২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫১:৩৪ অপরাহ্ন


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভয়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১১-২০২২
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভয়


‘বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই। বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। ভবিষ্যতেও বন্ধ হবে না।’ এ কথাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের। গত ১৩ নভেম্বর ব্যাংকটি এক সার্কুলারে এ তথ্য জানান দেয়া হয়েছে। 

সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকের আমানত তুলে নেয়ার যে খবর প্রচারিত হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক এবং সঠিক নয়। বাংলাদেশের এ কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশবাসীকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সংকট নেই। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। আশা করা যায় আগামীতেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। এখন প্রশ্ন কেন এমনটা হলো। কি কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকিংয়ের ওপর আস্থা রাখার বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছে। 

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে রিজার্ভ সংকট। রিজার্ভ চুরি। দেশের টাকাই বাইরে পাচার এমন খবর প্রকাশিত হয়ে আসছে। এ নিয়ে সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাহাস। বিভিন্ন সমালোচনামূলক পোস্ট-খবর পরিবেশনা, বিশেষ করে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেয়া বা নিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম আস্থাহীনতা জেগেছে। 

দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থপাচার হওয়া প্রসঙ্গে গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া। সেখানে হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পাঁচ হাজার জনকে শনাক্ত করার তথ্য দিয়েছেন। এসময় তিনি বলেন, ‘এতে অন্তত ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সিআইডি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করে জানতে পারে এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্ট আছে। এই ৫ হাজার এজেন্ট গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।’  

শুধু তাই নয়, গত ২০১৯ সনের ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এক সংবাদের পরিসংখ্যানে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় ৫৯০ কোটি ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। ওই সময় প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে ওইসব তথ্য প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, যে পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে, তাতে দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ওয়াশিংটন থেকে জিএফআইর এ রিপোর্ট প্রকাশ হয়।

জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থপাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা।

জিএফআইর তথ্যমতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-২০১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।’

গত ২০২০ সনের ১৯ নভেম্বর বিবিসি এক রিপোর্টে বলে, ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের যে গুঞ্জন আছে, তার কিছুটা সত্যতা তিনি পেয়েছেন। একই সঙ্গে প্রাথমিক যে তথ্য তারা পেয়েছেন তাতে তারা দেখেছেন যে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যাই বেশি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু সত্যতা পেয়েছি। মনে করেছিলাম রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেলো রাজনীতিবিদ চারজন। সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ী আছে। 

ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন কারা এসব টাকা পাচারকারী তাদের কারো নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি বলেন, ২৮ টি ঘটনার তথ্য তারা পেয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি।

এছাড়াও পিকে হালদার (আর্থিক প্রতিষ্ঠান), এসকে সুর (বাংলাদেশ ব্যাংক), সুধাংশু শেখর ভদ্র (ডাক বিভাগ) দের অর্থপাচার নিয়ে তোলপাড় হওয়ার কথা মানুষ ভুলতে পারছে না। এছাড়াও হলমার্ক, যুবক থেকে শুরু করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্যালেঙ্কারির কারণে জনমনে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ নিরাপদ তো? 

একই আস্থাহীনতায় অনেকে বিদেশ থেকেও অর্থ পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে মানুষ। এ নিয়ে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই নয়, ব্যাক্তি পর্যায়েও অনেকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছেন, পরামর্শ চাচ্ছেন তারা কী করবেন। তাছাড়া এলসি খুলতে ব্যাংকগুলোর অনীহা থেকে শুরু করে সম্প্রতি ব্যাংকিং চ্যানেলের যাবতীয় খবরগুলো মানুষ খুব মনযোগ দিয়ে নজর দিচ্ছে। তবে দেরিতে হলেও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সার্কুলার মানুষের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে অনেকে মনে করছেন।

শেয়ার করুন