১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:৫৯:২১ পূর্বাহ্ন


ঈদে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি কমছেই না
ঈদ যাত্রার বিড়ম্বনা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
ঈদ যাত্রার বিড়ম্বনা প্রতিটা ঈদেই ট্রেনের এ চিত্র প্রতিনিয়ত, মানুষের ভোগান্তি কাকে বলে,ছবি/সংগৃহীত


জানি ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারো পক্ষেই প্রতি ঈদে মহানগর বিশেষত রাজধানী ঢাকাবাসীদের নাড়ির টানে দেশের বাড়ী বা ঘরে ফেরার বিড়ম্বনা বোঝার বা উপলদ্ধি করা সম্ভব নয়। নারীর টানে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব পালন করার দীর্ঘ প্রত্যাশা, বাসনায় সবারই। কে না চায় ঈদের ছুটি প্রিয় সান্নিধ্যে কাটাতে। কিন্তু ওই স্বপ্নটা বা জার্নিটা ফ্যাকাসে হয় যায় রাজধানী বাসীর বাড়ী ফেরার চিত্রটা দৃশায়িত হওয়ার পর। এক কথায় ভয়াংকর স্মৃতি,কোনো বারের চেয়ে কোনো বার কম হয় না। একেই তো নানা অব্যাবস্থাপনার কারণে প্রিয় মহানগরী এখন বিশ্ববাসের জন্য পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহর।  যানজট, বায়ু  দূষণ,জল দূষণ, শব্দ দূষণের সব ধরণের কলঙ্ক তিলক মাখা। ফলে ঢাকা থেকে প্রতি ঈদ পার্বনে অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ ঢাকা থেকে সড়ক, নদী,রেল পথে দেশের সব প্রান্তে যেতে যুদ্ধে নামবে। 

প্রতি বছরই সরকারের মন্ত্রী,সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্তারা বলেন এবারে দুর্ভোগ কম হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সেটি হাজার মাইল দূরে কুইন্সল্যান্ডের লোগান সিটিতে বসে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। কী আর করা, নগরায়নের অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি মিলবে একমাত্র বিধাতা বলতে পারেন।

উত্তর,পূর্ব,পশ্চিমের সঙ্গে রেল সংযোগ আছে। পদ্মা সেতু (রেল সংযোগ) চালু হলে অচিরেই দক্ষিণের সঙ্গেও রেল যোগাযোগ চালু হবে। বঙ্গবন্ধু যমুনা রেল সেতুও হয়তো ২০২৪ নাগাদ চালু হয়ে যাবে। বিগত দশকে রেল খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে। অথচ দেখুন ডিজিটাল সময়েও রেলের টিকেট প্রাপ্তির কত বিড়ম্বনা? আমি সংশ্লিষ্ট স্টেশন ম্যানেজার বা টিকেট বিক্রেতাদের দায়ী করবো না। 

কেন চাহিদা প্রক্ষেপন করে পর্যাপ্ত ট্রেন বা অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা যাচ্ছে না? কেন অন্তত ৪০% ঘরে ফেরা নাগরিকদের স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না? আমি নিজে সম্পৃক্ত থেকে জানি- রেল মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বৃন্দের বিপুল বহর অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রশিক্ষণ এবং পরিদর্শনে এসেছেন। অস্বীকার করছি না, রেল যাতায়াত ব্যবস্থা ২০১০ পরিস্থিতি থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নত কিন্তু অন্যান্য দেশ এমনকি ভারত থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে। 

২০১৮,২০১৯ প্রতিবেদক ভারতে ব্যাপক রেল ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আছে। অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য  দেশে রেল ভ্রমণের কথা নাই বা বলি। রেল মন্ত্রণালয়ে আমাদের পরিচিত একজন চৌকষ মেধাবী কর্মকর্তাকে সচিব করা হয়েছে। কিন্তু দুর্বলতা আর কুশাসন আছে রেল ভবনে। আশা করি ২০২৩ রোজার ঈদ নাগাদ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি দৃশ্যমান হবে। 

শুনছি জাপান- বাংলাদেশ যৌথ ব্যাবস্থাপনায় কমলাপুর এবং বিমান বন্দর রেল স্টেশন দুটিকে মাল্টিমোড যোগাযোগ হাব করা হচ্ছে। আশাকরি, নিদৃষ্ট সময় এবং নিদৃষ্ট খরচের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। পাশাপাশি রেল চলাচল ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ বাহিত করা জরুরী। 

লঞ্চেও এমন যাত্রী চাপ,ঈদ এলেই। ঈদ ছাড়াও কম যাত্রী হয়না। তবু ঈদে বাড়তি যাত্রী, ছবি/সংগৃহীত 


এবার আসুন সড়ক যোগাযোগ নিয়ে- দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ সড়ক পথে আরিচা -গোয়ালন্দ, মাওয়া -ভাঙা পথে ঈদের সময় যাতায়াতে নরক যন্ত্রনা ভোগ করে। আশার কথা, ২০২৩ রোজার ঈদের আগেই অন্তত মাওয়া -ভাঙা পথে যাত্রার ভোগান্তি দূর হবে। আমার মনে হয়, ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণ থেকে আরিচা গোয়ালন্দ পথে সেতু বা টানেল নির্মাণ অনেক উপযোগী হবে। ঢাকা -টাঙ্গাইল- উত্তরবঙ্গের যাত্রায় বিড়ম্বনা বহুদিনের। 

 ঢাকা -ময়মনসিংহ সড়ক যাত্রার সূচনায় আব্দুল্লাহপুর -গাজীপুর সড়ক পথ এখন এখন অভিশপ্ত। এই সড়কের উন্নয়ন লজ্জাজনক ভাবেই সঙ্কটাপূর্ণ। আশাকরি সড়ক পরিবহন মন্ত্রী প্রতিদিন বিএনপির ফখরুল সাহেবের সাথে বাহাস না করে আব্দুল্লাহপুর- গাজীপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি দ্রæত শেষ করতে মনযোগ দিবেন।

 উনি শারীরিক ভাবে এখন পুরোপুরি সক্ষম না। তার উপর সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। এতো কিছু সামাল দিতে হয়তো খেয়েই হারিয়ে ফেলেছেন। আর বাস,বাসের টিকেট বিব্রত নিয়ে কি আর বলার আছে। দূরদেশে ঈদ পার্বনে বিশেষ ছাড় দেয়া হয় ভাড়ায়। বাংলাদেশে বাস মালিকরা যেন রক্তচোষা ড্রাগন 

যদি পথে চলাচল অনেক আনন্দদায়ক।  কিন্তু সেখানেও চাহিদার তুলনায় জলযানের সংখ্যা অপ্রতুল। নিরাপত্তার অভাব আছে। আশাকরি চৌকষ নৌমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবারে নৌ যাত্রা সাচ্ছদ হবে। আগামী ঈদ থেকেই দক্ষিন নৌ যাতায়াতের উপর চাপ অনেক কমে যাবে। 

আমি ধনী,বিলাসীদের প্রসঙ্গ অনছি না। সীমিত সংখ্যক মানুষ বিমানে যাতায়াত করবে, কেউ কেউ আবার চার্টার করে হেলিকোপটার নিয়ে গ্রামে যাবেন। জাকাত ফিতরা বিতরণের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন। কেউ কেউ আবার পরিবার সহ ব্যাংকক,সিঙ্গাপুর, দুবাই, কুলালামপুর বিনোদন সফরে যাবেন বলেও জানি। 

খবর বেড়িয়েছে এবার ঈদ উপলক্ষে শুধু কলকাতার উদ্দেশ্যে পাচ লাখের উপর মানুষ ভ্রমন করবে। কলকাতার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পুজাপার্বনের চেয়ে ঈদে সম্ভবত বেশী ব্যাবসা করে। বাংলাদেশের উচ্চবিত্তবানদের অপেক্ষা করে।

এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ,বিশেষত ঢাকা বাসী নিরাপদে- আনন্দে পরিবার পরিজন সহ ঈদ পালন করুন। দূর পরবাশ থেকে এ কামনা করছি। ঈদ মুবারক।


শেয়ার করুন