২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:২০:৩৬ পূর্বাহ্ন


মে দিবসে শ্রমিক দলের সভায় মির্জা ফখরুল
‘আবার একতরফা নির্বাচনের পায়তারা’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৩
‘আবার একতরফা নির্বাচনের পায়তারা’


সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমজীবীসহ জনগনকে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার বিকালে মে দিবসের এক শ্রমিক সমাবেশে দেশের শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই ডাক দেন।


তিনি বলেন, ‘‘ আজকে সবচেয়ে কষ্টে আছে আমাদের শ্রমজীবী মানুষ, আজকে সবচেয়ে কষ্টে আছে আমাদের খেটে খাওয়া মানুষ। তারা দুইবেলা দু‘মুঠো খেতে পায় না। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে, শ্রমিকের স্বার্থে, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে, কৃষকের স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

 আমাদের জনগনকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে(সরকার) পরাজিত করতে হবে। আজকে আমাদের শ্রমিক শ্লোগান দিয়েছে- মে দিবসের অঙ্গীকার রুখতে হবে স্বৈরাচার। কারণ গণতন্ত্র যদি প্রতিষ্ঠা না হয়, স্বৈরাচার দূর করা না যায় তাহলে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না, তাদের অধিকার আদায় করা যাবে না।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার অবৈধ সরকার, এই সরকার জনগনের নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকার শুধু শ্রমিক নয়, কৃষক নয়, আজকে সমগ্র দেশের মানুষ সবচেয়ে বড় বিপদের সম্মুখিন হয়েছে। একটা দানব, একটা মনোস্টার তারা আমাদের দেশের সবকিছুকে তচনচ করে দিচ্ছে, সব প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দিচ্ছে, গণতন্ত্রকে নষ্ট করে দিচ্ছে, আমাদের সমস্ত ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দিচ্ছে।  আমরা দেশের মানুষের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে ১০ দফা দিয়েছি। এর প্রধান শর্ত হচ্ছে- এই গণতন্ত্র বিরোধী সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগনের সরকার, শ্রমিকদের সরকার, কৃষকদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘‘ এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই সিদ্ধান্ত হবে যে, আগামী দিনে বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে কি থাকবে না, আমাদের মানুষ মুক্ত হবে কি হবে না। তাই এবারকার লড়াই আমাদের স্বাধীনতার লড়াই, এবারকার লড়াই আমাদের মুক্তির লড়াই, এবারকার লড়াই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসার লড়াই, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবার লড়াই আর শ্রমিক ভাইদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই যে, এই সরকার যারা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত নয় তাদেরকে পরাজিত করে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নতুন করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”




খালেদার অসুস্থতা: মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটা নিয়েও তারা(ক্ষমতাসীনরা)ৃ কত বড় অমানবিক যে, তাদের একজন মন্ত্রী বলছে এটা নাকী রাজনীতি করছি আমরা।  ধিক্কার দেই তাদেরকে। যারা একজন অসুস্থ নেত্রীকে নিয়ে এই ধরনের কথা বলতে পারে।”

তিনি বলেন, ‘‘ দেশনেত্রীকে আপনারা(সরকার) চিকিতসার সুযোগ দিচ্ছেন, বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখে দিয়েছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছেন দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর ধরে, দেশে তাকে আসতে দিচ্ছেন না। আমাদের ৬‘শ নেতা-কর্মীকে গুম করে দিয়েছেন, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছেন, ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করছেন। আবার হুমকি দেন যে, অগ্নি সন্ত্রাস করতে দেয়া হবে না। অগ্নি সন্ত্রাস তো করেন আপনারাৃ হোটেল শেরাটনের কাছে বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা ও পল্টনে মানুষের পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশের ভুলে যায়নি।”

কারাগারে আটকে সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

মে দিবসে সমাবেশে ব্যাপক মানুষের সমাগমের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে এই সমাবেশ প্রমাণ করছে যে, বাংলাদেশ এখন জনগনের বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এখন মুক্তির বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। আসুন, আজ পহেলা মে থেকে শ্রমিক দলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন সংগ্রাম শুরু হলো, এই নতুন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করব এবং জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করে নতুন সরকার গঠন করব-এই হোক আজকে আমাদের শপথ।”



‘আবার একতরফা নির্বাচনের পায়তারা’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার গণতন্ত্রবিরোধী সরকার, এই সরকার গণবিরোধী সরকার। আজকে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে, আজকে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, ভয় দেখিয়ে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। আদালতকে তারা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করার চেষ্টা করেছে। দেখেছেনৃপুলিশের আইজি সাহেব তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পূর্বে কোনো রকমের গোলযোগ বরদাশত করা হবে না। গোলযোগ কোথায় দেখছেন? গোলযোগ তো সৃষ্টি করছেন আপনারা। আজকে খুলনায় শ্রমিক দলের শান্তিপূর্ণ র‌্যালির উপরে হামলা করে সেটাকে পন্ড করে দিয়েছেন এবং সেখান থেকে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফাতার করেছেন, আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার সেই পুরনো কায়দায় তারা আরেকটা নির্বাচন করতে চায়। আবার সেই ভোটাররা যেন ভোট দিতে না পারে, আবার ভোট চুরি করে যেন ক্ষমতায় আসতে পারে এবং আবার তারা যেন ক্ষমতা দখল করতে পারে সেজন্য এখন থেকেই তারা হুমকি দিয়ে জনগনকে ভয় দেখাতে চায়, দমন করতে চায়।”

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মানুষের বাক স্বাধীনতাকে বন্ধ করে রাখার বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের নিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে।

কর্মক্ষেত্রে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস স্মরণে সারাবিশ্বের মতো সোমবার বাংলাদেশেও এই ঐতিহাসিক মে দিবস পালিত হচ্ছে।

ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলো থেকে হাজার হাজার শ্রমিক মাথায় লাল ফিতা বেঁধে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলসহকারে এই সমা্বেেশ যোগ দেয়। কাকরাইল নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরার মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে তিল পরিমান ঠাই ছিলো না।

সমাবেশের পর বিএনপি মহাসচিবম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেন। র‌্যালিটি মৌচাকে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও শ্রমিক দল সারাদেশে জেলায় জেলায় শ্রমিক সমাবেশ ও র‌্যালী করেছে।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল ম্ঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি হাসান খান, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, সুমন ভুঁইয়া, কাজী শাহ আলম রাজা, বদরুল আলম, কামরুন জামান প্র্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহীম, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ।

এই সমাবেশে বিএনপি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়াম, শাহ আবু জাফর, খায়রুল কবির খোকন ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, মীর সরাফত আলী সপুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন


শেয়ার করুন