২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০১:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন


বাম জোটের মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ
৫১ বছরেও স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২২
৫১ বছরেও স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বাম জোটের মতবিনিময় সভায় নেতৃবৃন্দ


৫১ বছরে এদেশে বহুবার সরকার বদল হলেও দেশে এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রতিনিধিত্বশীল ও অর্থবহ নির্বাচনের স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারাই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনের নামে প্রহসন সংঘটিত করেছে। মানুষের ন্যূনতম ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

এসব কথা উঠে আসে বাম জোটের মতবিনিময় সভায়। ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার-সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্দলীয় তদারকির সরকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা প্রণয়নের আলোচনা শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে। পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সুজনের সম্পাদক ডক্টর বদিউল আলম মজুমদার, ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোশতাক হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ, আনোয়ার হোসেন রেজা, আহসান হাবিব লাবলু।

লিখিত বক্তব্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ৫১ বছরে এদেশে বহুবার সরকার বদল হলেও দেশে এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রতিনিধিত্বশীল ও অর্থবহ নির্বাচনের স্থায়ী গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারাই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনের নামে প্রহসন সংঘটিত করেছে। মানুষের ন্যূনতম ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে অনিশ্চয়তা, অচলাবস্থা ও নৈরাজ্য। এ অবস্থায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সুনির্দিষ্ট কতেক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। 

তিনি আরো বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দিয়েও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন বর্তমান জাতীয় সংসদ বহাল রেখে সকল দল ও জনগণের জন্য নির্বাচনের সমান সুযোগও তৈরি হবে না। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সকল দল ও সমাজের অপরাপর অংশের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নতুন করে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ গোটা নির্বাচনী-ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের সমান সুযোগ এবং অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের নিশ্চয়তা বিধান হলো একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, অর্থবহ নির্বাচনের প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণকে এই ন্যূনতম সুযোগটি থেকেও বারবার বঞ্চিত করা হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব-ব্যবস্থা প্রবর্তন, নির্বাচন-ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের জন্য নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার, লিফলেট, জনসভাসহ প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেয়া, স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী নিজে অথবা পরিবারের কেউ ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী, ঋণখেলাপি কিংবা ঋণখেলাপির জামিনদার হলে, কালোটাকার মালিক, অর্থপাচারকারী বলে বিবেচিত হলে, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে, সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ অথবা চাকরিচ্যুতির ৫ বছর অতিক্রম না করলে, কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার বিধান করা। রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে প্রার্থী হতে হলে, তাকে কমপক্ষে ৩ বছর দলের সদস্যপদ নিয়ে এবং জনগণকে অবহিত রেখে দলের কর্মকা-ে অংশ নেয়া, প্রতিনিধি প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ‘না’ ভোট প্রবর্তন, ডিসি, ইউএনওদের নয়, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়া। নির্দলীয় প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ ও স্থানীয়দের অন্যত্র দায়িত্ব দেয়া। 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ইভিএম বিতর্কিত এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে। এছাড়া ইভিএম এ ভোট কারচুপির সুযোগ থেকেই যায়। সারাবিশ্বের অভিজ্ঞতা ও দেশের মানুষের বাস্তবতা বিবেচনা করে আমরা মনে করি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

সম্পাদক ডক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হওয়া কথা। অথচ দেশে আজো গণতন্ত্র নেই। জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারচুপি করার জন্য ইভিএম একটি সহায়ক পদ্ধতি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আপনি যদি ফলাফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তার বিপরীতে পরীক্ষা করার জন্য কোন ব্যবস্থা এ পদ্ধতিতে থাকে না, যার কারণে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারা ফলাফল প্রভাবিত করার খুবই সহজ হয়ে যায়। 

অ্যাডভোকেট  এসএম এ সবুর বলেন, সরকার যেকোনো পন্থায় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। মানুষের ভোটের অধিকার যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থকতাইতো বিফলে যাবে। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন-ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। 

ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে গেছে। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল পরে যে কথা বলে এটি বাতিল করা হোল তা আজ গ্রহণযোগ্য নয়। 

বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, আমরা বাম জোট দীর্ঘদিন ধরে এ নির্বাচন-ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি এই দাবিতে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলে দাবি আদায় করতে হবে।

শেয়ার করুন