২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:২২:২০ পূর্বাহ্ন


‘নিরপেক্ষ সরকার’ এর অধীনে নির্বাচন চান মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৩
‘নিরপেক্ষ সরকার’ এর অধীনে নির্বাচন চান মির্জা ফখরুল


শেখ হাসিনার সরকারকে ‘অবৈধ’ অভিহিত করে ‘নিরপেক্ষ সরকার’ এর অধীনে নির্বাচন চান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকালে ‘বঙ্গবন্ধুর উদ্যান’(বেলস পার্ক) এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই দাবির কথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘সোজা কথা… এই অবৈধ সরকারকে আমরা মানি? মানি না।সংবিধান অনুযায়ী এরা বৈধ সরকার নয়।  আমরা নির্বাচন চাই এবং সেই নির্বাচন চাই সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, এই শেখ হাসিনার অধীনে নয়।”

 

‘আর সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, নতুন পার্লামেন্ট গঠন করে জনগনের স্বপ্নকে পূর্ণ করতে হবে।’ বলেন বিএনপি মহাসচিব।

 

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারকে সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল শ্লোগান তুলে বলেন, ‘‘ এদেরকে সরাতে হবে? এদেরকে সরাতে হলে আমরা কি করতে হবে? দফা এক দাবি এক। সেটা কি? নেতা-কর্মী সমস্বরে বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ’।

 

তিনি বলেন, ‘‘ এদেশের স্বাধীনতাকে যদি রক্ষা করতে হয়, এদেশের গণতন্ত্রকে যদি রক্ষা করতে হয়, এদেশের সার্বভৌমত্বকে যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নাই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই তরুনদের সামনে এগিয়ে গিয়ে তাদেরকেই সামনে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।”

 

‘‘ এদেরকে পরাজিত করতে হবে। জনগনকে বিজয়ী করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে আমাদেরকে একটা মুক্ত স্বাধীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। আমাদের সকল মানুষকে তারেক রহমানের স্বপ্ন দেখাতে হবে।”

 

এরপর আবারো শ্লোগান ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

 

 তিনি বলেন,   ‘‘ উনি (তারেক রহমান) কি শ্লোগান দিয়েছেন? ফয়সালা হবে কোথায়, রাজপথে। আর বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, কোন বাংলাদেশ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, কোন বাংলাদেশ ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ, কোন বাংলাদেশ যেখানে সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে সেই বাংলাদেশ। আসুন আমাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ ফিরে পাবার জন্য ….. আমরা তরুনরা আজকে জেড়ে উঠুন, গর্জে উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হউন, দূর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি… এই হোক এই সমাবেশের মূল কথা।”  

 

বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে(বেলস পার্ক) ‘জাতীয়তাবাদী যুব দল- জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল- জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল’এর যৌথ উদ্যোগে এই ‘তারণ্যের সমাবেশ’ হয়। বরিশাল ছাড়াও ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর জেলা থেকেও হাজার হাজার নেতা-কর্মী মাথায় লাল, সবুজ, হলুদ টুপি পড়ে লাল সবুজ জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ব্যানার-ফেষ্টুন হাতে নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেয়।

 

মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত দুইটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়।

 

‘সিইসির সমালোচনা’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ওরা ১৪/১৫ বছর ধরে নিপীড়ন-নির্যাতন করে জনগনের ওপর চেপে বসে আছে। বলে যে, নির্বাচন করি? তারা নাকী নির্বাচন করে। তাদের অধীনে নাকী ভালো নির্বাচন হয়। হয় নাকী? কয়েকদিন আগে বরিশাল সিটি করপোরেশনে ইলেকশন হয়ে গেলো না। কি হলো? আবার সেই একই ইভিএমকে ব্যবহার করলো। আর আমাদের আলেম সাহেব, শ্রদ্বেয় মানুষ। জনগনের পীর সাহেব তাকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধা করে নাই। আমরা ঘৃণা জানিয়েছি। ওই যে চিফ ইলেকশন কমিশনার কি বলেন? আবার জিজ্ঞাসা করছেন সাংবাদিকদেরকে… তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন।এমন ইলেকশন কমিশন বানিয়েছেন এই শেখ হাসিনা, যে তার প্রধান চিফ ইলেকশন কমিশনার তিনি না মরলে শান্তি পান না, মনে করেন যে, তাহলে ইলেকশন ঠিক হয়েছে।”

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এরা(সরকার) আবার বলে যে, আমাদের অধীনে নির্বাচন হবে। তোমাদের অধীনে কিভাবে নির্বাচন হবে? বলে যে, সংবিধান অনুযায়ী হবে। কোন সংবিধানে কি লেখা আছে। সেই সংবিধানে লেখা আছে যে, এই দেশে মালিক জনগন। সেই জনগন কি ভোট দিতে পারে?”

 

‘‘ তোমাদের দুই বার ভোট দিয়েছে জনগন। এই যে এখানকার তরুন ভাইয়েরা বলে গেলো এখানে, একজন মেয়েও বলে গেলো যে, আমি তো ভোট দিতে পারি নাই। আমার এখানে সব তরুনরা সামনে। কত জন ভোট দিয়েছো ভাই? কেউ ভোট দিতে পেরেছে? কেউ ভোট দিতে পারে নাই। দুই জেনারেশন ভোটই দিতে পারে নাই … ১৪ বছর হয়ে গেছে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ ভোট কেনো দেই আমরা। আমাদের একজন প্রতিনিধি নির্বাচন করি। যে আমাদের পার্লামেন্টে গিয়ে আমাদের কথা বলবে, আমাদের জন্য আইন পাস করবে। এদেশ যেন সুখী শান্তিতে থাকে, সমৃদ্ধভাবে চলে সেজন্য তো আমরা ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচন করে সংসদে পাঠাই।”

 

‘‘ এরা (আওয়ামী লীগ) কেনো পাঠায়? এরা পাঠায় চুরি করবার জন্যে। সকলকে বন্ধ করে রেখে নিজেরা সিল-চাপড় মেরে আগের রাত্রে ভোট করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট করে তারপরে বলে যে, ভোট হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি। এটা করে কেনো? তারা জানে যে, সত্যিকার অর্থে যদি জনগন ভোট দিতে পারে তাদের(জনগন) ইচ্ছাটাকে প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ১০টা আসনও পাবে না। তাড়াতাড়ি ঘুটায়ে সকলকে পালাতে হবে।”

 

‘সুইস ব্যাংক প্রসঙ্গ’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যে চুরি করেছে চিন্তা করা যায় না। কিছুদিন আগেও খবর উঠলো যে, সুইস ব্যাংকে নাকী বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা হচ্ছে। পত্রিকায় পড়ছেন তো। আবার হঠাত করে দেখলাম, আমি জানিনা কি যোগসূত্র আছে জানি না, আমাদের অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যখন সুইজারল্যান্ড গেলেন তারপরেই দেখতেছি পত্রিকায় যে, সেই সুইস ব্যাংক থেকে নাকী বাংলাদেশের টাকা উধাও হয়ে গেছে। আমি জানি না এটার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে কিনা, যোগসূত্র আছে কিনা। কিন্তু সেখান থেকে নাকী আবার উধাও হয়ে গেছে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ জানে যে, এরা হচ্ছে চোর। শুধু ভোট চোর না। আমাদের পকেটও কাটে, পকেট মারও। এই যে বিদ্যুতের বিল দেন না আপনারা কি জানে বিদ্যুতের বিল দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শতকরা ৩০ টাকা ৪০ টাকা নাই। কোথায় যায়? ওদের কাছে যায়।”

 

‘‘ এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে চুরি করা, ডাকাতি করা। আর চুরি-ডাকাতি করে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা এবং সেখানে টাকা রেখে দেয়া।”

 

ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে এবং যু্ব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের যৌথ সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জাকির হোসেন নান্নু, এইচ এম তাসলিম উদ্দিন, মাসুদ হাসান মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, রফিকুল ইসলাম রফিক, মশিউর রহমান মনজু, রফিকুল ইসলাম জনি, ছাত্র দলের তানভীর হাসান, হুমায়ুন কবির, মাহফুজুর রহমান মিঠু, রেজাউল করীম রনি বক্তব্য রাখেন।

 

এছাড়া তরুনদের পক্ষ থেকে সরকারি চাকুরিচ্যুত আবুল কালাম আজাদ রিপন, চাকুরি বঞ্চিত জাহিদুল ইসলাম, তরুন ভোটার জান্নাতুল উর্মি, ভোলায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নিহত আব্দুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারা নির্যাতিত স্থানীয় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী, ‘গুম’ হওয়া কালু মিয়া ও মিরাজ আহমেদের মা ফিরোজা বেগম বক্তব্য রাখেন।

 

সমাবেশে কবিতা আবৃত্তি করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, সাংবাদিক সাঈদ খান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহনাজ পারভিন লিপি।

 



শেয়ার করুন