২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৭:৩৩ অপরাহ্ন


শহীদ দিবসের আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন
‘ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘বার বার হত্যা’ করেছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০২-২০২৩
‘ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘বার বার হত্যা’ করেছে’


ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘বার বার হত্যা’ করেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সোমবার বিকালে শহীদ দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম এজন্য যে, বাংলা ভাষা অর্জন করেছি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি কিসের জন্য বা কি তার চেতনা ছিলো? গণতন্ত্র। আজকে যখন ৫১ বছর পরে আলোচনা করতে দাঁড়াই তখন সবাই বলি দেশে আজ গণতন্ত্র নাই, কেউ বলবে না গণতন্ত্র আছে। শুধু আমরা নই, আজকে আন্তর্জাতিক বিশ্বও বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই। দুঃখজনক হলেও সত্যিই যে, ভাষা আন্দোলনের চেতনা বলেন আর সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেন, গণতন্ত্র এদেশে বারবার হত্যা হয়েছে। প্রথম হত্যা হয়েছে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে এই আওয়ামী লীগ যখন স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় ছিলো তখন তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে একদলীয় বাকশাল করে। আজকে আবার এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, ১৪ বছর গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।”


খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ আজকে মানুষের ভোটের অধিকার নেই্। শুধু সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও জনগন ভোট দিতে পারে না। ভোট আগেই নির্ধারিত হয়ে যায়। গণতন্ত্র আজকে এভাবে হত্যা হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়ে। ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিলো, ভাষা কিসের জন্য? একজনের স্বপ্ন, একজনের যে চিন্তাধারা সেটাকে মুক্ত স্বাধীনভাবে যদি আমি প্রকাশ করতে চাই সেটাই হবে আমার ভাষার ব্যবহার। আমি যা চিন্তা করি সেটা স্বাধীনভাবে বলতে না পারি তাহলে এই ভাষার কি তাতপয্র্ আছে? ভাষা আন্দোলনের সাথে সেটাও ছিলো যে, আমি আমার মাতৃভাষায় যেভাবে চিন্তা করব, যেভাবে আমি স্বাধীনভাবে মুক্ত মনে চিন্তা করব সেই স্বাধীন কথাটি বলার অধিকার আমার থাকবে। আজকে সেই কথা বলার অধিকারও নাই।”


‘মুক্তচিন্তার গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ’


আওয়ামী লীগ মুক্ত চিন্তা রুখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বারংবার হস্তক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগও করেন খন্দকার মোশাররফ।


তিনি বলেন, ‘‘ প্রথম ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন নিউজ পেপারস সংশোধনী অ্যাক্ট করে সারা দেশে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে ৪টি সংবাদপত্র রেখেছিলো। হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়েছিলো। দ্বিতীয়বার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ১৯৯৯ সালে টাইমস-দৈনিক বাংলা ট্রাষ্ট্রের চারটি পত্রিকা বন্ধ করে দিলো। তারপরে দেখলাম, ২০১০ সালে ২৭ এপ্রিল চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিলো। ২০১৩ সালে দৈনিক আমার দেশ বন্ধ, ২০১৩ সালে দিগন্ত টেলিভিশন ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে পত্রিকা দৈনিক দিনকালের প্রকাশক, গতকাল তারা(সরকার)  এই পত্রিকাটি বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তার মাধ্যমকে এই সরকার যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই বন্ধ করে দিয়েছে।”


এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার হটানোর ১০ দফা দাবির চলমান আন্দোলনকে সফল করতে জনগনকে শপথ নেওয়ার আহবান জানান খন্দকার মোশাররফ।


তিনি বলেন,‘‘ আজকে ভাষা দিবসে আমাদের শপথ হোক- যত শিগগিরই আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথাকে ধরে যে, ফয়সাল হবে রাজপথে। রাজপথে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে যত শিগগিরই সম্ভব বিদায় করতে পারবো বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল সেই কামনা করছি।”


‘এরা হাইব্রিড শোষক’


খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ আপনারা দেখেছেন, বেশি কিছু দিন আগে আমেরিকায় একটি গণতান্ত্রিক কনভেনশন হয়েছিলো, আরেকটি গণতান্ত্রিক সম্মেলন হচ্ছে। দুইবারই বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পাইনি। কেননা তারা পরিস্কার বলেছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাই। যারা শাসন করছে তারা হাইব্রিড শোষক। এজন্য কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এদেশে প্রাণ দেয়নি, ভাষা শহীদরা প্রাণ দেয়নি। প্রাণ দিয়েছিলো, যুদ্ধ করেছিলো এদেশে স্বাধীনতাভাবে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য।”


রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।


এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্বে করার কথা ছিলো দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামগীরের। কিন্তু তিনি হঠাত অসুস্থ হওয়ায় গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিতসাধীন রয়েছেন।


দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই, কবি মাহবুব হাসান ও আনম ফজলুল হক সৈকত বক্তব্য রাখেন।




শেয়ার করুন