২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫২:১৯ পূর্বাহ্ন


প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে হতাশায় আতঙ্কিত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২২
প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে হতাশায় আতঙ্কিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রায় নিষ্ক্রিয় বিরোধী মতামতের মাঝে তিন টার্মে ক্রমাগত ক্ষমতায় থাকার পরেও প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে হতাশার বাণী দেশবাসীকে আতঙ্কিত করছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফরে দীর্ঘদিন কাটিয়ে দেশে ফিরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশার বাণী শোনাতে পারছেন না। তাঁর কিছু কথা দেশবাসীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।  তিনি বলেছেন,  বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ২০২৩ সালে বাংলাদেশেও কঠিন অর্থনৈতিক মন্দা থেকে সংকট দেখা দিতে পারে। তিনি দেশবাসীকে রেড়ির তেল দিয়ে রান্না আর মোমবাতি ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন। কথাটা তিনি হয়তো সেভাবে বলেননি। সতর্কতার স্বার্থে উল্লেখ করেছেন। তবু প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে হতাশা মানেই সাধারণ মানুষে আতঙ্ক নেমে আসছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষ-বিপক্ষে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। 

২০০৯ থেকে তিন টার্মে নিরঙ্কুশ সংখ্যাধিক্য নিয়ে দেশ শাসনে আওয়ামী লীগ। অতীতে কি হয়েছে, সেগুলো অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানোর যুক্তি নেই। করোনা আর ইউক্রেন যুদ্ধের ধুয়া তুলেও মানুষকে বোঝানো যাবে না। বর্তমান জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট এবং তৎপ্রেক্ষিতে শিল্পখাতসহ অন্যান্য খাতে সঞ্চারিত সংকটের জন্য কে দায়ী? নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে দ্রব্যমূল্যের অগ্নিমূল্যের জন্যও সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। মেগা প্রজেক্টসগুলোর ধীরগতি, ক্রমবর্ধমান গগনচুম্বী খরচ বৃদ্ধির দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারের ওপর।

২০২৩ শেষদিকে অথবা ২০২৪ শুরুতে জাতীয় নির্বাচন। দেখলাম, নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধার নির্বাচন সঙ্গত কারণেই বাতিল করেছে। জনগণ জীবনযাত্রা নিয়ে সার্বিক সংকটে। সীমাহীন দুর্নীতি আর বিশেষ মহলের লুটপাটের কারণে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজি সংকটে। বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন খবর মাধ্যমে বারবার প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলোর জন্য সরকারের ভ্রান্তনীতি আর দ্বিমুখী আচরণকেই দায়ী করছে বোদ্ধামহল। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার প্রতিফলন দেখা যায়নি কোথাও। বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল যাদের, তারা নীরব থেকেছেন। সরকারি সকল মন্ত্রণালয় এমনকি খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনেও দুর্নীতি দানা বেঁধেছে বলে অভিযোগ। দুষ্টের পালন আর সিস্টের দমন এখন ‘দেশের নীতি’ বলে অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সৎ দক্ষ কর্মকর্তকে চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়েছে দুর্নীতিবাজদের রক্ষার অপপ্রয়াসে। সেটা নিয়ে অনেক দেনদরবার শীর্ষ পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ হয়নি। দুর্নীতিবাজরা যেটা বলেছে, সেটাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হলো। 

ফিরে আসি প্রসঙ্গে। তৃণমূলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার রত্তপুরনু কেন একান্তভাবে আমলানির্ভর হয়ে পড়লো? কেন নির্বাচন পদ্ধতি স্বচ্ছ করতে ওদের এতো ভয়। ২০১৪ আর ২০১৮ নির্বাচন আদৌ স্বচ্ছ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি এটা বলাই বাহুল্য। সরকার ধুরন্ধর আমলা আর ব্যবসায়ীনির্ভর হয়ে পড়ায় দেশ থেকে মেধাপাচার হয়ে গেছে। হতাশ তরুণ সমাজের বিরাট অংশ ড্রাগ অ্যালকোহোল নেশাগ্রস্ত। ভুল পরিকল্পনা, দুর্বল প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে জ্বালানি সংকট থেকে বিদ্যুৎ সংকট। ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সত্ত্বেও জ্বালানি সংকটের কারণে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারছে না বিদ্যুৎ সেক্টর। ৪-৫ ঘণ্টা পাওয়ার লোডশেডিং সংকটে ফেলেছে শিল্পখাত, বিশেষত রফতানিমুখী শিল্পখাতকে। ডলার সংকটের কারণে আর বিশ্ববাজারে জ্বালানির অগ্নিমূল্যের কারণে জ্বালানি আমদানি সীমিত হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় রফতানি খাতে মন্দা অনিবার্য। অথচ মাটির নিচে থাকা কালো সোনা কয়লা উত্তোলন হচ্ছে না সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে। গ্যাস-তেল উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক মন্দ অবধারিত। মেগাপ্রকল্পগুলো অচিরেই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ালে অবাক হবো না। আমদানি-রফতানির বেহাল অবস্থায় ২০২৫ থেকে বিপুল ঋণের সুদ পরিষদ সংকটের সৃষ্টি করবে। এখন অনেকেই শ্রীলঙ্কার মতো সংকটের কথা বলছেন। 

উপরোক্ত অবস্থায় সরকার প্রধানের কথায় হতাশার সুর সুস্পষ্ট। তাহলে কি সরকার নিয়ন্ত্রণহীন। দেশের আসন্ন সংকট মোকাবিলার স্বার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কি সরকার সুশীলসমাজের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন না? দেশ ১৭ কোটি মানুষের। কোনো মহলের স্বেচ্ছাচার, অদক্ষতা আর দুর্নীতির কারণে দেশের মহাদুর্যোগ সৃষ্টি হলে সেটি কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। 

বাংলাদেশে চীন, ভারত, রাশিয়া, কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সবার বাণিজ্য স্বার্থ আছে। কিন্তু সবাইর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মতো দক্ষ বিচক্ষণ প্রশাসন সরকারে নেই। আশাকরি সরকারপ্রধান সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সবকিছুই একবিন্দু থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি সরকার প্রধান দেশপ্রেমিকের মতো যোগ্য নেতৃত্বকে কাছে টেনে আনবেন। কেননা আগামী ২০২৩ জাতির জন্য সত্যিকার অর্থে সংকটের বছর। প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সংকট, অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলার পাশাপাশি বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছেন। যেমনটা খাদ্যনির্ভরতার ব্যাপারে। দেশের প্রতিটা স্থানে ফসল উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণের। সেগুলোকেও সাপোর্ট করতে হবে। সেভাবে কাজ করে যেতে হবে। তবে আসন্ন দুর্যোগকালীন ওই সময় যথাযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করে পার করতে পারাটাই একজন দক্ষ নেতৃত্বের গুণ। 

শেয়ার করুন