২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৫১:২৮ পূর্বাহ্ন


দেশকে জয়ন্ত কুমার কুন্ডু
জাতি দুঃশাসনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১১-২০২২
জাতি দুঃশাসনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে জয়ন্ত কুমার কুন্ডু


বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই খারাপ। অর্থনৈতিক সামাজিক সব পরিস্থিতিই খারাপ। সবদিক মিলিয়ে জাতি এক দুঃশাসনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জয়ন্ত কুমার কুন্ডু এসব কথা বলেন। 

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ১৯৮৪ সাল থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত ছিলেন। দেশকে তিনি জানান ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগ দেন। জয়ন্ত কুমার কুন্ডের পিতার নাস নেপাল চন্দ্র কুন্ডু। মাতা আশালতা রাণী কুন্ডু । তাদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার লক্ষণদিয়ায়। জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। তিনি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ (হেলাল বাবু কমিটি)-এর সাবেক সহ-সভাপতি এবং (লাল্টু হেলাল কমিটি)-এর সাবেক সহ-সভাপতি  ছিলেন।


এছাড়াও পিন্টু লাল্টু কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং এ্যানি-সোহেল কমিটির সাবেক সদস্যও ছিলেন। ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ২০০১ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমলে ৪ মাস জেল খেটেছেন । এছাড়া তাকে অসংখ্য মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 

দেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই খারাপ। অর্থনৈতিক সামাজিক সব পরিস্থিতিই খারাপ। একদিকে গণতন্ত্রহীনতা অন্যদিকে দুর্নীতি লুটপাট। সব দিক মিলিয়ে জাতি এক দুঃশাসনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। 

দেশ: বিএনপির শাসনামলে আমলেও আওয়ামী লীগসহ অনেক বিরোধীদল একইরকম অভিযোগ করতো। যারাই ক্ষমতায় যায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিরোধীদল একইভাবে কথা বলে। বিষয়টা কি এরকম?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: আমি মনে করি, বিএনপির শাসনামল অনেক অনেকগুলো ভালো ছিল। দোষ ত্রুটি সব সরকারের হতে পারে। কিন্তু এসরকারের দোষের শেষ নেই। বিশেষ করে নির্বাচনীব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে সীমাহীনভাবে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিএনপির আমলে মানুষ অনেক অনেক স্বস্তিতে ছিল। 


খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক মুহুর্ত এ জয়ন্ত/ ফাইল ছবি 



দেশ: দেশের বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে নানান ধরনের কেলেঙ্কারি বিএনপি আমলে হয়নি?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: বিএনপির আমলে কি ভোট ডাকাতি কি হয়েছে? (অবাক হয়ে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন প্রতিবেদককে লক্ষ্য করে)। বিএনপি যতোবার ক্ষমতায় এসেছে ততোবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করেই এসেছে। আপনারা হয়তো বলতে পারেন যে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের বিষয়টি। কিন্তু এ নির্বাচনের আগেতো বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াই বলেছিলেন যে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচন হবে একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পার্লামেন্টে গিয়ে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে আমরা আবার একটি নির্বাচন দিয়ে দিবো। তিনি সেদিন গণতন্ত্র রক্ষায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটাই করেছিলেন। হ্যাঁ, উনারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ্য করে) কথায় কথায় উদাহরণ দেন মাগুরার নির্বাচনের ব্যাপারে। কিন্তু উনারা কতোগুলি মাগুরার মতো নির্বাচনের আয়োজন করেছেন? কিন্তু দেখেন.. সেই মাগুরার নির্বাচনও তো প্রকাশ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো? মাগুরায় ভোট ডাকাতি হয়ে বলা হয়, তাতো ওই সময়ে আওয়ামী লীগের একটা প্রপাগান্ডা ছিল, যা পূর্বপরিকল্পিত। বিএনপির আমলে অনেক উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলে থেকেই অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়ে কি জয়লাভ করেনি? যেটা এখন কল্পনাই করা যায় না। 

দেশ: আপনারা আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ধরনের অভিযোগ করলেন। আপনি মনে করেন জনগণ এসব জানে না? তারা কি এসব বোঝে না? কিন্তু আমরা তো দেখি বিএনপির এসব অভিযোগ কানেই নেয় না দেশের জনগণ। আর এর কারণে বিএনপি আন্দোলন সফল হচ্ছে না। 

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: শোনেন মানুষ সবই বোঝে। জনগণের কোনো সমর্থনই এ সরকারের পক্ষে নেই। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই। ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণকে দমিয়ে রাখে। তবে সেটা বেশিদিন টিকে না। এটা চিরদিনের জন্য হয় না। 

দেশ: এধরনের একটি সরকারের পক্ষে থাকা তখই সম্ভব হয় না যদি জনগণ তাদের পক্ষে না থাকে। বলতে পারেন এ সরকারের পক্ষে এখনো শক্ত জনমত আছে। সেজন্য আপনাদের পক্ষে জনগণ নামছে না-বিষয়টি কি ঠিক?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: শোনেন, ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যায় জনগণ একটি স্বৈরাচারকে পছন্দ না করার পরও তারা টিকে থাকে। দিনের পর দিন কিছুই করা যায় না। 

দেশ: এটা সম্ভব হয় বিরোধীদলের দুর্বলতার কারণে। জনগণ এ সরকারের পক্ষে আছে। এ কারণেই আপনাদের মতো দলের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করা। আপনি কি মনে করেন সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: হ্যাঁ, বিরোধীদলের দুর্বলতার কারণে এটা হতে পারে তা মানি। কিন্তু বিরোধীদলের দুর্বলতা ছাড়াও রাষ্ট্রক্ষমতা যদি এরা টোটালি ব্যবহার করে, তাহলেও অনেকদিন টিকে থাকা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে তারা এমনভাবে ব্যবহার করেছে যে, তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে এরা জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল যেমন ফিলিস্তিনিদের কথায় কথায় দমন করে, বাংলাদেশে সরকারবিরোধী মতকে দমনে সে পথ বেছে নিয়েছে।  

দেশ: অভিযোগ আছে বিএনপি একটি সাম্প্রদায়িক দল। এদের সাথে স্বাধীনতাবিরোধী দলের সম্পৃক্ততা আছে। এটা কীভাবে দেখেন? এসব কারণে বিএনপির প্রতি সর্বসাধারাণের আগের মতো সমর্থন নেই। এটা কীভাবে দেখেন?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: আপনার কথা ঠিক না। বিএনপির প্রতি জনসমর্থন কোনোভাবেই কমেনি। আর এই যে বলা হয়ে থাকে বিএনপি একটি সাম্প্রদায়িক দল... এটা তো ভাই পুরোনো স্লোগান। কি পরিমাণ সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে? তা জানেন না? ..আপনারা এর পরিসংখ্যান দেখলেই তো বুঝবেন..

দেশ: আপনাদের আমলে হয়নি?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: আমাদের আমলে কি এভাবে হয়েছে (কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে)? বলা হবে ২০০১ সালে নির্বাচনের পরে..তাতো? যে কয়েকদিন হয়েছিল..সে ব্যাপারেই তো তুলে ধরা হবে? কিন্তু দেখেন ২০০১ সালে বিএনপি জয়লাভের পরে তারা ক্ষমতায় বসার আগেই তো এগুলি ঘটেছে। তখন তো ক্ষমতায় বিএনপি ছিল না। ছিল তত্ত্বাবধাক সরকার। এখনতো প্রতিনিয়ত হচ্ছে। 

দেশ: নিজের দল বলেই কি এমন সাফাই গাচ্ছেন?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: না..মোটেই না। পরিসংখ্যান দেখলেই তো বুঝবেন। কিন্তু আমি যদি সাফাই গাইতাম তাহলে তো ২০০১ সালের ঘটনা উল্লেখই করতাম না। আমি তো বলেছি ২০০১ সাথে যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তার জন্যে তো বিএনপিকে দোষারোপ করা যায় না। বিএনপি সে সময় তো সরকার গঠনই করেনি। তার আগেই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেছে। 

দেশ: কিন্তু এমন অভিযোগ তো আছেই যে এসবের পিছনে বিএনপির মদদ ছিল..

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: অভিযোগ আছে বলে যে বলা হচ্ছে, তার তো কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি কেউ। দেখেন আওয়ামী লীগ আজ কতো বছর ধরে ক্ষমতায় আছে... তারা কি পারছে সেসময়ের একটি ঘটনা প্রমাণ করতে যে এ ধরনের কাজে বিএনপি জড়িত ছিল। 

দেশ: এ সরকার কি কোনো ভালো কাজ করেনি? দেশের মানুষের জন্যে কি তারা কোনো উন্নয়ন করেনি?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: উন্নয়ন যদি ভালো কাজ হয় তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু উন্নয়নের নামে যদি দুর্নীতি লুটপাট হয়..তাহলে কি বলবেন? প্রশ্নটা তো সেখানই। উন্নয়ন তো সব সরকার আমলেই হয়েছে..এক সরকার যায়..সে একধরনের উন্নয়ন কাজ করে যায়..। আরেক সরকার এসে আরেকুট বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ সরকারের আমলে দুর্নীতিটা দেখেন। জনগণের ভোগান্তিটা দেখেন। রাস্তা তৈরি করে। যে রাস্তায় তিন বছরে কিছুই হওয়ার কথা না, সেটাতো এক বছরই টিকে না..। তাহলে একে কি উন্নয়ন বলবেন?

দেশ: বলা হয়ে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণেই বিএনপি সভা সমাবেশ করে একটু চাঙ্গা..এটা কি ঠক?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: নিষেধাজ্ঞা যারা দিয়েছে এটা তাদেরই ব্যাপার। এর সাথে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের আন্দোলনের সাথে তাদের নিষেধাজ্ঞার কোনো সর্ম্পক নেই। 

দেশ: বলা হয়ে থাকে বিএনপি আরো নিষেধাজ্ঞার আশায় আছে? এটা কি সত্য? 

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: আরে ভাই কতো কিছুই বলা হয়,হচ্ছে..তার কি সত্যতা আছে? বিএনপির আন্দোলন চলমান প্রক্রিয়া। কিছুদিন আগে যখন দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল, তখন কিন্তু বিএনপি মাঠে নেমেছিল। জনগণের এমন দাবি নিয়ে মাঠে নেমে বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী হারিয়েছে। শহিদ হয়েছে। কোন দেশ বা সংস্থা বাংলাদেশ সরকারকে কি করলো না করলো তার সাথে তো আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের কোনো সম্পর্ক নেই। 

দেশ: ওপরে আন্দোলন আর গোপনে সমঝোতায় আছেন.. এমন অভিযোগ..

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: কোনো সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। গোপন আবার কি..

দেশ: এ সরকারকে আপনি কি পরামর্শ দেবেন?

জয়ন্ত কুমার কুন্ডু: (মৃদৃ হেসে..) এ সরকারকে আর কি পরামর্শ দেবো? এদেরকে পরামর্শ দিয়ে লাভ কি? যাক বলতে বলেছেন তাই বলি..এখনো সময় আছে। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যে নির্বাচনীব্যবস্থা ছিল..যার মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হযেছিল, তাকে ফিরিয়ে আনা। একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়া এবং রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নেয়া।

শেয়ার করুন