২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:০০:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা
৮ মাসে ২০ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২২
৮ মাসে ২০ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে ওয়াশিংটনে একটি বাস থেকে নামছে অবৈধ অভিবাসীরা


যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘মানবিক সংকট’ দেখা দেয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর সিটি মেয়র ম্যুরিয়েল বাউসার ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন। বেআইনি পথে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং অ্যারিজোনা স্টেটে ঢুকে পড়া হাজার হাজার অভিবাসীকে বাসযোগে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়ে দেয়ায় এই সংকট ক্রমেই ঘনিভ‚ত হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে এবং আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাইডেন প্রশাসনের কাছে গত জুলাইতে ন্যাশনাল গার্ড এবং অর্থ সহায়তা চেয়েছিলেন মেয়র বাউসার। ইতিবাচক সাড়া পাওয়া দূরের কথা হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে সেই আবেদন নাকচ করা হয়েছে। 

এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ সেপ্টেম্বর সিটি মেয়র বাউসার বাইডেন প্রশাসনের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেক্সাস ও অ্যারিজোনার রিপাবলিকান গভর্নররা প্রতিদিন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীর চাপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বাইডেন প্রশাসনের নমনীয়তার সুযোগে মিছিল করে লোকজন ঢুকছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ অবস্থায় ডেমোক্রেটদের শায়েস্তার অভিপ্রায়ে ডেমোক্রেট শাসিত ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বাস ভরে বেআইনিভাবে ঢুকে পড়া বিদেশিদের পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নিউইয়র্কের সিটি মেয়র এরিক এডামস এই পরিস্থিতি সামলাতে হোয়াইট হাউসের সহায়তা চেয়েছেন। এখন পর্যন্ত তা পাননি মেয়র এডামস। নিজের সাধ্য অনুযায়ী সেসব অভিভবাসীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছেন এডামস। কিন্তু সাধ্যে আর কুলাচ্ছে না মেয়র বাউসার প্রশাসনের। সেজন্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘জরুরি অবস্থা’ (পাবলিক ইমার্জেন্সি) জারি করলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে অবৈধ অভিবাসীদের জন্যে ফেডারেল সহায়তা (ফুড স্ট্যাম্প, চিকিৎসাসেবা ইতাদি) স্থগিত করা হয়েছিল। ৮ সেপ্টেম্বর বাইডেন প্রশাসন সেই স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নেয়ার দিনই ডিসি মেয়র এই ঘোষণা দিলেন। বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর জন্য খাদ্য এবং আবাসন ব্যবস্থা করা তার সিটির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। মেয়র বলেন, কয়েক সপ্তাহে বাস ভরে ৯ হাজার ৪০০ বিদেশি এসেছেন ডিসিতে। তাৎক্ষণিকভাবে ১০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান চেয়েছিলেন মেয়র বাউসার। বাইডেন প্রশাসন নাকচ করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাইডেনের আমলে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজারের অধিক এবং গত ৮ মাসে ২০ লক্ষাধিক মানুষ মেক্সিকো হয়ে বেআইনিভাবে টেক্সাস ও আরিজোনায় ঢুকে পড়েছে। এদেরকে প্রতিহত করতে সীমাহীন নীরবতা অবলম্বন করছে হোয়াইট হাউস- এমন অভিযোগ ওই দুই স্টেট গভর্নরের। তারা লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন। এর জবাব দিতেই ডেমোক্রেট শাসিত সিটিতে বাস ভরে কিছু অবৈধ অভিবাসীকে পাঠানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর কারণে ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্তে সিল মেরে দিয়েছিল। গত এপ্রিলে বাইডেন প্রশাসন সে নির্দেশ উঠিয়ে নিয়েছে। ট্রাম্প আমলে আরেকটি বিধি জারি করা হয়েছিল যে, অবৈধ অভিবাসীরা ফেডারেল সহায়তা নিলে গ্রিনকার্ড পাবে না। সেই নির্দেশটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেজান্দ্রো মেওরকাস ৮ সেপ্টেম্বর এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীগণের সাথে মানবিক আচরণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে ট্রাম্প আমলের অমানবিক পদক্ষেপকে রহিত করার বিকল্প ছিল না। বৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীগণের সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থেও এই ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছিল।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আন-ডকুমেন্টেড ইমিগ্র্যান্টদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। অ্যাসাইলাম অফিস থেকে যাদের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে তাদের বিষয় পুনর্বিবেচনার জন্য ইমিগ্রেশন জজদের কাছে পাঠানো হয় এবং ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে প্রায় ছয় লাখ অ্যাসাইলাম কেস বিবেচনাধীন রয়েছে। লোকবলের ঘাটতির কারণে অ্যাসাইলাম অফিস ও ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে অনিষ্পন্ন অ্যাসাইলাম কেস ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আট-দশ বছর যাবৎ আটকে থাকা কেস অসংখ্য। ২০১৪ বা ২০১৫ সালে অ্যাসাইলাম আবেদন করেছেন এমন বহু অ্যাসাইলাম প্রার্থীর আজ পর্যন্ত ইন্টারভিউ হয়নি। এ ধরনের আবেদনকারীদের একটি বড় অংশ পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের ইমিগ্রেশন আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে তারা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েও যেতে পারছেন না। এ ধরনের আবেদনকারীর মধ্যে ১৫০টি দেশের অ্যাসাইলাম প্রার্থী রয়েছেন বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ইমিগ্রেশন আদালতের দলিলের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ঘুরে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন যে, অভিবাসীদের চাপে তারা হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে স্থানীয় হোটেল ভাড়া করে অভিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পোর্টল্যান্ড সিটির কর্মকর্তারা বলেছেন যে তাদের পক্ষে অভিবাসীদের আশ্রয়ের নিরাপত্তা প্রদান করা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাদের জরুরি আবাসন সামর্থ্য চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমিগ্রেশন ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উত্তপ্ত বিতর্কিত ইস্যু।

শেয়ার করুন