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থী। তাদের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি ছিল না। কিন্তু গ্রেফতারের ঘটনার পর সেটি বেশ দ্রুত ছড়িয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ‘কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি যেহেতু তাদের ধরপাকড় করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে এবং সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে, সেজন্য এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’

এমোরি ইউনিভার্সিটি

গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে আটলান্টায় কিছু বিক্ষোভকারী এমোরি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এসে তাঁবু খাটিয়ে বসে যায়। তারা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, পরবর্তী সময়ে বহিরাগতদের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি কমিউনিটির সদস্যরাও যোগ দেয়। বিক্ষোভকারীরা যখন সে স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন কিছু বিক্ষোভকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সংখ্যা কত এবং তারা কোন ধরনের বিচারের মুখোমুখি হবে সেটি পরিষ্কার করেনি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সেখানে কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জন করা একজন শিক্ষার্থীর ভাষণ বাতিল করেছে। পরবর্তী সময়ে আগামী ১০ মে অনুষ্ঠিতব্য কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমেন্সমেন্ট হলো এমন একটি অনুষ্ঠান যেটি আয়োজন করা হয় গ্র্যাজুয়েটসদের সম্মাননা জানানোর জন্য। এই কমেন্সমেন্ট অনুষ্ঠান বাতিল করার পর ক্যাম্পাসে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সে অনুষ্ঠানে ৬৫ হাজার মানুষ অংশ নেওয়ার কথা ছিল। ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জনকারী সে শিক্ষার্থী, যাকে ভ্যালিডিক্টোরিয়ান বলা হয়, তিনি ওয়েবসাইটে ইসরায়েলবিরোধী একটি পোস্ট দিয়েছেন। এই শিক্ষার্থী একজন মুসলিম। এই পোস্টকে ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি থাকার কারণে এটি বাতিল করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সেই শিক্ষার্থীর পোস্টকে নিন্দা করেনি। কিন্ত এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলপন্থী উভয় শিক্ষার্থীকে ক্ষুব্ধ করেছে।

ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থীরা দাবি জানাচ্ছেন, সেই শিক্ষার্থীকে যেন বক্তৃতার সুযোগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষে যারা আছেন তারা বলছেন, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে এই পোস্টের নিন্দা জানাতে হবে। এমন অবস্থায় গত ২৪ এপ্রিল বুধবার লস আঞ্জেলেস পুলিশকে ডাকা হয়েছিল এবং তারা ৯৩ জনকে আটক করেছে।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি

পুলিশ বলছে, ২৪ এপ্রিল বুধবার রাতে অস্টিনে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টেক্সাসের পাবলিক সেইফটি ডিপার্টমেন্টের সৈন্যদের দেখা গেছে তারা সুসজ্জিত হয়ে তাদের বাইক দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেছনের দিকে ঠেলছে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট রিপাবলিকান দলের একজন সদস্য। তিনি পাবলিক সেইফটি ডিপার্টমেন্টের সৈন্যদের তলব করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, বিক্ষোভকারীরা ইহুদিবিদ্বেষী এবং তাদের বহিষ্কার করার দাবি করেন তিনি। ডেমোক্র্যাট সদস্যরা অভিযোগ করছেন, গভর্নর তার প্রচারণার জন্য এই গণগ্রেফতারের বিষয়টি ব্যবহার করছেন।

টেক্সাসের ন্যাশনাল গার্ড এক বিবৃতিতে অস্বীকার করেছে যে, ক্যাম্পাসে গ্রেফতার করার জন্য তারা সৈন্য জড়ো করেছিল। ‘গত ২৫ এপ্রিল ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে বিক্ষোভের বিষয়ে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড অবহিত ছিল এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি ছিল। বিক্ষোভের সময় কোনো সৈন্যকে ক্যাম্পাসে পাঠানো হয়নি,’ টেক্সাস মিলিটারি ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি

গত ২২ এপ্রিল সোমবার নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ম্যানহাটন ক্যাম্পাসে কিছু বিক্ষোভকারী তাৎক্ষণিকভাবে তাঁবু টানিয়ে বসে যায়। সেখান থেকে পুলিশ ১২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে চারজনকে বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

গত ২৪ এপ্রিল বুধবার হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি চত্বরে একদল শিক্ষার্থী অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বসে বিক্ষোভ শুরু করে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েটস প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে। তবে পুলিশ ডেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অস্বীকৃতি জানান হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট।

অন্যান্য ইউনিভার্সিটি

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় আরো আরো অন্তত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া কিছু হাইস্কুলেও বিক্ষোভ হয়েছে। ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটিতে ১০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বাতিল করতে হয়েছে। বিক্ষোভের সময় চার জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

কানেকটিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে ২৪ এপ্রিল বুধবার ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হলেও সেখানে এখনো বিক্ষোভ চলছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চার জন ছাড়া বাকি সবাই ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সিয়াটলে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা যুদ্ধের প্রতিবাদে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়ে আসে। এদিকে শুক্রবার নিউজার্সির হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা একটি পদযাত্রার আয়োজন করেছে। শিক্ষার্থীরা যাতে সেখানে যোগ না দেয়, সেজন্য নিউজার্সির স্কুল কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছে।

বাংলাদেশিসহ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী বহিষ্কার

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়ায় বিশ্বখ্যাত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশিসহ ৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মায়মুনা ইসলাম নুহার রুমমেটসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নুহার বাবা মনির হোসেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের বাসিন্দা। তিনি জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করছে। এই বিক্ষোভের জেরে বিশ্বখ্যাত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৮ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে তার মেয়ে মায়মুনা ইসলাম নুহাও রয়েছেন। তিনি আরো জানান, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মুখ সারির প্রতিবাদী হিসেবে কাজ করছেন তার মেয়ে নুহা। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নুহার রুমমেট ও মিনেসোটার কংগ্রেসওমেন ইলহান আবদুল্লাহি ওমরের মেয়ে ইসরা হিরসিসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

নুহা ফুল স্কলারশিপ নিয়ে নিউরো সায়েন্সের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়াশোনার পাশাপাশি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিও করছেন। গ্রেফতার এড়াতে নুহা লুকিয়ে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন তার বাবা। 

মনির হোসেন বলেন, নুহা ও তার সঙ্গীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড, এমআইটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবতার পক্ষের আন্দোলনে ক্রমশ যুক্ত হতে শুরু করছে। 

তারা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ইসরায়েলের ফান্ড প্রত্যাখ্যানের দাবি জানাচ্ছেন। তারা অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধেরও দাবি জানাচ্ছেন। ইহুদি সম্প্রদায়ের অনেকেও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। নুহার বাবা মনির হোসেনের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সদ্বীপ উপজেলায়।

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান হোয়াইট হাউসের

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোয় কয়েক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনপন্থীদের টানা বিক্ষোভ চলছে। আটক করা হয়েছে কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে। এর পরিস্থিতিতে গত ২৮ এপ্রিল রোববার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ক্যাম্পাসগুলোয় চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। জানা গেছে, ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি পৃথক ক্যাম্পাস থেকে সপ্তাহান্তে প্রায় ২৭৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বিক্ষোভের বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, সব মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি আমরা (মার্কিন প্রশাসন) শ্রদ্ধাশীল। তবে বিক্ষোভ থেকে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক যেসব ভাষা আমরা শুনতে পেয়েছি, তা নিন্দনীয়। ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য ও সহিংসতার হুমকির নিন্দা জানাই।

মূলত নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ দানা বাঁধে। ধীরে ধীরে তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভের কারণে অনেক ক্যাম্পাস অশান্ত হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় পুলিশ বেশ কঠোর আচরণ করেছে। আটক করা হয়েছে কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে। এর মধ্যে বোস্টনের নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ১০০ জনকে, ওয়াশিংটনের সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটি থেকে ৮০ জনকে, আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ৭২ জনকে এবং আরো ২৩ জনকে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে আটক করা হয়েছে।

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে গত ২৭ এপ্রিল শনিবার আটক হন গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জিল স্টেইন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের মারমুখী আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তিনি। আটক হওয়ার আগে তিনি সিএনএনকে বলেন, এটা বাক্্-স্বাধীনতার বিষয়। খুবই জটিল একটি বিষয়। কিন্তু দাঙ্গা পুলিশ এনে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিক্ষোভের মুখে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির হামবোল্ডট ক্যাম্পাসসহ কয়েকটি ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলছে অনলাইন ক্লাস।

শেয়ার করুন