১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৩:৫৯:১২ পূর্বাহ্ন


চ্যাম্পিয়নদের ধবল ধোলাই
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৩
চ্যাম্পিয়নদের ধবল ধোলাই


সাদা ক্রিকেটের দুই সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পর পর তিনটি ম্যাচ অনায়েসে জয় করে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো হোয়াইট ওয়াশ গৌরব অর্জন করেছে। পরিপূর্ণ এখন বাংলাদেশি ক্রিকেট পূজারীদের প্রতীক্ষার পেয়ালা। টি ২০ ক্রিকেটের বয়স ১৮,বাংলাদেশ খেলছে ১৭ বছর। ক্রিকেট মোড়ল  ইংল্যান্ড ২০২২ নিয়ে দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে। এই সংস্করণে দুর্বল বলে বিবেচিত বাংলাদেশের সবে ঘুরে দাঁড়ানো। পরিবর্তিত বাংলাদেশের এই জয় দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে থাকবে।


চট্টগ্রাম আর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আগের দুটি ম্যাচ অনায়েসে জিতে নিয়ে সিরিজ জয় হয়েছিল। শেরেবাংলায় তৃতীয় ম্যাচটিও ১৬ রানে জিতে অর্জন হলো কাঙ্খিত সিরিজ হোয়াইট ওয়াশ যার আদুরে নাম বাংলাওয়াশ।  টস জয় করে ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ ১৫৮/২ করে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলো করো না হয় মোরো মিশনের ইংল্যান্ডের সামনে। উইকেট উপযোগী কার্যকর বোলিং , তুখোড় ফিল্ডিং আর সাকিবের নিখুঁত সমন্বিত হয়ে ১৬ রানে ম্যাচ, সিরিজ জয়ের জোয়ারে আসলো নিরংকুশ জয়।  ভালো শুরু করে একপর্যায়ে ১৩.১ ওভারে ১০০/১ পৌঁছেও লড়াই ছাড়া হার না মানা বাংলাদেশ ওদের ১৪২/৬ বেশি যেতে দেয় নি। 

ওডিআই আর টি ২০ দুই সংস্করণে ৩ টি ম্যাচের দুটি সিরিজ খেলতে এসেছিলো ইংল্যান্ড। দেশের মাটিতে ওডিআই সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও কেউ কস্মিনকালেও ভাবে নি টি ২০ সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। সিরিজ জয় আর বাংলাওয়াশ অর্জন তাই  যেন মেঘ না চাইতেই জল। নবীন আর স্বল্প অভিজ্ঞ বাংলাদেশ দলটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাই যেতে পারে। পরিমিত পরিচর্যা করা হলে দলটির সাফল্য চূড়া থেকে চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। কার কথা বলবো দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল শান্ত, মরণঘাতি পেস বোলিং করা তাসকিন, ব্যাটিং ,বোলিং ফিল্ডিং তুখোড় মেহেদী মিরাজ, অভিষেকে নিজেকে চেনানো তৌহিদ হৃদয়, নিজেকে ফিরে পাওয়া মুস্তাফিজ, তরুণ মাথার বিজ্ঞ বোলার হাসান মাহমুদ না বিচক্ষণ অধিনায়ক সাকিব।  ভাগ্য সহায়তা করেছে সন্দেহ নেই. তিনটি ম্যাচে টস জয় বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। ভাগ্য বীরদের সহায়তা করে.

কাল টসে জয়ী হয়ে সাবলীল ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ। ইচ্ছে ছিল কিছুটা অনিশ্চিত ফর্মে থাকা লিটন যেন এই ম্যাচে নিজেকে খুঁজে পায়।  কোটি ভক্ত অনুরাগীর প্রার্থনা মনজুর  হয়েছে। ৫৭ বলে ৭৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছে লিটন। সঙ্গে এই ফরমেট দিয়ে দলে ফিরে আসা রনি তালুকদার (২৪) নিজস্ব ঢঙে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে প্রথম উইকেটে ৫৫ রানের শুভ সূচনা এনে দিয়েছে। অধুনা খুনে ফর্মে থাকা নাজমুল শান্ত ,লিটনের সঙ্গী হয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৮৪ রান যুক্ত করে দলকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করায়। শেষ ৫ ওভারে উইকেটে রান করা দুরূহ হয়ে পড়ায় বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৬/২। শান্ত অপরাজিত থাকে ৪৭ রান করে। কেউ কেউ মনে করেছিল সংগ্রহ যেন ২০-২৫ রান অপর্যাপ্ত। 

ইংল্যান্ড দলের জয়ের পিছনে ধাবমান হওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না. দুই সেরা ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান আর জোস বাটলার তাসকিন, মুস্তাফিজ ,হাসান মাহমুদদের সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৯৫ রান জুড়ে দিয়েছিলো। এমনি সময় নিজেকে ফিরে পাওয়া মুস্তাফিজের একটি ওভারে দারুন ভাবে খেলায় ফিরলো বাংলাদেশ। পর পর দুই বলে ফায়ার গেলো উইকেটে স্থিতু দুই ব্যাটসম্যান মালান (৫৩) আর বাটলার (৪০) . মালানের ক্যাচ উইকেটের পেছনে থেকে অসামান্য দক্ষতায় লুফে নেয় লিটন। পরের বলেই সরাসরি বল ছুড়ে বাটলারকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে রান আউট করে মেরাজ। ছন্দ হারায় ইংল্যান্ড। রক্তের স্বাদ পাওয়া বাংলা টাইগার্সদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করে ইংরেজ সিংহ। নির্ধারিত ওভার শেষে রান দাঁড়ায় ১৪২/৬।  ব্যাবধান ১৬ রানের। হাসান মাহমুদের ১৬ ওভারটি সোনায় মুড়িয়ে রাখার মতো. প্রথম দুটি বলে বাউন্ডারি হবার পর দারুন চার চারটি বল করে তরুণ বলার জানান দিলো দীর্ঘ রেসের ঘোড়া পেয়েছে বাংলাদেশ।


বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নিজেদের অঙ্গনে বাগে পেয়ে ভালো খেলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দলটির মাঝে জয়ের ক্ষুধা দৃশ্যমান। বোলিং ,ফিল্ডিং অনেক উন্নত হয়েছে। ব্যাটিং নিয়ে ছোটোখাটো উন্নয়ন করতে হবে। দলটিকে নিয়ে কাজের ফিরিস্তি নিঃসন্দেহে নতুন ভাবে ফিরে আসা হেড কোচ হাতুরাসিংহে প্রস্তুত করেছে। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় সাকিবের বুদ্ধিদীপ্ত দল পরিচালনা। গতানুগতিক ধারার বাইরে যেয়ে অনেক লাগসই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভাগ্য সহায়তা করেছে। জয়গুলো আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়ে আরো জয়ের সোপান হবে। বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে টীম টাইগার্স।


শেয়ার করুন