৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০১:৫৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলঙ্কার’
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১২-২০২২
‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলঙ্কার’ লিওনেল মেসি


সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির (এলএম টেন) কাছে ফুটবল বিশ্বকাপের অধরা সোনার ট্রফি অবশেষে ধরা দিলো। জানি, নানাকারণে কেউ ব্রাজিল, কেউ আর্জেন্টিনা আবার কেউ বা হয়তো ফ্রান্স বা ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরেছিলেন এবারের কাতার বিশ্বকাপে। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের বাঁধা বিন্ধাচল পেরিয়ে কাতারের মরুর বুকে এবারের বিশ্বকাপের সেরা দুই দল লুসাইল স্টেডিয়াম পৌঁছলো। বিশ্বজোড়া ফুটবল পূজারীদের কায়মনো ব্যাককে প্রার্থনা যেন ফুটবল ঈশ্বর ক্ষুদে জাদুকরের হাতে পরম কাঙ্ক্ষিত ট্রফি তুলে দেয়। খেলা শেষে জাদুকরের হাসিমুখ দেখে আনন্দের উচ্ছ্বাসে কেঁদেছে বিশ্ব। বাঁধভাঙা আনন্দ জোয়ারে প্লাবিত ফুটবল জগত, পেলে, ম্যারাডোনার পাশে জ্বলজ্বলে এখন একটি নাম লিওনেল মেসি। ফুটবল জীবনের শেষ সুযোগে অধরা ট্রফি ধরা দিলো যোগ্যতম হাতে। মনে পড়ছে বহুশ্রুত গানের কলি- ‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলঙ্কার।’ 

স্মরণে ছিল এবার জয়ী হলে ফরাসি দলটিও ছুঁয়ে ফেলতো পর পর দুবার বিশ্বকাপ জয়ের সর্বকালের সেরা দল ব্রাজিলের রেকর্ড। গুণে-মানে, কৌশলে, পরিকল্পনায় লিওনেল মেসির ফ্রান্স আর কিলিযান এমবাপ্পের ফ্রান্স দল কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু প্রথমার্ধে মেসির পেনাল্টি থেকে নেয়া গোল আর এঞ্জেল দি মারিয়ার সুযোগসন্ধানী গোলের সুবাদে (২-০) এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার সামনে কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছিল ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যাওয়া ফ্রান্স জেগে উঠলো বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা গোলদাতা এমবাপ্পের জিয়নকাঠির পরশে। পর পর দুটি গোল করে ২-২ সমতা আনলো ফ্রান্স। গোল দুটোর একটি আবার পেনাল্টি থেকে করা। প্রথমার্ধের ম্যাড়ম্যাড়ে খেলা দ্বিতীয়ার্ধে দেখলো সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। 

৯০ মিনিট শেষে একই ধারায় খেলতে থাকা খেলায় যখন মেসি যখন আবারো গোল করে জনপ্রিয় আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিলো অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এখানেই বুঝি খেলার ইতি। কিন্তু সমানে সমানে লড়তে থাকা দুই দলের কেউ হার মানতে রাজি ছিল না। সেই প্রিয়দর্শন চিতার ক্ষিপ্রতায় ছুটে চলা এমবাপ্পে আবারো গোল করে আনলো ৩-৩ সমতা। বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক। গোল্ডেন বুট আর ইতিহাসের পাতার ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের ১৯৬৬ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলা।

কারো হৃদয়ভাঙা টাই ব্রেক।  সত্যি বলতে কি খেলার ধারা অনুযায়ী কোনো দলই হেরে যাওয়া কামনা করিনি, তবুও দৈবাৎ। কেউ জিতবে কেউ হারবে সেটাই সনাতন রীতি। আর্জেন্টিনা গোলকিপার মার্টিনেজ প্রথম শট রুখে দিলো। দ্বিতীয় শট থেকেও গোল বঞ্চিত ওর। ফলাফল টাই ব্রেকে (৪-২) গোলে জয়ী আর্জেন্টিনা। জাদুকরের হাতে সোনার কাপ। চোখে আনন্দ জল, বাঁধভাঙা আনন্দ জোয়ারে ভেসে শেষ হলো স্মৃতিময় বিশ্বকাপ। কাতার সরকারকে অভিনন্দন এযাবৎ কালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য। 

ভাঙলো ভাঙলো মিলন মেলা ভাঙলো। চার বছর বিরতির পর আবারো ফুটবল বিশ্ব মিলিত হবে নতুন করে আনন্দ বিহারে। সে উন্মাদনা ২০২৬ এ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকোর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে। অনেকেই থাকবেন অনেকেই থাকবেন না। এর মধ্যে না থাকার তালিকায় রয়েছেন লিওনেল মেসি (৩৫), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (৩৭), ব্যালন ডি’অর জয়ী করিম বেনজামা (৩৭), লুকা মদ্রিচের (৩৭) মতো খেলোয়াড়ও। বিতর্ক এখনো আবার নতুন করে শুরু। মেসি খেলবেন কী খেলবেন না। ২০২৬ এ তার বয়সের (৩৯ বছর হবে) ভারে ন্যুয়ে পড়া মেসি নাও খেলতে পারেন, যেমনটা শোনা গিয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপের পরও। মদ্রিচের না খেলা প্রায় নিশ্চিত। যেমনটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও। বিশ্ব সবসময়ই অপেক্ষা থাকে নতুন কারোর। যেমনটা কিলিয়ান এমবাপ্পে। মেসি, ক্রিশ্চিয়ান রোনালদোর পর কে আসবেন সেটা নিয়ে একটা হাহাকার পরে গিয়েছিল। সে স্থানটা পূরণ করে ফেলেছেন এ ফরাসি ফরোয়ার্ড। অনেকের ধারণা ফুটবল বিশ্বের অনেক সেরা তারকাও ছাড়িয়ে যাবেন তিনি। কারণ ইতিমধ্যে ১৯ বছর বয়সে ছুঁয়েছেন বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় আসরে গোল্ডেন বুট ও ফাইনালে হ্যাটট্রিক করার দুর্লভ অর্জনও তার ঝুলিতে। অসাধারণ ফুটবল খেলেন। 

তার প্রধান অস্ত্র ক্ষিপ্রতা ও নিখুঁত নিশানা। এ আসরে যেভাবে ফ্রান্সকে দু’দুবার সমতায় নিয়ে এসেছেন, তাতে তার চোখে মুখে কোনো অস্বাভাবিক পরিলক্ষিত হয়নি। মনে হয়েছে নরমাল খেলাটাই খেলেছেন অসাধারণভাবে। ফাইনালের পর কেঁদেছেন। জয় না পাওয়ায়। ট্রফি ধরে রাখতে না পারায়। তার জন্য মাঠে নেমে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। মিশেল প্লাতিনি। সান্ত¦Íনা দিতে ছাড়েননি আর্জেন্টিনার দলের অনেক খেলোয়াড়ও। মেসি তো তার সহযোগীই। তবে জিনেদিন জিদানের যোগ্য উত্তরসূরি যতোদিন যাচ্ছে, ততো পরিণত হচ্ছেন। সবে শুরু তার। কোথায় যাবেন এমবাপ্পে সে নিশানা নিয়ে ইতিমধ্যে ফুটবল বিশ্লেষকদের ঘুম হারাম হতে চলেছে। সব মিলিয়ে প্রার্থনা জয় হোক সুন্দর ফুটবলের। জয় হোক আগামীর তারকাদের।  

শেয়ার করুন