হাবিব ওয়াহিদ। পরিচিতিটা এসেছিল ভিন্ন ধারার সংগীতায়োজনের জন্য। তবে এখন তিনি সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে বেশি জনপ্রিয়। ইদানিং ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে নিয়মিত গান প্রকাশ করছেন। পাশাপাশি স্টেজ শোও করছেন। নতুন গান, বর্তমান ব্যস্ততা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: নতুন গান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন দিকটা প্রাধান্য দেন?
হাবিব ওয়াহিদ: গান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্রোতাদের টেস্ট লেবেলটা আমার কাছে সব সময় অগ্রাধিকার পায়। সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়। যে কোনো নতুন গানের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আমার বিবেচনায় থাকে। একটি গান যদি অনেক যত্ন করে করা হয়, সেট যদি স্রোতাপর্যন্ত না পৌঁছায় তবে ভালো কাজের আগ্রহ থাকে না। তাই স্রোতাদের রুচির প্রতি খেয়াল রাখাটা জরুরি।
প্রশ্ন: নতুন গান ‘মন বোঝে না’তে কি এই বিষয়গুলো বিবেচনায় ছিল?
হাবিব ওয়াহিদ: অবশ্যই ছিল। তবে গানের মুডটি অন্য গান থেকে আলাদা। দেবশ্রী অন্তরার কণ্ঠ আমার কাছে বেশ আলাদা মনে হয়েছে। বলিউডে ইদানিং জনপ্রিয়তা পাওয়া শিল্পা রাওয়ের ভয়েসের ধরন যেমন একটু ডিফরেন্ট, দেবশ্রীর কণ্ঠটা ঠিক তেমন।
প্রশ্ন: নতুনদের নিয়ে আপনি বেশি কাজ করেন এর কারণ কি?
হাবিব ওয়াহিদ: নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আবার গানগুলো যে শুধু নতুনদের সুযোগ দেওয়ার জন্য করছি, ব্যাপারটি সে রকমও নয়। প্রতিটি মানুষের কণ্ঠে নিজস্বতা থাকে। একজন সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে সব সময় এই জিনিসগুলো খোঁজার চেষ্টা করি। ভিন্ন ধরনের কণ্ঠ আমাকে ভিন্ন ধরনের গান বানাতে সাহায্য করে। একটা কণ্ঠ নিয়ে যদি নিয়মিত কাজ করি তাহলে ঘুরেফিরে এক ধরনের গান তৈরি হবে। এ কারণেই নতুন কণ্ঠ খুঁজি। তাই নতুনদের সঙ্গে আমার কাজের সংখ্যা বেশি।
প্রশ্ন: ইদানিং আপনাকে ফোক ঘরানার গানে কম দেখা যায় কেন?
হাবিব ওয়াহিদ: একেবারেই যে ফোক গান করছি না, ব্যাপারটি তেমন নয়। দুই মাস আগে ‘জোনাক জ্বলে’ শিরোনামের একটি গান করেছি। এতে আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন ন্যান্সি। ইউটিউবে গানটির টিজার ছাড়ার পর থেকে শ্রোতাদের থেকে অনেক সাড়া পাচ্ছি।
প্রশ্ন: কবে আসবে সে গান?
হাবিব ওয়াহিদ: প্রথমে চিন্তা করেছিলাম অডিও আকারে প্রকাশ করার। তাই সে সময়ে টিজার ছাড়া হয়েছিল। পরে পরিকল্পনা করা হয়, শুধু অডিও নয়, ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হবে। এ কারণেই একটু দেরি হচ্ছে।
প্রশ্ন: সিনেমার গানেও আপনাকে কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?
হাবিব ওয়াহিদ: এখন সিনেমা তো আর খুব বেশি হয় না। যখন একটি ভালো কাজের জন্য আমাকে প্রেফার করা হয়, তখন আমার পক্ষ থেকে ইতিবাচক রেসপন্স থাকে। সর্বশেষ ‘গলুই’ সিনেমার দুটি গান করেছিলাম। এরপর আসলে সে রকম কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবে দুই-একটি গানের কথা চলছে। সেগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভালো সিনেমায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা সব সময় আমার আছে। এখন দারুণ কিছু সিনেমা তৈরি হচ্ছে। ব্যবসায়িকভাবে সফল হচ্ছে। সিনেমার গানগুলোও মানুষ গ্রহণ করেছে। সেই জায়গা থেকে সিনেমার গান নিয়ে নতুন করে উৎসাহ পাচ্ছি।
প্রশ্ন: শিল্পীরা নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকেই গান প্রকাশ করছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
হাবিব ওয়াহিদ: এটা কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক দিক। সময় ও টেকনোলজির কারণে এখন একজন শিল্পী নিজেই পারে নতুন গান তৈরি করে প্রকাশ করতে। এটা অনেক বড় অ্যাডভানটেজ। কিন্তু এখনো আমাদের গানগুলো ভিডিওর ওপর নির্ভরশীল। ভারতে যেমন বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে অডিও গান শুনছে। আমাদের এখানে এমনটা নয়। অ্যাপে শুধু গান শোনার কালচারটা এখনো তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে গান এখনো ভিডিওকেন্দ্রিক। মানুষ এখনো গানের সঙ্গে ভিডিও দেখতে চায়। তবে একটি ভালো মিউজিক ভিডিও তৈরি করা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
প্রশ্ন: এখন অনেক কনটেন্ট। কিন্তু ভালো কনটেন্টের সংখ্যা কি বাড়ছে?
হাবিব ওয়াহিদ: টেকনোলজি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, এখন যে কেউ চাইলে যেকোনো কিছু করতে পারে। সবার কাছ থেকে শুধু ভালোটাই বেরিয়ে আসবে, এমনটা প্রত্যাশা করা লজিক্যাল না। কারণ সবার হাতেই একই জিনিসের অ্যাকসেস আছে। ব্যাপারটাকে এভাবে চিন্তা করতে হবে, যেটা মানুষের কাছে ভালো লাগবে, তারাই সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: নিজেরও ইউটিউব চ্যানেল থাকায় গানের রয়্যালটির ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় কি না?
হাবিব ওয়াহিদ: প্রথম দিকে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সেটা এখন নেই। আর সামাজিকমাধ্যম থেকে রয়্যালটির বিষয়টি নির্ভর করে ভিউয়ের ওপর। যত বেশি ভিউ তত বেশি উপার্জন। আগেই বলেছি, এখনো আমাদের এখানে ভিডিওর ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু। তাই ভিডিওর ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাজেটের একটি বিষয় থাকে। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে। তবে এখন যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা বিষয়টি জানেন।