২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৬:৩৮ অপরাহ্ন


আগাম ভাবনা
সিলেট আসনে জোবাইদা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
সিলেট আসনে জোবাইদা জোবাইদা রহমান


বিএনপির রাজনীতিতে বড্ড প্রয়োজন দেখা দিয়েছে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যের সরাসরি উপস্থিতি। এর মূল কারণ দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেল/গৃহবন্দি ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে দীর্ঘদিন অবস্থান। দু’জনই আইনের দৃষ্টিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য। দেশের আইনে মামলায় জড়ানো ও শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ায় দেশীয় আইনে তাদের উপর ওই খড়গ। 

এর পরও বিএনপি বর্তমানে ক্রমশ সংগঠিত হচ্ছে, যার প্রমাণ সম্প্রতি দলটির বিভিন্ন সমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি। মাঝে কথা উঠেছিল দলের এমন পরিস্থিতি তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান আসছেন বাংলাদেশে। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও ট্যাক্সে সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ। এবং সে সংক্রান্ত দুদকের মামলায় তিনিও অনেকটাই অযোগ্য। এমতাবস্থায় একমাত্র ভরসা তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের কন্য জাইমা রহমান। বেশকিছু দিন থেকেই শোনা যাচ্ছে তিনি আসবেন, এবং দলীয় রাজনীতিতে অংশ নেবেন। 

সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে সহসাই আসার সম্ভাবনা জোবাইদা ও জাইমা রহমান। বিশেষ করে এরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন। কিন্তু কোথায় নির্বাচন করতে পারেন তারা? এ নিয়ে যে কথা শোনা যাচ্ছে সেটা সিলেট-১ আসন। জোবাইদাই বিএনপির প্রথম পছন্দ না হয় জাইমা রহমানও পেতে পারেন নমিনেশন। কিন্তু আসল তথ্যটা কী সেটা নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে না। যেহেতু এখনও নির্বাচনের এক বছরের মত সময় বাকি। বিএনপি আন্দোলন করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। নতুবা নির্বাচনেই যাবে না তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে রীতি সেটার উপরই বহাল।

এ নিয়ে এখন ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ

এর মাঝে সিলেটের ওই আসন আলোচনা হওয়া কারণও আছে। কারণ বাংলাদেশের সূচনা থেকে সিলেটের ওই আসন থেকে যে দল জিতেছে সে দলই ক্ষমতায় বসেছে। এবং শুধু সেটাই নয়, যে ওই আসন (সিলেট ১) যে পাস করেছেন তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও লাভ করেছেন। বর্তমান সরকারেরও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেনও এ আসনের বিজয়ী।  

ঐতিহ্য অনুসারে ওই কথা চিন্তা করলে সিলেট আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সেরকম প্রার্থী এ মুহূর্তে নেই। কারণ এ আসন থেকে বিএনপির সাইফুর রহমান (সাবেক অর্থমন্ত্রী), আওয়ামী লীগের হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আবুল মাল আব্দুল মুহিত বিজয়ী হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। 

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যে ক’জন মন্ত্রী বিভিন্নভাবে বিতর্কিত হয়ে নমিনেশনই না পাওয়ার সম্ভাবনা তার মধ্যে আব্দুল মোমেন অন্যতম। বেশ কিছুদিন ধরেই তার বিভিন্ন বক্তব্যে বিব্রত আওয়ামী লীগ। বিদেশেও তিনি যে সমস্ত কথা বলেছেন সেটাতে লজ্জার কারণ ছিল। ফলে তার উপর আস্থা রাখার সম্ভাবনা কম। বিএনপির আব্দুল মোক্তাদিন শক্ত প্রার্থী বটে কিন্তু জাতীয়ভাবে তার অবস্থান সেরকম নয়, বিশেষ করে এ আসনটির যে ঐতিহ্য সেটার বিবেচনাতে। ফলে এখানে বিএনপি একজন জনপ্রিয় কাউকে দেয়ার চিন্তা করছে। আর সেটার জন্য পারফেক্ট জোবাইদা রহমান। 

জোবাইদার পূর্ব পুরুষ অত্র সিলেট অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। তার বাবা মরহুম রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের জন্ম সিলেটে। সে সূত্র ধরেই জোবাইদার নাম উঠে এসেছে। তাছাড়া জোবাইদা বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত না থাকলেও তিনি যে একজন মেধাবী ও বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান সহ বিএনপির পলিটিক্যাল এনালিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এটা সবারই জানা। যিনি অদ্যাবধি আড়ালে থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন দলের জন্য। ইতিমধ্যে দলে ও দেশে তার গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মাঠে না এসে আড়ালে থেকেও ওই অর্জন জোবাইদার বিভিন্ন কর্মকান্ডেই মানুষ অনুধাবন করছে।

সিলেট-১ আসনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দেশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন, সিলেটের সাংবাদিকতার সঙ্গে অন্তত ত্রিশ বছর ধরে ওৎপ্রতভাবে জড়িত আবতাবউদ্দিনের সঙ্গে। সিলেটের এ সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, ‘প্রতিটা জাতীয় নির্বাচনে সিলেট ১ আসনের গুরুত্ব সর্বজনসমাদৃত। এটা আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে সে দিক বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রার্থী পছন্দ করে মনোনয়ন দেন।’

এবারের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে আফতাবউদ্দিন বলেন, ‘এখনো তো সেভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়নি। তাছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তো আছেনই। ফলে আওয়ামী লীগের কেউই তাকে টপকে এ পর্যন্ত প্রচারণা বা মনোনয়ন প্রত্যাশার জন্য মাঠে নামেনি।’ 

বিএনপির প্রার্থী প্রসঙ্গে আবতাবউদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু সর্বশেষ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আব্দুল মোক্তাদির তাই স্বাভাবিকভাবে তার কর্মতৎপরতা এ মুহূর্তে বেশি। সিলেটের বিএনপিতে তার প্রভাব অনেক। বর্তমানে তিনি প্রচারণাও চালাচ্ছেন ব্যাপক। তবে যেহেতু সিলেটের এ আসনকে ভিআইপি আসনও বলা হয় এবং বেশিরভাগ এলাকা শহরাঞ্চল। মানুষ শিক্ষিত ও বিদেশের সঙ্গে এদের অনেকের সম্পৃক্ততা বেশি, তাই এদের কাছে দলের চেয়ে প্রার্থীর পরিচয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। সে দিকটা বিবেচনা দুই দলই করবেন। ওই দৃষ্টিকোন থেকে এ আসনের জন্য বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকেও চাচ্ছে এ এলাকার বিএনপি সমার্থিত নেতা কর্মীরা।’ 

আবতাবউদ্দিন দেশের রাজনীতির অবস্থা তুলে ধরে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনে করছে বাংলাদেশের রীতি অনুসারে টানা তিন টার্ম ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। পরের বারও যে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে সে রীতি পূর্বে নেই। ফলে একটা পরিবর্তনের আভাস মুখে মুখে। আওয়ামী লীগ যদি না ই আসে ক্ষমতায় তাহলে তো বিএনপি। সে দৃষ্টিকোন থেকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীর মধ্যে জোবাইদাই গ্রহণযোগ্য। তিনি নমিনেশন পেলে সিলেটের মানুষ তাকে সাদরে গ্রহণ করবেন। সে ক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস আব্দুল মোক্তাদিরও তার পক্ষেই কাজ করবেন। কারণ বিএনপিতে একনিষ্ট আব্দুল মোক্তাদির বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মেনে নেবেন।’

শেয়ার করুন