২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:৪১:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বললেন ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন
আমরা এখন ঘোরতর সঙ্কটে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
আমরা এখন ঘোরতর সঙ্কটে গোলটেবিল বৈঠকে ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন (ডান থেকে দ্বিতীয়)সহ নেতৃবৃন্দ


সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমরা একটা ইউনিক নির্বাচন দেখতে পাচ্ছি। যেমন খুশি তেমন নির্বাচন আরকি। আমরা এখন ঘোরতর সঙ্কটে আছি। অনেকেই এটি বুঝছেন। গত ২৫ নভেম্বর ২০২৩ বেসরকারি সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের আওতায় ’সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ: প্রত্যাশা, বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকটি মোহাম্মদপুরের ওয়াইডব্লিউসিএ কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। 

ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ১০০ বছরের পুরানো মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আমাদের এখনো কথা বলতে হচ্ছে। নির্বাচন হয়তো করে ফেলবে, কিন্তু নির্বাচনের পর কী হবে এটি নিয়ে আমি সন্দিহান। গত দুইটি নির্বাচন নিয়ে মানুষ যা বলতো না এবার তাঁরা কথা বলছে। আমি ঘর থেকে বের হলেই মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে, ভোট দিতে পারি না, কী করবো? আমি বলি আল্লাহ আল্লাহ করেন। 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, আদিবাসী সঞ্জীব দ্রং এবং ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। 

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকার জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। এখন বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। আমরাও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের বসার আহ্বান জানিয়ে আসছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীরা চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ তাদের সব নেতাই এখন জেলে। ইতিমধ্যে অনেকেই আদালত কর্তৃক সাজা পেয়েছেন, আরও অনেকে পাবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একতরফা নির্বাচনই আমাদের নিয়তি। 

শারমীন মুরশিদ বলেন, আমরা একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। এর থেকে আমাদের বের হতে হবে। বের হওয়ার জন্য আমরা নাগরিক সমাজ কী করতে পারি সেটি উপরই নির্ভর করবে আমরা তথা জাতির অস্তিত্ব। 

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম লাইন হচ্ছে গভারমেন্ট বাই দা ডিসকাশন। তাই সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো সময় সংলাপ হতে হবে। সংলাপের সময় শেষ হওয়া মানে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটা। আমাদের হতাশ হলে হবে না। আমরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি যারা কথা বলছে তাদের নিয়ে একটি পক্ষ সামালোচনা করছে। কিন্তু তাঁরা তো চেষ্টাটুকু করছে না, ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করবে না।

লিখিত প্রবন্ধে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। কিন্তু পূর্বাভাস বলছে আমরা একটি একতরফা ও সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছি। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যদি সমঝোতা না হয়, তবে সামনের দিনগুলোতে জাতিগতভাবে আমরা চরম সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হতে পারি, দেশ চলে যেতে পারে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে- যা কারোই কাম্য নয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে; অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে তাঁরা ঐক্যমতে আসতে পারেনি; নির্বাচন কমিশনের ওপর সকল দলের আস্থা নেই; নির্বাচন কমিশন যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে করতে পারবে, তা এখনও দৃশ্যমান নয়। 'নির্বাচনকালে সরকার নিবপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, এমন ধারণা রাজনৈতিক দল জনমনে এমন অনুপস্থিত। জনপ্রশাসনসহ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীরা দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করবে কিনা, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দলীয়প্রভাবমুক্ত কিনা এবং নির্বাচনকালে প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে; নির্বাচনকালে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারবে কিনা এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোট ছাড়া অন্যান্য দল নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও জোট এবং সমমনা কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং জোরেশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।

শেয়ার করুন