১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৫:১৪:৪৫ অপরাহ্ন


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
কথার কথকতা


একটি বাসগৃহ তিন ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করার মত একটা জটিল প্রক্রিয়ার কথা শুনলাম এক বন্ধুর কাছে। আমার এই বন্ধু বললো, ঘটনাটি তার নিজস্ব নয়, তার এলাকার তথা তার গ্রামের কাহিনী। সে ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছে। আমি তাকে বললাম, তুই একজন থেকে শুনেছিস, তোর কাছ থেকে আমি শুনবো আর শোনার পর লিখিত আকারে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে আমি জানাবো- তার মানে তথ্যটি চার জন মানুষ অতিক্রম করবে। তথ্য একজন থেকে আরেকজনে গমন প্রক্রিয়াতেই বিকৃতি সংঘটিত হয়ে যায়, এ ক্ষেত্রে কি হবে আমি জানি না। তোর কাছ থেকে আমি তথ্যটি পাওয়া পর্যন্তই তিনটি স্তর পার হয়ে যাবে- মূল ঘটনা, সেটা যে দেখেছে তার বর্ণনা তোর প্রতি আর তুই কর্তৃক আমার কাছে সঞ্চালণ। যা-ই হোক, তুই বলে যা, যখন হলফ করেই বলছিস যে, এটি অর্থপূর্ণ।

একটি গ্রামে একটি বড় বাড়ি এবং একটি বাসগৃহ ভাগ হবে। বাটোয়ারার বিস্তারীত বর্ণনায় যাবো না, শুধু গৃহ বন্টনে যাবো।

প্রয়াতঃ পিতার তিন ছেলের মধ্যে একটি ছয় কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড বিল্ডিং ভাগ হবে। বন্টন প্রক্রিয়ায় ঘটনাক্রমে প্রধান ভূমিকা পালন করছে ছোট ছেলে। এটি জানার পর অনেক কিছু চিন্তা করে বড় ছেলে ছোট ছেলেকে একটি ড্রইং এঁকে কি করে গৃহটি তিন ভাগে ভাগ করা যায় তা দেখিয়ে একটা চিঠি পাঠালো।

বড় ছেলেটি উচ্চ শিক্ষিত। তার এক বন্ধু বললো, ’দোস্ত, তোরতো দেশের বাড়িতে যাওয়া হয় কম, তো তুই ঘরের অংশ দিয়ে কি করবি?’ সে উত্তর দিলো, ’দেখ, আমার ব্যাপারে মানুষের উচ্চ ধারণা বজায় রাখতে গিয়ে আমার অর্থনীতির বড়ই করুণ অবস্থা। তাই আমার পক্ষে আরেকটি ঘর তোলা সম্ভব হবে না। আমার পরামর্শ অনুসারে ভাগ হলে কয়েকটি সুফল পাওয়া যাবে। প্রথমতঃ আমি সপরিবারে মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে থাকতে পারবো। দ্বিতীয়তঃ ভাইদের ছেলেমেয়েরা আমার উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সান্নিধ্য পেলে তারা নিজেদেরকে এগিয়ে নেয়ার মনোবল পাবে, শিক্ষিত হয়ে উঠবে। তৃতীয়তঃ আমরা আলাদা হয়ে যাওয়াটা বাইরে থেকে বুঝা যাবে না। তুই জানিস যে, এই ধরনের ভাগাভাগিকে মানুষ হ্যাঁ সূচক দৃষ্টিতে দেখে না।

কিন্তু বাড়ি ভাগের সর্বশেষ পর্বে দেখা গেলো, ছোট ভাই বাসগৃহটি তিন ভাগ করতে রাজি নয়। সে এক চালাকি করলো। ঘর দুই ভাগ করলো এবং বড় ভাইকে বললো, আমি আর আপনি এই ঘরটি নেবো। মেঝো মিয়াকে আমার আলাদা একটা ঘর বানিয়ে দেবো। বড় ছেলে এই ভাষ্যের মধ্যে চালাকির স্পষ্ট লক্ষণ দেখতে পেলো। তাই সে বললো, তোমরা দু’জনেই ঘরটি নিয়ে যাও।

এরপর দশ বছর চলে গেলেও বড় ছেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশের বাড়িতে আর যায়নি।

এরই মধ্যে আরো কিছু কুটিল ভূমি রাজনীতির ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে ছোট ছেলেটির সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিষয়ক সম্ভাবনা স্তিমিত প্রায়। মেঝো ছেলে প্রয়াতঃ হয়েছে। তার ছেলের ভবিষ্যত বিষয়ক সম্ভাবনা নিম্নবিত্তে চিহ্নিত হয়ে গেছে। অবশ্য এ অবস্থাকে অনেকে নি¤œ মধ্যবিত্ত বলে থাকে।

ঐ এলাকার এক বিজ্ঞ লোক মন্তব্য করেছেন, ’শিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি চালাক হয়ে পড়ে যখন অশিক্ষিত মানুষ তখন পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। এটা ঘটবার কারণ হলো নিজের সম্পর্কে ভুল ধারণা।’

বিশাল বাড়িটি ভাগাভাগি, বিয়ের মতো সম্পর্ক স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয়েও এই স্বঘোষিত চালাক মানুষদের অনেক পরিণতির কাহিনী আছে।

আমি আমার এই বন্ধুটিকে বললাম, সে সব কাহিনী আরেকদিন বলিস ভাই। আজ অনেক কাহিনী লিখতে পারবো না।

আমরা অবশ্য আমাদের সমাজের এ রকম অনেক জটিল কাহিনী শুনেছি, যেখানে পরিবারের সৎ ও শিক্ষিত ছেলেটি আত্মসম্মান বজায় রাখতে গিয়ে একাকি সংগ্রাম করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যায় আর পরিবারের অন্য সদস্যরা ওকে শিক্ষিত বলদ এবং নিজেদেরকে দারুণ বুদ্ধিমান মনে করে আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবন সাগরে ভরাডুবি বরণ করে। এ রকম অনেক কাহিনীতে আমাদের সমাজ ভরপুর। এদের জন্য আমাদের কষ্ট হয়। অথচ এই দুই শ্রেণীর মাথা যদি সম্মিলিতভাবে ঐচিত্যবোধের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতো তাহলে সবারই হতো সীমাহীন অগ্রগতি।

আমরা জানি একটা পরিবার পড়ে গেলে ওদের বংশধর একশো বছরেও আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। আমার বন্ধুটিকে প্রশ্ন করলাম, আমরা কি ওদের কোন উপকারে আসতে পারি? বন্ধু বললো, সরি দোস্ত, ইট ইজ ঠু লেইট! আমি প্রশ্ন করলাম, তাহলে কি হবে? সে বললো, বিধাতা ওদের মঙ্গল করুন, অবশ্য যদি ওরা নিজেদের মঙ্গল চায়। বিভ্রান্ত মানুষ হুঁশে আসা অনেক কঠিন ব্যাপার কারন সে যে ঠিক নাই এটাইতো সে বুঝতে পারে না। হে অন্তর্যামী, আমাদেরকে অজ্ঞতা থেকে রক্ষা করুন।


পার্কচেস্টার জামে মসজিদ মামলার পরবর্তী শুনানী ২২ ফেব্রুয়ারি 

দেশ রিপোর্ট

পার্কচেস্টার মসজিদের মামলায় মাননীয় ব্রঙ্কস সুপ্রিম কোর্ট বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করেছে। গত ৫ ডিসেম্বর ছিল এই মামলার প্রথম শুনানীর তারিখ এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। উল্লেখ্য গত ২০শে নভেম্বর পার্কচেস্টার মসজিদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ এনে শহীদ- কাজী প্যানেল মামলা দায়ের করে।

জানা যায়, মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আপত্তিকৃত ১০৪ জন আজীবন সদস্যের ভোটারলিস্ট অন্তর্ভুক্তিতে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করে তাদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দেয়ার এবং মসজিদের ক্ষমতা কার্যকরি কমিটির স্থলে উপদেষ্টা কমিটির নিকট ক্ষমতা অর্পণের আবেদন জানান। বিবাদী মসজিদ পক্ষের আইনজীবী তাতে আপত্তি তুলে জানান যথাযথ নিয়ম মেনেই ১০৪ জন আজীবন সদস্যকে ভোটার লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম করা হয়নি এবং কার্যকরি কমিটি কোন অনিয়ম করেনি যে তাদের ক্ষমতা হ্রাস করে উপদেষ্টা কমিটির নিকট অর্পন করতে হবে। মামনীয় আদালত উভয় আইনজীবীর বক্তব্য শুনে কোন রায় না দিয়ে উভয় পক্ষের নিকট আরো কাগজপত্র দাবি করেন। আদালত কার্যকরি কমিটির নিকট ক্ষমতা রেখেই আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করেন।

পার্কচেস্টার মসজিদের কার্যকরি কমিটির নির্বাচন গত ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী নমিনেশন দাখিলের শেষ দিনে জয়নাল-মুর্শেদ ও শহিদ-সাব্বির নামে দুটি পূর্ণ প্যানেল ও নমিনেশন দাখিল করে। কিন্তু পরবর্তীতে ভোটার লিস্টে ১০৪ জন নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলে সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুস শহিদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী সাব্বির আহমদ নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে মাননীয় আদালতে এই নির্বাচন স্থগিত করে। ফলে আটকে যায় নির্বাচনের সকল আয়োজন।

শেয়ার করুন