২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৫৫:১১ অপরাহ্ন


জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন
ভবনের হিসাবে স্বাক্ষর করে বুঝে নিয়ে এখন কেন বিরোধিতা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
ভবনের হিসাবে স্বাক্ষর করে বুঝে নিয়ে এখন কেন বিরোধিতা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মইনুল ইসলাম


প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে জটিলাতার এখনো সমাধান হয়নি। আগামী ১১ জুন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা। সেই সাধারণ সভা নিয়ে চলছে কমিউনিটিতে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা। সভাপতি বদরুল হোসেন খান এবং সহ-সাধারণ সম্পাদকে অগঠনতান্ত্রিকভাবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে সাধারণ সভার পোস্টার বা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম নিজেও আরেকটি বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। আরেক দিকে ভবন নিয়ে বদরুল হোসেন খান তার অনুসারীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদায়ী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ উত্থাপন করেন। সেই অভিযোগের জবাব না দিয়ে বিদায়ী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জালালাবাদবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমঝোতার পথ বেছে নেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। বদরুল হোসেন খানের অনুসারীরা অগঠনতান্ত্রিকভাবে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এতোদিন প্রতিবাদ না করলেও সাধারণ সভাকে সামনে রেখে বিদায়ী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অবস্থান এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনটি গত ২ জুন সন্ধ্যায় এস্টোরিয়াস্থ জালালাবাদ ভবনের অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, বর্তমান সহ-সভাপতি শাহীন কামালী, বর্তমান কার্যকরি সদস্য হেলিম উদ্দিন, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আসাদুল গনি আসাদসহ সাবেক কর্মকর্তাবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রহমান চৌধুরী শেফাজ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা, আপনারা জানেন প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক এবং বৃহত্তর সিলেটবাসীর প্রাণের সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের ভবন ক্রয় নিয়ে সংকট চলছে। আমি মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আজকের সংবাদ সম্মেলনে আমাকে সময় দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুরা, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে আপনাদের মাধ্যমে সম্মানিত জালালাবাদবাসীর কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্যই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভবন ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু কখনো আমরা সফল হতে পারিনি। বিগত কার্যকরি পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গৃহীত রেজ্যুলেশন মোতাবেক এবং সেই সঙ্গে ট্রাস্টি বোর্ডের মতামতের ভিত্তিতে বর্তমান ভবনটি ক্রয় করতে সম্মত হই।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন একটি নন-প্রফিট সংগঠন। আপনারা সবাই জানেন নন-প্রফিট সংগঠনের নামে কোনো লোন নেওয়া যায় না।

আমাদের সবার অনুরোধে গত কার্যকরি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান কার্যকরি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম তার নামে বাড়ির লোন করতে সম্মত হন এবং আমরা ভবনটি ক্রয় করতে সক্ষম হই। আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষ পর্যায়ে আমরা বাড়িটি ক্রয় করি। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত কার্যকরি কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ক্রয়কৃত ভবনের সম্পূর্ণ নথিপত্র, হিসাব সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে বর্তমান সভাপতি বদরুল হোসেন খান স্বাক্ষর করেছেন। আমাদেরও স্বাক্ষর রয়েছে। এই ভবনটি সম্পূর্ণ নিয়ম অনুযায়ী ক্রয় করা হয়েছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা এখানে আরেকটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, জ্যাকসন হাইটসে জালালাবাদের ভবনের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজকে কার্যকরি কমিটির সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল এবং কার্যকরি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমাদের একাউন্ট থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ট্রান্সফার করি। সেই ভবন নিয়ে সমস্যা হলে তিনি তিন দিনের মাথায় ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি এক চেকে সেই অর্থ আমাদের ফেরত দেন। এ নিয়েও বিভ্রান্তির সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

সাংবাদিক বন্ধুরা, এখন সভাপতি ও বর্তমান কার্যকরি কমিটির কোনো কোনো সদস্য এই ভবন ক্রয় নিয়ে অসত্য তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে এই জটিল অবস্থার সৃষ্টি করেন। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বিদায়ী কার্যকরি কমিটির পক্ষ থেকে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সম্মানিত জালালাবাদবাসীকে সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে চাই ভবনটি সঠিক নিয়মেই ক্রয় হয়েছে। সম্মানিত জালালাবাদবাসীর কাছে আমার অনুরোধ আপনারা মিথ্যা তথ্য, বিভ্রান্তমূলক বক্তব্যে বিভ্রান্ত না হয়ে জালালাবাদবাসীর স্বপ্নের ভবনটি রক্ষা করুন, আপনাদের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করুণ এবং প্রিয় সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হাত বাড়িয়ে দিন।

পরিশেষে আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই প্রত্যাশা আমার।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই ভবনের হিসাব (ডাউন্ট পেমেন্ট, ক্লোজিং পেমেন্ট, ট্যাক্স, মর্টগেজের অর্থসহ নানাবিধ হিসাবে) বর্তমান সভাপতি বদরুল হোসেন খান বুঝে নিয়েছেন। সেই হিসাবে তিনি সাক্ষর করেছেন। এখন কেন নতুন নাটক শুরু করেছেন? তিনি যখন হিসাব সাক্ষর দেন তখন তিনি ভবনের হিসাব নিয়ে কেন প্রশ্ন উপস্থাপন করেননি। সেই কাগজও সাংবাদিকদের দেওয়া হয়। মইনুল ইসলামকে যে সবার সম্মতিতে বাড়ি ক্রয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সেই কাগজও তারা উপস্থাপন করেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, জালালাবাদবাসী যদি চায় তারা ভবন চায় না, অর্থ চায় তাহলে আমি জালালাবাদের অর্থ ফেরত দেন। গুটিকত লোকের কাছে তো আমি অর্থ ফেরত দিতে পারি না। তা ছাড়া বিগত কমিটির সাধারণ সভায় ভবন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল ফিলাডেলফিয়ার বাড়ি বিক্রি করে নিউইয়র্কে বাড়ি ক্রয় করা হবে। এখন কেন নতুন করে সেই প্রশ্ন? আগেও জালালাবাদবাসী ভবন ক্রয়ের জন্য ফান্ড রেইজিং করা হয়েছিল, সেই সময় ভবন ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। এখন সুযোগ এসেছে এবং বিশেষ এক পরিস্থিতিতে আমরা ভবন ক্রয় করেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে মইনুল ইসলাম বলেন, এই ভবনের মর্টগেজের চেয়ে ভবনের আয় বেশি। সুতরায় মর্টগেজ চালাতে সমস্যা হবার কথা নয়। এটা ভবন জালালাবাসীর বোঝা নয়, আয়ের উৎস। সেই সঙ্গে ফার্স্ট ফ্লোরে রাখা হয়েছে জালালাবাদবাসীর জন্য। এর পর আমি বলেছিলাম, যে ৪০০ লাইফ মেম্বার করে আমি ভবনকে ঋণ মুক্ত করে দেবো। তারপরেও সমস্যা কেন? আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জালালাবাদবাসীর প্রতি বিশ্বাস নেই, তাই তারা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিসে গিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে যে, সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। বলা যায় অবৈধ বললেন মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ। তাছাড়া ভবন ক্রয়ের জন্য মইনুল ইসলামকে কোন চেক দেওয়া হয়নি, চেক দেওয়া হয়েছে যে কোম্পানি করা হয় ভবন ক্রয় করার জন্য। সেই প্রতিষ্ঠানকে। আরেক প্রশ্নের জবাবে অবৈধ সাধারণ সভার সিদ্ধান্তও অবৈধ হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জালালাবাদবাসীর যে সাধারণ ষবা ডাকা হয়েছে, সেখানে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এটা কোনো সময় ছিল না। নতুন করে কেন এই বিধিনিষেধ? বন্যার অর্থ সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম এম শাহীনসহ কাকে কাকে দেওয়া হয়েছে তারা উল্লেখ করেন।

শেয়ার করুন