২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ১১:৪০:৩০ পূর্বাহ্ন


চায়ের কাপে ঝড় তুলেছেন মাহি!
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
চায়ের কাপে ঝড় তুলেছেন মাহি! মাহিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ


২৯ ডিসেম্বর ২০২২। জাতীয় সংসদে চাপাই নবাবগঞ্জ-২, বিএনপির পদত্যাগ করা আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন ফরম ক্রয় করা চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে আটক, কারাগারে প্রেরণ ও জামিন দিয়ে দেওয়া নিয়ে দেশের সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। জনমনে প্রশ্ন কেন এ চিত্রনায়িকাকে আটক করা হলো। আদালতে তুলে কারাগারে নেয়া হলো। আবার কিছুক্ষণের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলো। মিডিয়ারওবা এ নিয়ে এতো হাঙ্গামা কীসের? দেশে বড় বড় ইস্যু পেছনে ফেলে একজন চিত্রনায়িকা ও কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন মাহিয়া মাহি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এ নেত্রীকে আটক হওয়ার নাটককে সবাই কেন গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করছিলেন। আসলে এ নিয়ে নানা মুখে নানা কথা। 

তবে এমন ঘটনার মূলে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন মাহিয়া মাহি। ওমরাকালীন মাহি ও তার স্বামী রাকিবের নিজস্ব গাড়ির শোরুমের (গাজীপুর চৌরাস্তা) ওপর হামলা হয়। সেটাকে কেন্দ্র করে মাহি সৌদি আরব থেকে যে ফেসবুকে লাইভ করেন সেটা পছন্দ হয়নি পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের। এর পর মাহি হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পরই তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরে। এর পর আদালতে তুললে সেখান থেকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু মাহি যে দাপট দেখিয়েছেন সেটাও নজিরবিহীন। কারণ কারাগারে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার জামিনের আবেদন এবং জামিন মঞ্জুর করে সন্ধ্যায় মুক্তি। এর পর প্রেস কনফারেন্সও করেন মাহি। সেখানে সরাসরি অভিযোগ তোলেন গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারের ওপর। 

পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে যাওয়ার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তির পর মাহিয়া মাহি বলেছেন, তিনি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তার নাম মোল্যা নজরুল ইসলাম (গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার), গোটা পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়।

ঐ দিন (শনিবার) রাতে শহরের তেলিপাড়া এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন এই চিত্রনায়িকা। এ সময় তাঁর আইনজীবীরাও তার সঙ্গেই ছিলেন।

মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেই দেশে একজন পুলিশ কমিশনার একটা অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারবেন না। আমি সব সাংবাদিক ভাইয়ের মাধ্যমে জানাতে চাই, আমি কিন্তু পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে কথা বলিনি। আমার অনেক পুলিশের সঙ্গে পরিচয় আছে। অনেক ফোর্সের প্রধানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা অনেক নাইস। আমি শুধু একজন ব্যক্তির কথা বলছি বারবার, যিনি মোল্যা নজরুল। আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাইনি।’

লাইভে যাওয়া প্রসঙ্গ 

সৌদি আরবে থাকাকালীন সময়ে লাইভে যাওয়ার প্রসঙ্গে এই চিত্রনায়িকা বলেন, ‘লাইভে মানুষ কখন যায়, যখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। আমাদের শোরুমটা দখল হয়ে যাচ্ছিল। ফেসবুকে যে ভিডিওটা আপলোড করেছি, তাতে আছে, লাঠি পাইপ নিয়ে আমাদের শোরুমে আসছে দখলের উদ্দেশ্যে।’

সংবাদ সম্মেলনে মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমি লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি। একজন পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করে। তাই আমার লাইভে বলাতে পুরো বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছে হয়তো। আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমি যে দেড় কোটি টাকার কথা বলেছি, সেটা অবশ্যই তদন্ত হবে। আমি ন্যায়বিচারের জন্য সবার কাছে যাবো।’

পুলিশ কমিশনার ব্রিফিংয়ে যা বলেছিলেন 

মাহিকে কারাগারে পাঠানোর পর শনিবার দুপুরে মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহিয়া তার ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও আমাকে জড়িয়ে ব্যক্তিগত বিষোদগার করেছেন, যা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে খুন, ধর্ষণ ও অস্ত্র আইনের মতো গুরুতর অভিযোগে তিনটি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। বিষয়গুলো খতিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

যে কারণে মাহির প্রতি অনুকম্পা!  

এমনিতেই মাহি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচিত। বিশেষ করে ২০২১-এর ডিসেম্বরে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে মাহি সম্পর্কে অনেকে জানেন। এর পর আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়ে ফরম ক্রয়, এর পর মাহিয়া মাহিকে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটিতে রাখার জন্য ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা এবং তাকে দলের হয়ে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ। 

এর পরও মাহিয়া মাহি অন্তঃসত্ত্বা। পুলিশ তাকে আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ড চায়। কিন্তু আদালত সেটা মঞ্জুর করেনি। আদালত এ সময় তার অন্তঃসত্ত্বা শারীরিক অবস্থা অনুধাবন করেই কারাগারে পাঠান রিমান্ড মঞ্জুর করেননি। ততক্ষণে বাংলাদেশ চলচিত্র সমিতি থেকে কেউ কেউ এ ব্যাপারে সোচ্চার হন। সব দিক বিবেচনা করেই মাহি দ্রুততম সময়ে আবার জামিনও লাভ করেন এবং দুটি ডিজিটাল মামলায়ই তিনি জামিন লাভ করেন।   

তবে এটাও ঠিক, দুই দুটি ডিজিটাল মামলায় অভিযুক্ত এবং আটক হয়ে কারাগারে যেয়ে আবার মুহূর্তেই  জামিন লাভ এটা বিরল ঘটনা। কারণ তার প্রতিপক্ষ যখন পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, পুলিশের একজন কমিশনারের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে যেয়ে কথা বলেছেন। ফলে একদিনের মধ্যে এতো কিছু গোটাদিনই গেছে যেন মাহিময়। গোটা মিডিয়া তোলপাড় এমন ঘটনায়। বিষয়টি নিয়ে এখনো চায়ের কাপে ঝড়! 

শেয়ার করুন