২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ৬:৩৭:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৩
বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন


দেশের বাহিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণার ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার এখন আগের চেয়ে অনেক হার্ড লাইনে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, দেশের ভেতরে শুধু নয় বাইরেও নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণায় সরকার দারুণভাবে বিব্রত ও অস্বস্তিতে। এটা অতীতেও ছিল তবে এখন তা অনেক অসহনীয় পর্যায়ে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। 

জানা গেছে, গেল বছরের একেবারে শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এনিয়ে দেশে যেমন তোলপাড় হয়েছে, বিবৃতির ঝড় বয়ে যায়- তেমনি বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন দল ব্যক্তি নানান ধরনের মন্তব্যে সরকারের ইমেজে বড়ো ধরনের ধাক্কা লাগে। কেননা ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে বিদেশে নানান ধরনের আলোচনা তুঙ্গে। এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ঘটনা ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকলেও তাতে বলা যায় ঘি ঢেলে দিয়েছেন। কেননা ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়াকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা মনে করে রাশিয়ার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি ইস্যু করা হয়। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোয় নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন। 

ঢাকার রুশ দূতাবাস মারিয়া জাখারোভার বিবৃতিটি প্রচার করেছে। মারিয়া জাখারোভা বলেন, ঘটনাটি মার্কিন কূটনীতিকের তৎপরতার প্রত্যাশিত ফল। যিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার সুরক্ষার নামে ক্রমাগত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর যুক্তরাজ্য ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনের সহকর্মীরা একই লক্ষ্যে যুক্ত থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে খোলামেলাভাবে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। 

পিটার হাসের শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসায় যাওয়ার সমালোচনা করেন মারিয়া জাখারোভা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে, এমন পদক্ষেপগুলো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ মারিয়া জাখারোভো প্রশ্ন করেন, ‘কেউ যদি জানতে চান, কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা- শব্দগুলো কেমন হবে? আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক ও কন্স্যুলার সম্পর্কে ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী এই বিষয়গুলো অনুসরণের আহ্বান জানাই। এটাই যে মূলনীতি, সেটাই সত্য। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশগুলোকে শুধু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই যতœবান ও মন্তব্য করার জন্য বলব না, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশ ও তাদের প্রতিনিধি যখন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে, তখন তাঁদের সহকর্মীদের সমর্থন করার আহ্বান জানাই।

আর এমন ঘটনার পাল্টা বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এটা কি ইউক্রেনে মানা হয়েছে? রুশ দূতাবাসের বিবৃতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এমন মন্তব্যই করে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে যখন বেশ আলোচনার জন্ম দেয় ঠিক তখনই বাংলাদেশ সরকার একটি শক্ত ভাষা প্রয়োগ করে বিবৃতি দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমেরিকা-রাশিয়া বা বিশ্বের কোনো লোক আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলাক, তা চাই না। তার এমন মন্তব্যের পর আর তেমন উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি কারো পক্ষ থেকে। 

কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে?

দেশে বিদেশে সরকার একর পর এক যখন নানান ধরনের সমালোচনার মুখে পড়ছে তখন এর পেছনে নানান ধরনের কারণ বা কর্মকান্ড খুঁজে বেড়াচ্ছে সরকার। তারা মনে করেন এমনিতেই বিদেশী দূতাবাস বা ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তৃতা বিবৃতি বা সমালোচনা করছে না। তারা এর পেছনে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তিও দায়ী বলেই মনে করে। আর সেজন্য সরকার এখন বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে দেশের বাইরে থেকে যেকোনো ব্যক্তি, সংগঠন, রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা করা হলেই তার ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশণা দেয়া হয়েছে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে। বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে বৈঠক  হয়েছে সম্প্রতি।

এতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এব্যাপারে বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রধানদের নির্দেশনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেয়। তাহলে আপনারা (রাষ্ট্রদূতরা) চুপ করে ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। মন্ত্রণালয় আপনাকে নির্দেশনা দিল, তখন আপনারা এর উত্তর দেবেন। এর জন্য বসে থাকলে চলবে না। আপনি (রাষ্ট্রদূত) একজন দায়িত্বশীল মানুষ। সরকার আপনাকে সর্বচ্চো কাজ দিয়েছে। আপনি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। কেউ অপপ্রচার চালালে আপনি তাৎক্ষণিক উত্তর দেবেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষার যে পুরাতন অনুশীলন রয়েছে, তা ভুলে যান।’

যদিও রাষ্ট্রদূতরা এর উত্তরে কী জানিয়েছেন বা তারা কি কি সমস্যা পড়ছেন- তার উত্তর তেমনভাবে পাওয়া যায়নি।  তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে অনেকে এব্যাপারে নানান রকমভাবে বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজের কথা তুলে ধরে দেশের মধ্যে সরকারকে আরো সর্তত হতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বৈঠকের বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, এবৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের বলা হয়েছে যারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাবে সেসব সংগঠন, ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল কিভাবে কার সাথে বাংলাদেশে যোগাযোগ করে এসব তথ্য পাচ্ছে বা সরবরাহ করছে তাদের নাম ঠিকানা যোগাড় করতে বলেছে। এবং এসব ব্যক্তি, সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্তদের নাম ঠিকানা বাংলাদেশে যখাযথ কর্তপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হলে সেমতে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঐ বেঠকের বেশ কয়েকটি সূত্র জানান। কেননা বলা হচ্ছে যে বিদেশে সরকারের আইনের শাসন, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত বিষয়গুলো নিয়ে অপপ্রচার ঠেকাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি ‘সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। বিদেশের মাটিতে ব্যক্তি, সংগঠন, রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণাকারীদের নাম ঠিকানা এই সমন্বয় কমিটিই তালিকা করবে। তাছাড়া সরাসরি না জানালেও মন্ত্রী বলেছেন তার বক্তব্যে।  শুধু কি অপপ্রচার রোধে এই কমিটি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেবল অপপ্রচার না, ভালো খবর সমন্বয় করে তারা আমাদের জানাবেন। খালি অপপ্রচার দেখেন কেন, ভালো খবরও তো দেখতে হবে। এর পরিসর বেশ বড়। কোনো স্পেসিফিক কিছু না, শুধু অপপ্রচার না।

শেষ কথা..ও এখন যা যা করতে পারে সরকার..

দেশের বাহিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণার ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে সেনিয়ে বিভিন্ন সূত্রে নানান ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। একটি সূত্র জানায় বিদেশের মাটিতে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণাকারীর নাম ঠিকানা যোগাড় করে বাংলাদেশে অবস্থারত তাদের ঘনিষ্টজনদের ওপর নজরদড়ি বাড়ানো হবে। দেশেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারকে নিয়ে কটূক্তি ও দেশবিরোধী চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগে লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে বগুড়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেছেন। সূত্র জানায় এর চেয়েও আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে দেশের বাইরে বসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণাকারীদের বিরুদ্ধে। জানা গেছে দেশে অবস্থানরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মামলা-মোকাদ্দমাসহ বিভিন্ন ধরনের নাজেহালেরও শিকার হতে পারে।

শেয়ার করুন