২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৫:৫৬:৬ অপরাহ্ন


সমবায় আইনের সংশোধনের আহবান
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১১-২০২২
সমবায় আইনের সংশোধনের আহবান


আমলাদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমবায় হবে না। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘‘খাদ্য নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র কৃষকদের সংকট ও সমবায়ের গুরুত্ব’’ শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রির্ফম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) উদ্যোগে জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির  ছিলেন   রাশেদ খান মেনন। 

এতে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সূচনা বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।  এতে তৃণমূলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বেসরকারি সংস্থা রুলফাও এর নির্বাহী প্রধান আফজাল হোসেন, স্পিড ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান শামসুল ইসলাম দিপু এবং অন্যচিত্র সংস্থার নির্বাহী প্রধান রেবেকা সুলতানা বক্তব্য রাখেন প্রমুখ। 


সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদী স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব রাশেদ খান মেনন এমপি  তার বক্তব্যে  আমলাদের কর্তৃত্ব এবং মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম রোধের ব্যবস্থা রেখে সমবায় আইনের সংশোধনের আহবান জানান।

তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ , খাদ্য সংকট  যা কিছু  বলি না তা কেন রোধে  সমবায় আন্দোলন জরুরি।  তিনি আরো বলেন, সরকার দাবী করছেন তারা কৃষিকে প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে এসেছেন কিন্ত ক্ষুদ্র কৃষকের সংগঠন না থাকার ফলে এর সুফল তারা ভোগ করতে পারছে না। এমন কি কৃষিঋণে তাদের অভিগম্যতা নেই।

প্রবন্ধ উপস্থাপক শামসুল হুদা এতে ক্ষুদে কৃষকদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে ৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন। তা হলো- ১. সমবায় নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন অনুযায়ী সমবায় সমিতি আইনের আমূল পরিবর্তন আনতে হবে; ২. বঙ্গবন্ধুর সমবায় সম্পর্কিত মূল নিদের্শনাগুলির অনুসরণে এবং বিদ্যমান বাস্তবতার নিরিখে সমবায় আইনের ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে বিজ্ঞ সমবায় গবেষক, তুণমূলের নারী-পুরুষ সমবায়ী এবং সমবায় গঠনে উদ্যোগী জনগোষ্ঠীর মতামত, অভিজ্ঞতা, চাহিদা এবং অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিতে তাদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলোচনা করতে হবে; ৩. সমবায়কে উৎসাহিত ও জোরদার করতে ক্ষুদ্র কৃষক সমবায়, নারী কৃষক সমবায়, আদিবাসী কৃষক সমবায় মৎসজীবি সমবায় প্রভৃতি ধরণের সমবায়ের সুনির্দিষ্ট চাহিদা ও অগ্রাধিকার অনুযায়ি তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ আয়োজন ও নিয়মিত তদারকির জন্য একটি স্বাধীন আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ‘জাতীয় সমবায় সম্প্রসারণ সংস্থা’ গঠন করতে হবে; ৪. বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী সমবায়ের মাধ্যমে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রকৃত কৃষক, জেলে নারী, আদিবাসী ও বনবাসী সমবায়ের মাধ্যমে যাতে যৌথ উদ্যোগ নিতে পারে তা সংশোধিত আইনে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সর্বাধিক বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা ধারা রাখতে হবে যেন প্রভাবশালী, সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজরা সেই সুবিধায় অনুপ্রবেশ করতে না।  


অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনের উপর আলোকপাত করে বলেন, বর্তমান সমবায় আইনের অমুল পরিবর্তন দরকার। যারা আইন বাস্তবায়ন করেন তাদের নিয়ন্ত্রণকারীর বদলে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি খাসজমি-জলা ও জমি সংক্রান্ত মামলা ও জটিলতার বিষয় তুলে ধরে আরো বলেন যে, ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো না হলে যতই আইন করা হোক তাতে জনগণ সুফল পাবে না। এসময় তিনি সংবিধানের ধারা-৭ (১) ও ১৩ উল্লেখ করে বলেন জনগণই এই প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার মালিক এবং সম্পদের মালিকানায় সমবায়ী মালিকানাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।  তাই সংবিধানের আলোকে সমবায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. সীমা জামান বাংলাদেশে সমবায় আইন বিদ্যমান থাকলেও তা সমবায় বান্ধব নয়।  সমবায় করার যোগ্যতা নির্ণয়ের কোন গাউডলাই না থাকায় সমবায় আইন সম্পূর্ণ আমলানির্ভর হচ্ছে। সুতারং এই আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কৃষি সমবায়ীদের ঋণ বিষয় আলোকপাত করে বলেন, ক্ষুদে কৃষকরা জামানত হিসেবে জমি দিতে না পারায় তারা ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকছে। এই ক্ষেত্রে কৃষক সমবায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু সমবায়ভিত্তিক কৃষি কাঠামো গড়ে তোলার জন্য আইনের পরির্বতের বিকল্প নেই। তার জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।


শেয়ার করুন