২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৪৮:২৩ অপরাহ্ন


সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়মুক্তি পাবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প: আদালত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়মুক্তি পাবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প: আদালত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প


প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে করা অপরাধের জন্য আনীত অভিযোগের বিচার থেকে দায়মুক্তি পাবেন না যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁর বিচার করা যাবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল আদালত এ অভিমত দিয়েছেন।

ফেডারেল নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হওয়া উচিত নয়- ট্রাম্পের এমন যুক্তি স্পষ্টভাবে খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আদালতের আদেশের সমালোচনা করে একে ‘জাতি–বিধ্বংসী’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

ওয়াশিংটন ডিসির তিন সার্কিট জজের প্যানেলের ৫৭ পৃষ্ঠার সর্বসম্মত অভিমতে বলা হয়েছে, একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে দায়িত্বে থাকাকালীন তাঁর নেওয়া পদক্ষেপের জন্য বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ বিচার ব্যবস্থায় রয়েছে। অভিমতে বিচারকেরা আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের দপ্তর এর সাবেক দায়িত্ব পালনকারীকে পরবর্তী পুরোটা সময়ের জন্য আইনের ঊর্ধ্বে রাখবে, আমরা তা মেনে নিতে পারি না।’

আদেশে আরও বলা হয়, ‘২০২০ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকার প্রচেষ্টা ছিল বলে আভিযোগ রয়েছে। যদি প্রমাণিত হয়, এটা আমাদের সরকারের কাঠামোর ওপর এক নজিরবিহীন আক্রমণ। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেকে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট গণনা এবং প্রত্যয়নের এমন একটি প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেছিলেন, যেখানে প্রেসিডেন্টের কোনো ভূমিকা নেই। বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি এবং কংগ্রেসর ইচ্ছাকে ক্ষুণ্ণ করে।’

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। আদালতের এই আদেশকে তাঁর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অবশ্য ট্রাম্পের প্রচার মুখপাত্র স্টিভেন চেউং বলেছেন, এ আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। সুপ্রিম কোর্টে আপিলের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবেন ট্রাম্প। এরপর এ আদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন কি না সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবারের আদেশের কড়া সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টকে সঠিকভাবে কাজ করতে এবং আমাদের দেশের ভালোর জন্য যা করতে হবে, তা করার অবশ্যই পূর্ণ দায়মুক্তি থাকতে হবে। এ রকম জাতি-বিধ্বংসী আদেশ বহাল রাখতে দেওয়া যাবে না।’

অন্যদিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফেডারেল বিচারক তানিয়া চুটকান আদেশ দিয়েছিলেন এই মামলার বিচার কাজ স্থগিতাদেশের। 

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। অভিযোগ ওঠে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নির্বাচনে ফলাফল বদলে দিতে চেয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে চারটি- রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দাফতরিক কাজে বাধা দেওয়ার ষড়যন্ত্র, দাফতরিক কাজে বাধাদান ও নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। গত বছর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছিল। ট্রাম্প চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার দল রিপাবলিকান থেকে আবার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দৌড়ে এগিয়ে আছেন।

তবে ট্রাম্পের আইনজীবীদের যুক্তি, তাদের মক্কেলকে এই ধরনের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি করা উচিত হবে না। কারণ, ঘটনার সময় তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদে থাকা অবস্থায় ব্যক্তি এ ধরনের দায় থেকে মুক্তি পাবেন কি না-বর্তমানে তা যাচাই করে দেখছেন দেশটির ফেডারেল আপিলের তিন সদস্যের একটি প্যানেল। আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে এ বিষয়ে রুল আসতে পারে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, আপিল প্রক্রিয়া চলার কারণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। এ ছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার সমাপ্তি ঘটে যাবে। কারণ, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ৬-৩ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা।

বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা থেকে ট্রাম্প দায়মুক্তি পেলে, তা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ব্যক্তির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন ট্রাম্প। তার দাবি, তিনি অন্যায় কিছু করেননি। তিনি বিচার বিভাগ ও বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছেন।

এই চারটির বাইরে ট্রাম্প আরো তিনটি ফৌজদারি মামলার বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এর একটি হলো ২০২০-এর নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া সংক্রান্ত। দ্বিতীয় অভিযোগ হলো, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার সময় দাফতরিক কিছু গোপনীয় নথি সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে গেছেন। তৃতীয় অভিযোগ, তিনি পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলের মুখ বন্ধ রাখতে ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ঘুষ দিয়েছিলেন। এই মামলার বিচারকাজ আগামী ২৫ মার্চ নিউইয়র্কে শুরু হবে বলে দিন ঠিক করা আছে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ মামলার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে ক্ষেত্রে স্টর্মির মামলাই হবে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে প্রথম ফৌজদারি বিচার কাজ।

শেয়ার করুন