২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:২৮:৪৬ পূর্বাহ্ন


১৫ লাখ ‘ডাকা’ নির্ভরশীলদের ওপর আপিল কোর্টের কষাঘাত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২২
১৫ লাখ ‘ডাকা’ নির্ভরশীলদের ওপর আপিল কোর্টের কষাঘাত


গত সপ্তাহে ৫ম সার্কিট কোর্ট ড্রিমারদের ‘ডাকা’ প্রোগ্রামের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। শিশুকালে মা-বাবার সাথে এদেশে এসে যারা এখানে লেখাপড়া শিখে বসবাস করে আসছে, তাদের ওবামা প্রশাসন সিটিজেনশিপ পাওয়ার পথ রচনা করে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্বাহী আদেশকে অবশেষে গত সপ্তাহে ৫ম সার্কিট কোর্টে শেষবারের মতো নির্বাহী কর্তৃত্বের লঙ্ঘন বলে রায় দিয়েছে। এখন যদি কংগ্রেসে ড্রিমারদের এদেশে বসবাস করার জন্য সিটিজেনশিপ লাভের আইন করে তা কোডিফিকেশনের ব্যবস্থা না করে দেয়, তাহলে তাদের সিটিজেনশিপ দেয়া যাবে না। 

গত বুধবার এই ড্রিমারদের সিটিজেনশিপ বন্ধ করে ৫ম সার্কিট কোর্টের রায়ের পর ইমিগ্রেশন অ্যাকটিভিস্টরা সিনেটকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু সিনেটের পক্ষে একরোখা অবস্থান না নিলে ‘ডাকা’ ড্রিমারদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাদের সামনে ডিপোর্টেশন ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকবে না। নিউ অরলিন্সের ফেডারেল আপিল কোর্টে ওবামা প্রশাসনের আমলে সৃষ্ট এই পলিসির ওপর চরম কষাঘাত করা হয়। বলা হয়, এই ডাকা অসাংবিধানিক। এই সংবাদ সারা দেশে ডাকার সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য প্রচণ্ড আঘাত। যাদের পরিবারে কেউ বৈধ, কেউ অবৈধ রয়েছে, সে পরিবারের জন্য এটা প্রচণ্ড আঘাত। 

আপিল কোর্টে তিন জাজের প্যানেলের এই ডাকাবিরোধী সিদ্ধান্ত সমগ্র আমেরিকায় ‘ডাকা’র সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য এবং ডাকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য যারা আশাবাদী তাদের আশাকে ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল ডাকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সেখানকার রিপাবলিকান গভর্নর এবোটের প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুসারে। আর ফেডারেল অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষে এই ডাকার পক্ষে অবস্থান নেয়া হয়। 

তিন জাজের প্যানেল সম্মত হয় যে, ডাকা সম্পর্কিত নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্ত যথাযথ। অথচ এই ডাকা লাখ লাখ ইমিগ্র্যান্টদের ডিপোর্টেশনের হাত থেকে রক্ষা করে। তাদেরকে এদেশে বৈধভাবে পরপর তাদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের সুযোগ পাবে। আপিল কোর্টের সিদ্ধান্তের কারণে এখন বিষয়টি একটি টেক্সাস আদালতে প্রেরণ করা হয়, যেখানে এ সংক্রান্ত বাইডেন প্রশাসনের বিধি সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১২ সালে কংগ্রেস স্থায়ী আইন পাস না করা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে এই ডাকার মাধ্যমে ৮ লাখ লোককে সুবিধা দেয়ার জন্য এই নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। বর্তমানে ৬ লাখ ১১ হাজারেরও বেশি লোক এ কর্মসূচিতে আছে। আরো ৮০ হাজার ডাকার কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছেন, কিন্তু এখন তাদের আবেদনের ভিত্তি নেই আপিল কোর্টের সিদ্ধান্তের পর।

নিউ আমেরিকান ইকোনোমি নামে এক সংগঠনের গবেষণায় দেখা যায়, ডাকাভুক্তির যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা ২০১৭ সালে ২৩.৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৫ সালে ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেন। ডাকার ৯৩ শতাংশ যোগ্য ব্যক্তি ২০১৭ সালে কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

বাইডেন প্রশাসন এই কোর্টের আদেশের সমালোচনা করেন এবং কংগ্রেসকে এর সপক্ষে আইন পাস করার আহ্বান জানান। ডেমোক্রেটরা এই রায়ের সমালোচনা করলেও রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে উল্লাস প্রকাশ করা হয়। সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল জাজদের প্রাধান্য থাকায় সেখানে জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ডাকা কর্মসূচি ভেঙে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সময় সুপ্রিম কোর্টে ৫-৪ ভোটে যেভাবে ডাকা বাতিল করতে চেয়েছিল, তার পদ্ধতিতে ত্রুটি ছিল বলে উল্লেখ করে তা নাকচ করা হয়। চিফ জাস্টিস জন রবার্টস চারজন লিবারেল জাস্টিসের সাথে সহমত পোষণ করেছিলেন। 

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ মেজরিটি হচ্ছে রক্ষণশীলরা আর সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র আসতে পারে। সেন্টার ফর আমেরিকা প্রোগ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, সারা আমেরিকায় ‘ডাকা’ সুবিধাপ্রাপ্তদের সাথে ১৫ লাখ লোক বসবাস করে। আর গত বুধবারের কোর্ট সিদ্ধান্ত এসব লোকের জীবনকে বেদনাময় করে তুলেছে। ডাকা নিয়ে লেখা শেষ না হলেও এর বর্তমান বিকলাঙ্গ রূপ বেদনাদায়ক। কংগ্রেসের উচিত যথাশীঘ্রই আইন পাস করা। আইন পাস না হলে আর তা কোডিফাই করা না হলে, রিপাবলিকান পন্থী সর্বোচ্চ আদালত এই নিয়ে খেলা খেলতে থাকবে। আগামী নির্বাচনে এই ইমিগ্রেশন বিশেষ করে ডাকা নিয়ে মানুষের কাছে প্রচারণা জোরদার করা উচিত। যাতে ভোটে ডাকাপন্থীদের জয় হয়।

শেয়ার করুন