২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩১:২০ পূর্বাহ্ন


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আজ ৮৭তম জন্মবার্ষিকী
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০১-২০২৩
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আজ ৮৭তম জন্মবার্ষিকী


মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় নিভৃত পল্লী বাগবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দূরদর্শীসম্পন্ন জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক, অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসম সাহসী ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক হিসেবে জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৮১ সালে কতিপয় বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তাঁর মাতা-পিতা তখন আদর করে কমল নামে ডাকতেন। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতায়। তাঁর বাবা মনসুর রহমান তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে শহীদ জিয়া ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে শিশু জিয়া করাচি চলে যান। সেখানে কেটেছে তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবন। করাচির স্কুল-কলেজে অধ্যয়নকালে শহীদ জিয়া একজন ভাল হকি খেলোয়াড় ছিলেন। স্কুলে তিনি ইংরেজিতে ভাল বক্তৃতা দিতে পারতেন। কৈশোরে নির্মেদ দেহের অধিকারী এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।

করাচির ডি জে কলেজে পড়ার সময় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে শহীদ জিয়া যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে শহীদ জিয়া কমান্ডো ট্রেনিং লাভ করেন। ১৯৬৭ সালের এপ্রিল মাসে জিয়াউর রহমান ঢাকার অদূরে জয়দেবপুর সাব ক্যান্টনমেন্টে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাচে লিয়নে সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানি যান। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। তাঁর ঘাঁটি ছিল ষোলশহর বাজারে। এখান থেকেই শহীদ জিয়া দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৭১ সালে জাতির সবচেয়ে বড় বিপদের দিনে মুক্তিপাগল দিশেহারা জনগণের কাছে একটি ‘অবিস্মরণীয় কন্ঠস্বর’ তাদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেছিল। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে ভেসে এসেছিল একটি কন্ঠস্বর ‘আমি মেজর জিয়া বলছি।’ সেই কন্ঠ সেদিন অযুত প্রাণে নতুন সঞ্জীবনী মন্ত্র এনে দিয়েছিল। মেজর জিয়ার কন্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি...বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’। তাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে।

জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মেজর জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এ দায়িত্ব অর্পণ করার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বৃহত্তর এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাসে কোনো একটি দিনও তিনি তাঁর স্ত্রী বা পুত্রের কথা চিন্তা করেননি, দেশ আর দেশের মানুষই ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক চিন্তায়। যুদ্ধ শেষে জিয়াউর রহমান পুনরায় সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন এবং ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফের পদে বহাল হন।

আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তাঁর দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তাঁর সততা নিয়ে তার চরম শত্রুও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমাদ ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর আধিপত্যবাদীদের এদেশীয় চরেরা ষড়যন্ত্র করে জিয়াউর রহমানকে বন্দি করে। কিন্তু ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে সিপাহি-জনতা তাঁকে মুক্ত করেন। সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা।

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির চরম অধঃপতনের সময় মহান দেশপ্রেমের আলোকবর্তিকা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম মুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাকব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি বিদেশে শ্রমবাজার তৈরি করে জনশক্তিতে পরিণত করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ইপিজেড-এর শুভ সূচনা করেন এবং তা গণচীনের আগেই। তাঁর কর্মসূচির মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিহিত রয়েছে যা হলো উৎপাদনমুখী রাজনীতি, বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, ন্যায়ভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা। এই বিষয়গুলো ছিল তাঁর রাজীনতির মূল লক্ষ্য।

তাঁর অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তাঁর সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথপ্রদর্শক। তাঁর সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। পার্থিব লোভ-লালসা ও ক্ষমতার মোহ তাঁকে ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত করতে পারেনি। অন্যায় ও অসত্যের কাছে তিনি কোনোদিন মাথানত করেননি। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎ গুণাবলী দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়া কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন।

মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এই শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, যা আজ ভূলুন্ঠিত।

তথ্যসূত্র ও সৌজন্য : বিএনপি মিডিয়া সেল।  


শেয়ার করুন