২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:২২:৩২ পূর্বাহ্ন


ব্যর্থ এবং দুর্নীতিবাজদের না সরালে
বাংলাদেশের সামনে মহাদুর্যোগ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৭-২০২২
বাংলাদেশের সামনে মহাদুর্যোগ


আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মনে হলেও আসলে যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তির। ভøাদিমির পুতিনও তাই বলছিলেন। ইউক্রেনের পাশে কেউ দাঁড়ালে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। তবে সে ভয়াবহ পরিণতি শুধু ইউরোপই নয়, ভোগ করছে গোটা বিশ্বই। অনেক সমীকরণের মাঝে প্রধান হলো জ্বালানি রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তৃত করা। পশ্চিম ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশকে রাশিয়ার গ্যাস, তেল-নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনা।

সবাই জানে রাশিয়ার পর্যাপ্ত আবিষ্কৃত কয়লা, তেল,গ্যাসসম্পদ আছে। পশ্চিমা বিশ্ব, পশ্চিম ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশ রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর একান্তই নির্ভরশীল। রাশিয়া একইসঙ্গে খাদ্যে শুধু সয়ংসম্পূর্ণই নয়, পশ্চিম ইউরোপসহ অনেক দেশের ব্রেড বাস্কেটও। যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণেও রাশিয়া স্বয়ম্ভর। এহেন একটি দেশকে ইরাক,ইজিপ্ট,লিবিয়া, আফগানিস্তান ভেবে উস্কানি দিয়ে যুদ্ধে ডেকে আনা, যে কৌশলগত ভুল হয়েছে- বিলম্বে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বুঝতে পারছে এখন। 

যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেই ওদের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। যুদ্ধ পরিক্রমায় রাশিয়ার অর্থনীতি প্রকৃত প্রস্তাবে আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। ওপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ,উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলো এখন তীব্র জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করার ঝুঁকি নিবে না। একইভাবে পচিম ইউরোপের দেশগুলোর সম্মিলত সামর্থ্য নেই সরাসরি যুদ্ধ করার।  

রাশিয়ার কিন্তু অনেক ক্ষোভ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেপথ্যে ভূমিকার কারণে ভেঙে গেছে ইউনাইটেড রিপাবলিক অব রাশিয়া ( ইউএসেসার), যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কারণেই আফগানিস্তান থেকে সরে আসতে হয়েছে রাশিয়াকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনা রাশিয়ার প্রতিবেশী ইউক্রেনকে সাহস জুগিয়েছে, রাশিয়াবিরোধী ন্যাটো জোটে যোগদানের উদ্যোগে। রাশিয়া খুব পরিকল্পিত পথে এগিয়েছে শক্তি সামর্থ্যরে সমন্বয় ঘটিয়ে আক্রমণ করেছে ইউক্রেন। বিশ্বসমাজ যুদ্ধ কখনো সমর্থন করেনি। তবে ইউক্রেনকে যুদ্ধে নামিয়ে যেভাবে পশ্চিমা শক্তি ওদের অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির ভূমিকায়  এতিম করেছে, সেটিও মেনে নেয়নি। আর তাই যুদ্ধ সূচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল গ্যাস রফতানিসহ সার্বিক অবরোধ আরোপ করলেও অনেক দেশ সাড়া দেয়নি ওদের আহ্বানে।

হিসাবে কষে এগিয়েছে রাশিয়া। ওরা জানে বেশকিছু আন্তঃমহাদেশীয় গ্যাস পাইপলাইন মারফত সঞ্চালিত গ্যাসের ওপর যেভাবে পশ্চিম ইউরোপ একান্ত-নির্ভর ওদের সহজ-সুলভ বিকল্প সহসাই খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। হিসাব কষে ইরান ঘোষণা দিলো ওদের বন্ধু ছাড়া সকল দেশকে গ্যাস সরবরাহ পেতে হলে ডলারের পরিবর্তে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল পরিষদ করতে হবে। অস্বীকৃত কিছু দেশে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করার পর কারিগরি কারণ দেখিয়ে নর্ডস্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার তেল-বাণিজ্য কিন্তু সঙ্কুচিত হয়নি। বরং চীন,ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করায় এবং বিশ্ববাজারে কয়লা, তেল-গ্যাসের আকাশছোঁয়া মূল্যের কারণে রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় অনেক বেড়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ গ্যাস-তেল উত্তোলন এবং রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের সঙ্গে একমত পোষণ করেনি।

রশিয়া, ইউক্রেনে সম্মিতভাবে গম, জ্বালানি তেল সারাবিশ্বেরফতানি করে। সেখান থেকে রফতানি সীমিত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে উদ্বেগজনকভাবে। খাদ্যদ্রব্য এবং জ্বালানি উচ্চমূল্যে ক্রয় করার কারণে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশে গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো পড়েছে বিপদে। না পারছে ভারত ও চীনের মতো যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়া থেকে জ্বালানি খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে, না পারছে উচ্চমূল্যে বিশ্ববাজার থেকে ক্রয় করতে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যথাথই বলেছেন, রাশিয়াকে শাস্তি দিতে চেষ্টা করে গোটা বিশ্বকেই সংকটে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ নিজেও বিকাশমান অর্থনীতিকে প্রতিরক্ষা দিতে নানাখাতে কৃচ্ছ্রতা সাধনের পথে হাঁটছে। বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয়ে হাত পড়েছে। যুদ্ধ সহসা শেষ হলেও যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে সেটি অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকবে। একটির পর একটি ঋণ নির্ভর মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে সুদসহ ঋণ পরিশোধের দায় বাড়বে। 

একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কিছু বিচক্ষণ পদক্ষেপের কারণে সংকট সময়েও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েনি অর্থনীতি। তবে উৎবেগের সৃষ্টি করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত।  ভুল পরিকল্পনা আর অদক্ষ পরিচালনার কারণে তীব্র জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানি উত্তোলনের কিছু সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। একই সঙ্গে ব্যর্থ, দুর্নীতি পরায়ণ ব্যাক্তিদের অপসারণ করে প্রকৃত অভিজ্ঞ পেশাদারদের বিদ্যুৎ সেক্টরে সুযোগ দেয়া না হলে বাংলাদেশের সামনে মহাদুর্যোগ ঘনীভূত হবে।


শেয়ার করুন