২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪৭:৫৯ অপরাহ্ন


জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় ছয় শতাধিক মানুষের মধ্যে শাহ ফাউন্ডেশনের রমজানসামগ্রী বিতরণ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় ছয় শতাধিক মানুষের মধ্যে শাহ ফাউন্ডেশনের রমজানসামগ্রী বিতরণ জ্যাকসন হাইটসে শাহ ফাউন্ডেশনের রমজানসামগ্রী বিতরণ


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবসেবামূলক প্রতিষ্ঠান শাহ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনের কাজ শুধু নিউইয়র্কভিত্তিক নয়, সেখানেই মানবতা বিপর্যস্ত, সেখানেই শাহ ফাউন্ডেশন মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ এবং ভারতে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে শাহ ফাউন্ডেশন। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে শাহ ফাউন্ডেশন, মহামারি করোনার সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে শাহ ফাউন্ডেশন, দেশে এবং প্রবাসে শীতার্ত মানুষের পাশে উষ্ণতা নিয়ে হাজির হয়েছে শাহ ফাউন্ডেশন। শাহ ফাউন্ডেশনের স্লোগান ছিল ‘শেয়ার ইউর লাভ ইউথ আস’। এই স্লোগানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকা-ের যোগসূত্র রয়েছে। প্রবাসে অনেকেরই সামর্থ্য আছে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, কিন্তু তাদের মানসিকতা নেই। মানুষ সেবার মানসিকতা যদি শাহ ফাউন্ডেশনের মতো সবার থাকতো, তাহলে এই সমাজ অনেক সুন্দর হতো।

প্রতি বছরের মতো এবারও শাহ ফাউন্ডেশন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস এবং জ্যামাইকায় রমজানসামগ্রী (খাদ্য) বিতরণ করেছে। জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন রেস্টুরেন্টের সামনে রমজানের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয় গত ১৮ মার্চ এবং জ্যামাইকায় বিতরণ করা হয় ১৯ মার্চ বিকালে ফাতেমা গ্রোসারির সামনে। শাহ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর মইনুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং আরেক ডিরেক্টর ফাহাদ সোলায়মানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্যাকসন হাইটস এলাকার অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটেলিনা ক্রুজ এবং জেসিকা রামোশ গঞ্জালেস। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবাং প্রেসিডেন্ট শাহ জে. চৌধুরী, ডিরেক্টর এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এ কে এম ফজলুল হক, কো-ফাউন্ডার হুসনে আরা চৌধুরী, কো-ফাউন্ডার সাদিয়া জে চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, জেবিবিএ’র পরিচালক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটু চৌধুরী, জেবিবিএ’র কর্মকর্তা শাহ চিশতি, আড়ংয়ের মালিক মোহাম্মদ হুমায়ুন, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, মেজর (অব.) জালাল, শোটাইম মিউজিকের প্রেসিডেন্ট আলমগীর খান আলম, সাংবাদিক আহমেদ হোসেন দীপু, সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ আজিজুল, জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর নিজামুল হক, সভাপতি শাকিল মিয়া, সোলায়মান পাটোয়ারি প্রমুখ।

অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটেলিনা ক্রুজ শাহ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এর আগে শাহ ফাউন্ডেশন মানবতার সেবায় অনেক কাজ করেছি। আমার অফিস থেকেও শাহ ফাউন্ডশনের কম্বল বিতরণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ধর্ম। মানুষের সেবা করা এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তিনি বলেন, আমি সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে আছি এবং থাকবো। কমিউনিটিতে শাহ ফাউন্ডেশনের মতো আরো প্রতিষ্ঠান দরকার।

অ্যাসেম্বলিওম্যান জেসিকা রামোশ গঞ্জালেস বলেন, শাহ ফাউন্ডেশন ভালো কাজ করছে। তিনি বলেন, রমজান হচ্ছে আত্মশুদ্ধির মাস, পবিত্র মাস। এই মাসে মানুষ সিয়াম সাধন করে। রোজার মধ্যে অনেকেই দরিদ্রতার কারণে নিজেদের পছন্দের জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারেন না, সেই কাজটি শাহ ফাউন্ডেশন করে দিচ্ছে। আশা করি আগামীতেও তাদের এই সুন্দর কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।

শাহ জে চৌধুরী বলেন, এই অনুদান আমাদের পরিবারের অনুদান। বিশেষ করে আমার বড় মেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের কো-ফাউন্ডার এবং সিইও ফৌজিয়া জে চৌধুরী এই দুটি অনুষ্ঠানের পুরো অনুদান দিয়েছে। তা ছাড়া হক অ্যান্ড সন্স ক্রয়কৃত মূল্যে আমাদের এসব পণ্য সরবরাহ করেছে। তারা কোনো লাভ করেনি। সেই হিসেবে বলা যায়, হক সন্সও এর অংশীদার। তিনি বলেন, এটি আমাদের তৃতীয় অনুষ্ঠান। এর আগের দুই বছরও রমজানের সময় আমরা খাদ্যসামগ্রী দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, এটি কোনো সহায়তা নয়, এটি আমাদের ভালোবাসা। এভাবেই মানুষকে ভালোবেসে যেতে চাই।

খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, মসুরের ডাল, খেজুর, কালা ছানা, তেল, মুড়ি, সেমাই ও রাঁধুনীর মসলা। জানা গেছে, প্রতিটি বক্সের মূল্যমান ছিল ৫০ ডলার। জ্যাকসন হাইটসে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ বিকাল সাড়ে ৫টায় হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকেই লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। লোকজনের বৃদ্ধির কারণে উপস্থিত অতিরিক্ত চাল-ডাল ক্রয় করা হয়। মোট কথা, যারাই লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রত্যেকের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

গত ১৯ মার্চ বিকালে জ্যামাইকার ফাতেমা গ্রোসারির সামনে শাহ ফাউন্ডেশন রমজানের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। শাহ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর এ কে এম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জে মোল্লা সানির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সেলম্যান জিম জিনারো, কাউন্সেলওম্যান নাতাশা উইলিয়াম, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং মূলধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট শাহ জে চৌধুরী, কো ফাউন্ডার হুসনে আরা চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর মঈনুজ্জামান চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিলাল চৌধুরী, রেজাউল করিম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম সনি, এনায়েত উল্যাহ সেন্টু, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট এ এফ মিসবাউজ্জামান, ব্যবসায়ী এবিএম ওসমান গনি, আজহার আহমেদ, রীমি ভূইয়া প্রমুখ।

কাউন্সেলম্যান জিম জিনারো শাহ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। রমজান এবং ধর্মের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো অসহায় মানুষের সেবা করা। সেই মহৎ কাজটি করে যাচ্ছে শাহ ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন, আমি এই এলাকায় বাংলাদেশিদের বন্ধু। আমি সব সময় বাংলাদেশিদের পাশে আছি এবং আগামীতেও থাকবো।

কাউন্সেলওম্যান নাতাশা উইলিয়াম বলেন, শাহ ফাউন্ডেশনের এই সুন্দর অনুষ্ঠানে আমি আসতে পেরে আনন্দিত। কারণ ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে পারা এবং মানুষ সাহায্য করার মধ্যে বিশেষত্ব আছে। আর সেই কাজটি করে যাচ্ছে শাহ ফাউন্ডেশন। তিনি আগামীতে শাহ ফাউন্ডেশনের সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, শাহ ফাউন্ডেশ শাহ জে চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করলেও এর সঙ্গে আমরাও জড়িত। তিনি বলেন, শাহ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মানুষের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন। সে জন্য শাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শাহ জে চৌধুরী এবং তার পরিবারকে ধন্যবাদ।

দুই দিনের খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রায় ছয় শতাধিক অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। যারা খাদ্যসামগ্রী পেয়েছেন তাদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং শাহ ফাউন্ডেশনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

শেয়ার করুন