২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন


বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলমিষ্ট ও প্রবীণ ভাষাসৈনিক
আব্দুল গাফফার চৌধুরী আর বেঁচে নেই
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
আব্দুল গাফফার চৌধুরী আর বেঁচে নেই


বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলমিষ্ট ও প্রবীণ ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী আর বেঁচে নেই। আজ সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন)। বরিশালের এ কৃতি সন্তানের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি বার্ধক্যকালীন নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। খবর তার পরিবার ও লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বরাত দিয়ে বাসস। 

গাফফার চৌধুরীর ছেলে বিশিষ্ট সাংবাদিক অনুপম চৌধুরীর বরাত দিয়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র বাসসকে আরো জানায়, যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ মিশন চৌধুরীর পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। তার দাফন ও জানাজা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে।

আব্দুল গাফফার চৌধুরী তার কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পরি?’ রচনার জন্য ব্যাপকভাবে সুপরিচিত।

বিবিসি বাংলা সার্ভিসের শ্রোতাদের জরিপে গানটি তৃতীয় সেরা বাংলা গান হিসেবে বিবেচিত হয়।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত কারণে জনপ্রিয় এই সাংবাদিক ও কলামিস্ট বাংলাদেশর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। 

ব্রিটিশ শাসিত ভারতের জমিদার এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনকারী হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরীর ছেলে গাফফার ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন এবং ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানেই তিনি স্থায়ী হন। 

তিনি প্রায়ই তার জন্মভূমিতে আসতেন,জাতীয় প্রেসক্লাবে তার প্রিয়ভাজনদের সঙ্গে সময় কাটাতেন এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতে নিয়মিত কলাম লিখতেন। আর এভাবেই তিনি তার প্রিয় বাংলাদেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে গেছেন। 

গাফফার দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ঘটনার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ বজায় রাখতেন।

ব্রিটেনে যাওয়ার আগে গাফফার ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জয় বাংলা, যুগান্তর ও ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন। 

যুক্তরাজ্যে, গাফফার ‘নতুন দিন’ নামে একটি সংবাদপত্র চালু করেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা জীবনে ‘ডানপিটে শওকত’, ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোরে’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ’ ও ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ এর মতো ৩৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নামের একটি ফিল্মও প্রযোজনা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বেও বাংলা সাহিত্যের ভূবনে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি পদক, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পদক, সংহতি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের পর গাফফার চৌধুরী স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান এবং ২২ বছর বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেননি।

তার স্ত্রী সেলিমা চৌধুরী লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। এই দম্পতির চার মেয়ে ও এক ছেলে। 

রাষ্ট্রপতির শোক 

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' কালজয়ী গানের স্রষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। 

এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারালো। 

তিনি বলেন, তাঁর একুশের অমর সেই গান বাঙালি জাতিকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তির আন্দোলনে অসীম সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছিল।

বিশিষ্ট কলামিস্ট গাফফার চৌধুরীর অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, লেখনীর মাধ্যমে তিনি আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করে গেছেন।

রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘তাঁর মৃত্যু দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। মরহুম আবদুল গাফফার চৌধুরী তাঁর কালজয়ী গান ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন।’ 

তিনি মরহুম আবদুল গাফফার চৌধুরীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শোক 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতাপদক প্রাপ্ত লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন । 

আজ এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী তাঁর মেধা-কর্ম ও লেখনিতে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন এবং বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি জড়িত। অনেক পরামর্শ পেয়েছি। একজন বিজ্ঞ ও পুরোধা ব্যক্তিত্বকে হারালাম যিনি তাঁর লেখা ও গবেষণায় আমাদের বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’ পত্রিকায় তার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। বিদেশে অবস্থানকালে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে দেশি-বিদেশী গনমাধ্যমে লেখালেখি করেছেন।  

সরকার প্রধান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। 

তথ্যসুত্র: বাসস  





শেয়ার করুন