২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


`যে আয়কর দিতে পারে না তাকেও দুই হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হবে'
এটা নাকি গরীব বান্ধব বাজেট প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২৩
এটা নাকি গরীব বান্ধব বাজেট প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের সমাবেশের বক্তব্য দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল/ছবি সংগৃহীত


প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ‘জনগনের সাথে মস্করা’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাজেট পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেন  শনিবার বিকালে এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ তারা (সরকার) একটা মস্করা করছে। গতকালই(শুক্রবার) অর্থমন্ত্রী কি বলেছেন? এটা মস্করা ছাড়া কি হতে পারে। তিনি (আ হ ম মুস্তফা কামাল) বলেছেন, এটা নাকী গরীব বান্ধব বাজেট, গরীবের জন্য বাজেট। এমন গরীবের বাজেট … যে আয়কর দিতে পারে না তাকেও দুই হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। এছাড়া ঋণ পায় না, তারা যে বাজেট তৈরি করে তারা যে উন্নয়নের কথা বলে সব কিছুর মূলে হচ্ছে জনগনের পকেট থেকে টাকা কেটে নিয়ে সেই টাকা তারা নিজেদের পকেটে ভরে বিদেশে পাচার করে।”

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন আবার নতুন কায়দা শুরু করেছে। টাকা তো বিদেশে পাচার করেছে আগেই, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। এখন আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি সেই টাকা নাকি আবার ফেরত আসছে। ফেরত আনছে কেনো? যারা পাচার করেছে সেই টাকা বিদেশে রাখা নিরাপদ নয় সেজন্য ফেরত আনছে। এই পাচার করা টাকা ফেরত আনলে আড়াই পারসেন্ট ইনসেনটিভ পাবেন এই সুবিধাটা তারা নিচ্ছেন। অর্থাত কোনোটাই ছাড়ি দিতে রাজি নয়।”

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে তিনি গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রেখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) যে বাজেট দিয়েছে এই বাজেটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাধারণ মানুষ গরীব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ, আমার রিকসা শ্রমিক ভাইয়েরা, এমনকি পা কাটা ভিক্ষুক যার অন্য কোনো উপায় নেই, যে ভিক্ষা করছে তাকে পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়নি অর্থাত যাদের কর মওকুফের কথা বলা হয়েছে তাদেরকেও কর দিতে হবে, তাদেরকেও টিন নাম্বার লাগাতে হবে। এজন্য সংবাদ পত্রে কার্টূন দিয়েছে…চমতকার কার্টূন, তাতে দেখা যাচ্ছে একজন ভিক্ষুক তার দুই পা কাটা, থালা নিয়ে ভিক্ষা করছেন এবং বুকের মধ্যে আয়করের টিন নাম্বার লাগিয়েছেন। এই হচ্ছে এই সরকারের অবস্থা।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করেছে… এটা আমার কথা নয়, আজকে পত্রিকা খুলে দেখুন, কালকের পত্রিকা খুলে দেখুন সমস্ত অর্থনীতিবিদরা যারা অতীতে অর্থমন্ত্রী ছিলেন, বা বড় অর্থনীতিবিদ তারা সবাই বলছেন, এই বাজেট যেটা দেয়া হয়েছে এটা যে অর্থনৈতিক সংকট আছে সেই সংকটকে চিহ্নিত করতে পারেনি এবং সমাধানের কোনো পথ দেখাতে পারেনি। উপরন্তু সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।”

 

‘‘ জিনিসপত্রের দাম যেটাকে অর্থনীতির ভাষায় বলে মুদ্রাস্ফীতি ইনফ্লেশন সেটা কমানোর কোনো কথা এখানে(বাজেটে) নাই। সাধারণ মানুষের চাল-ডাল-লবন কমানোর কথা নাই, কৃষকের সারের দাম, তার বীজের দাম কমানোর কথা নাই, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দেয়ার কথা নাই। কি আছে? ওই বড় বড় মানুষদের যারা আওয়ামী লীগের লোক যারা আজকে চুরি করে, দুর্নীতি টাকা বানিয়েছে তাদেরকে কি করে রেয়াত দেয়া যাবে, তাদেরকে কি করে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যাবে সেই ব্যবস্থা এখানে(বাজেটে) করা হয়েছে।”

 

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের উদ্যোগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় সাজার প্রদানের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। প্রখর তাপদাহ উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে উপস্থিত হয়।

 

‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি মর্যাদাকর নয়’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তাদের(সরকার) একটা বিষয়ে মাথা বেশ গরম হয়েছে। বিভিন্নভাবে কথা বলে চেষ্টা করছে …এটা নাকী তাদের কোনো সমস্যা না। তাদের যদি সমস্যা না হয় তাহলে এটা আসলো কেনো? এটা হচ্ছে ভিসানীতি। আমি এই সম্পর্কে বেশি কথা বলতে চাই না।তবে ভিসানীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা দিয়েছে তা আমাদের জন্য মর্যাদাকর নয় জাতি হিসেবে।”

 

‘‘ কারণ আমরা এমন একটা দেশ তৈরি করেছি, এমন একটা জাতি তৈরি করেছি, এমন একটা ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ তৈরি করে দিয়েছে যে ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, তোমরা যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন না করতে পারো তাহলে তোমাদের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার মধ্যে কারা আছে? রাজনীতিবিদ আছে, তার মধ্যে প্রশাসন আছে, তার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আছে এবং বিচার ব্যবস্থাও আছে। অর্থা এই কথা আজকে পরিস্কার শুধু দেশের মানুষের কাছে নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে যে, বাংলাদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই, আইনের শাসন নেই।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সরকারকে পরিস্কার করে বলতে চাই যে, অনেক হয়েছে এনাফ ইজ এনাফ। সম্প্রতি আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। আপনাদের এখনো বোধদয় হচ্ছে না। এখনো সমানে মিথ্যা মামলা করছেন, গায়েবী মামলা করছেন, এখনো আমাদের নেতা-কর্মীদেরকে আটক করে রেখেছেন। এখনো আপনাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পুলিশের প্রশ্রয়ে হামলা মামলা করছেন। আজো রুপগঞ্জে কাজী মুনিরের আয়োজিত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান সরকারি সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে গুলি করে বানচাল করে দিয়েছে, নিপুণ রায় চৌধুরীকে আহত করেছে, মাথায় আঘাত করা হয়েছে, আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এইসব মিথ্যা দিয়ে আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে এবং কি আমাদের জীবন বিপন্ন করে দিয়ে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখা যাবে না, এই আন্দোলনকে দমানো যাবে না।”

  

‘সংকটের উত্তরণে পদত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো পথ নাই’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকারকে বলতে চাই, এখনো সময় আছে শুভ বুদ্ধি উদয় হোক। এখনো জনগনের দাবি মেনে নেন, পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগনের সংসদ ও জনগনের সরকার নির্বাচিত করেন। সেটাই এখন এই সংকটের একমাত্র পথ। এছাড়া অন্য কোনো পথ নাই। অন্য দিকে দৌঁড়ে কোনো লাভ নাই। আপনাদের সময় হয়ে গেছে, ঘন্টা হয়ে গেছে, ঘন্টা বেজে গেছে। আজরাইল পেছনে দাঁড়িয়ে গেছে।”

 

নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

 

মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, নাসির উদ্দিন অসীম, মীর সরাফত আলী সপু, রাকিবুল ইসলাম বকুল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

 


শেয়ার করুন