২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:১৭:৪২ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের ফুটবলের আকাশে কালো মেঘ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
বাংলাদেশের ফুটবলের আকাশে কালো মেঘ


সাংগঠনিক ব্যর্থতা আর দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবল বিশ্বমঞ্চে একেবারে তলানিতে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বিএফএফ) সাধারণ সম্পাদককে ফিফা দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সালাহউদ্দিন, সালামদের স্বেচ্ছাচারিতা আর কথিত দুর্নীতির কারণে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সর্বস্তরে ফুটবল এখন ক্যানসার আক্রান্ত। এর মধ্যেও একঝাঁক সাহসী মেয়েদের সৃজনশীল প্রতিভাকে পুঁজি করে নিবেদিত ফুটবল প্রশিক্ষক ছোটন মেয়েদের ফুটবলে একের পর এক বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে। গর্বিত হয়েছে জাতি। গৌরবোজ্জ্বল হয়েছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। কিন্তু বিএফএফের বৈষম্যমূলক আচরণ আর অবহেলার কারণে খবর বেরিয়েছে ছোটন দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগ করছে। বিএফএফ মেয়ে ফুটবলারদের সামান্য মাসিক বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বর্ণজয়ী মেয়ে ফুটবলাররা একের পর এক ক্যাম্প ছেড়ে যাচ্ছে। কেউ যাচ্ছে বিদেশে ভাগ্যের অন্বেষণে, কেউ বা খেলা ছেড়ে যুক্ত হচ্ছে অন্য কোনো কাজে। কারণ বেশির ভাগ মেয়েরাই উঠে এসেছে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মধ্য থেকে। তাদের অর্থের প্রয়োজন সংসার পরিবার সামলাতে।

বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না, ব্যর্থ পুরুষ দলের বিদেশি কোচিং স্টাফদের যখন হাজার হাজার ডলার দিতে কুণ্ঠিত না বিএফএফ, তখন সোনা জয়ী মেয়েদের কারিগর ছোটনকে যোগ্য সম্মানি দিতে ব্যর্থতা কেন? এমনিতে তো মেয়েরা সফল হয়ে দেশে ফিরলে কর্তাব্যক্তিদের ক্যামেরার সামনে উল্লম্ফন করতে কুণ্ঠিত হতে দেখি না। তবে কেন ক্যাম্পে থাকা ২৪/৭ ফুটবল চিন্তায় বিভোর মেয়ে ফুটবলারদের অতি সামান্য মাসিক বেতন মাসের পর মাস বকেয়া থাকে? এগুলো কি দেখার কেউ আছে? সবকিছু কি প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হবে? ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বা ক্রীড়া সচিব কি মোমের পুতুল। আর কত পতন হলে বিএফএফ কর্মকর্তাদের লজ্জা হবে? কেন এখনো ব্যর্থতার দায় নিয়েও নিজে থেকে পদত্যাগ করছে না সালাহউদ্দিন, সালাম নিয়ন্ত্রিত বিএফএফ? 

প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে চলতে থাকা বেসরকারি সংস্থাসমূহ আয়োজিত ফুটবল খেলার খবর বের হচ্ছে। লক্ষণীয় স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল এখনো অনেক জনপ্রিয়। সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রামের নিভৃত এলাকায় খেলা দেখতে গেছি। দেখেছি সেখানে ফুটবলের উম্মাদনা। ফলে আঞ্চলিক পর্যায়ে সঠিক অবকাঠামোর মাধ্যমে প্রতিভা অন্বেষণ করে পরিচর্যা করা হলে এখনো ৫-৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ফুটবল দক্ষিণ এশিয়া পেরিয়ে  সমগ্র এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব, ফুটবলকে ব্র্যান্ডিং করা। এটা না যে ফুটবলে অর্থের অভাব। অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থ বিনোয়োগ করছে, আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহী। কিন্তু এগুলো নিয়ে যাদের কাজ করার কথা তাদের না আছে যোগ্যতা না আছে সততা।  

প্রতিনিয়ত মিডিয়াগুলোতে এ নিয়ে ব্যপক হাহাকারমূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে।  সরকারও নির্লিপ্ত। আশা করি শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রী অচিরেই কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। ফিফা এবং এএফসির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথমে বিএফএফ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী উপদেশ দিলে বিএফএফ কার্যকরি পরিষদ আপনা থেকে সরে যেতেও পারে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ফুটবল প্রেমিক দক্ষ কর্মকর্তা এবং প্রশাসকদের দিয়ে বিএফএফ গঠিত হওয়ার পর আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে দেশব্যাপী ফুটবল আন্দোলন সৃষ্টি করলে সুফল মিলবে। 

১৯৬০ দশক থেকে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটা মুহূর্তের খবর রাখার চেষ্টা করি। ১৯৭০, ১৯৮০, ১৯৯০ দশকে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্তও ছিলাম। প্রবাসে থেকেও খবর রাখি। ভীষন কষ্ট পাই দুঃখ লাগে ফুটবলের পতন  দেখে। এটা শুধু আমি একা নয়। প্রবাসে থাকা হাজার হাজার ভক্তরা আফসোস করছেন। দেশে তো এ নিয়ে আক্ষেপের আর অন্ত নেই। কিন্তু যাদের ওপর সব দায়িত্ব, তারা যে সুখনিদ্রায়। তাদের ঘুম ভাঙাবে কে?

শেয়ার করুন