২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৫২:৪৩ পূর্বাহ্ন


ভিপি নুরের সরে যাওয়া সন্দেহের তীর সরকারের দিকেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
ভিপি নুরের সরে যাওয়া সন্দেহের তীর সরকারের দিকেই ভিপি নূর ও সাইফুল হক


সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের জোট থেকে বেরিয়ে গেছে রেজা কিবরিয়া-নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ। এনিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য সমালোচনা বাজারে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বিএনপিসহ অনেকে মনে করে এর পেছনে আছে সরকারের হাত। আছে বড়ো ধরনের লেনদেন, আশ্বাস। যদিও এতো গুঞ্জনের মাঝেও জোর দাবি করে তবে যুগপৎ আন্দোলনে তারা এককভাবে সংযুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। তবে একিইভাবে গণঅধিকার পরিষদ নেতারা তাদের দলকে নিয়ে আরো সাংগঠনিক কাজই করবেন বলেও জানান। 

গত বছরের ৮ আগস্ট ৭টি দল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়। এই দলগুলো হচ্ছে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকীর গণসংহতি আন্দোলন, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রেজা কিবরিয়ার বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, হাসনাত কাইয়ুমের রাষ্ট্র্র সংস্কার আন্দোলন।

গত ৬ মে শনিবার সন্ধ্যায় পুরানা পল্টনে দলের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সংগঠনটির সদস্য সচিব ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আজকে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে নূর আরো বলেন, ‘বেরিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যে, এই চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের প্রতি মানুষের একটা ব্যাপক প্রত্যাশা আছে যে, আমরা যেভাবে ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছি এবারও সেরকম একটা ভূমিকা রাখি। এখন গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্য থেকে চাইলেও তো আমাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। সেই কারণে আমরা মনে করেছি যে, আমরা আলাদা থাকলে সকলের সাথে সমন্বয় করে একটা ভূমিকা নিতে, কর্মসূচি নিতে আমাদের জন্য সহজ হবে। সেটা এই মুহূর্তের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য ভালো হবে।” এছাড়াও গণতন্ত্রের মঞ্চের শরিকদের সাথে কাজ জায়গায় ‘অমিল’ কিছু জায়গায় ‘মনোমালিন্য’ নেতা-কর্মীদের ‘অসন্তুষ্টি’র জায়গা তৈরি হয়েছিলো বলেও জানান দলটির সদস্য সচিব।

অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের প্যাডে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ না থেকে গণঅধিকার পরিষদের নিজস্ব উদ্যোগে চলমান যুগপত আন্দোলনে থাকা সকল দলের সাথে রাজপথে সমন্বিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা অনুপস্থিত ছিলেন। বিএনপির সাথে সর্বশেষ গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকেও গণঅধিকার পরিষদের কোনো নেতা ছিলেন না।


আমরা হতাশ নই : সাইফুল হক

এদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে নূরের সরে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলছেন, আমরা হতাশ নই। রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে করছে এটাই হবার ছিল। মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেই তা অনেকটা বোঝা যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হকের কাছে দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধির বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ছিল।

দেশ: গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণঅধিকার পরিষদের সরে যাওয়ার পিছনে সরকারের কোনো ইশারা আছে কিনা?  কি মনে হয় আপনার? 

সাইফুল হক: এই ব্যাপারে আমার কাছে নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। তবে বাইরে একটা ধারণা ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, সরকার বা সরকারের কোন  না কোন অংশের সাথে ওদের যোগাযোগ বা সম্পর্ক রয়েছে। 

দেশ: গণঅধিকার পরিষদের এমন সিদ্ধান্তে আপনাদের লক্ষ্য পূরণ একধরনের হোচট খেলোন কি-না?

সাইফুল হক: আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে সুনির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছাড়া  গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে ওদের বেরিয়ে যাওয়া আন্দলনের জন্য ভালো খবর নয়। কিছুটা হোচট তো খেতেই হয়। তবে এসব ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। আন্দোলনে  দোদুল্যমান, আপোষকামী ও সুবিধাবাদি শক্তিও থাকে। আমার বিশ্বাস যেটুকু ক্ষতি হয়েছে তা আমরা ভালভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারব।

দেশ: গণঅধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতার ব্যাপারে আগেও অনেক সন্দেহ অবিশ্বাস ছিলো কিন্তু তারপরেও কি করে জোটে ভিড়লো? 

সাইফুল হক: হ্যাঁ, ওদেরকে নিয়ে নানা সন্দেহ অবিশ্বাস ছিল সত্য; কিন্তু আমাদের আস্থা ছিল যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে  এসব আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। 

দেশ: গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণ অধিকার পরিষদের সরে যাওয়াতে কি হতাশ আপনারা?

সাইফুল হক: আমরা হতাশ নই। রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে করছে এটাই হবার ছিল। মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেই তা অনেকটা বোঝা যাচ্ছে।

শেয়ার করুন