২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:১৬:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রাজপথে ‘গণবিপ্লবের’ হুঁশিয়ারি মির্জা ফখরুলের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৮-২০২৩
রাজপথে ‘গণবিপ্লবের’ হুঁশিয়ারি মির্জা ফখরুলের বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথে ‘গণবিপ্লবের’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাড্ডায় গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘এই গণমিছিল কেনো? একটাই দাবি.. শেখ হাসিনার পদত্যাগ… এক দফা এক দাবি… এটা জোরে বলতে হবে। এটাকে গগণবিদারি করতে হবে, এটাকে গণভবনে পৌঁছাতে হবে, এটাকে বঙ্গভবনে পৌঁছাতে হবে।”

‘‘এখানে সকলকে বলছি, আসুন, আমরা যে নতুন যুদ্ধ শুরু করেছি, যে নতুন লড়াই শুরু করেছি সেই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হওয়ার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাই…এই গণবিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আবার তাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই  যে, তোমাদের দিন শেষ, পদত্যাগ করো।”

নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের নেতা (তারেক রহমান) কী বলেছেন? যদি কথা শুনে ভালো… মানে মানে শোন ভালো… পদত্যাগ করো। আর তা না হলে ফয়সালা হবে কোথায়?”

এই সময়ে নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘রাজপথে রাজপথে’।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আর কী বলেছেন- টেক ব্যাক বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেখেছেন।”

‘‘আসুন সামনে দিকে এগিয়ে যাই। এখন থামব না আমাদের লক্ষ্য অর্জন করা পর্যন্ত, আমাদের সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, হাসিনার পদত্যাগ না দেখা পর্যন্ত আমরা থামব না, আমরা এগিয়ে যাবো।”

বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে গণমিছিল শুরুর আগে খোলা ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপি মহাসচিব বক্তব্য রাখেন। 

‘আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’

আওয়ামী লীগ সরকার সংসদ, প্রশাসন, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সবেচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে আমাদের বিচার বিভাগকে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদেরকে কারাগারে পাঠায়, আটকে দেয়, সাজা দেয়। তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে? যাবে না।”

‘‘যত কারাগারে ঢুকাও, যতই জেলে দাও, যতই নির্যাতন করো, যতই টিয়ারগ্যাস মারো, যতই লাঠিচার্জ করো… এই বাংলাদেশের এই মানুষকে এবার তাদের গণতন্ত্রের অধিকার আদায় না করে তারা ঘরে ফিরে যাবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তাই পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে, নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।”

‘‘এবার আমাদের লড়াই জীবনপণ লড়াই। কোনো ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম-কারাগার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।”

‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলতে দেয়া হবে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই নির্বাচন কমিশন লজ্জাহীন এরা। তাদের অধীনে কী নির্বাচনে যাবো? দুইটা দলকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে, নিবন্ধন দিয়েছে…কেউ তাদের চিনে না। আপনারা কেউ চিনেন, চিনেন?”

এই সময়ে নেতা-কর্মীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘কেনো (দুইটা দলকে নিবন্ধন) দিয়েছে? যে এদেরকে দিয়ে তারা একটা নির্বাচন নির্বাচন খেলা করবে … তাই না। এই খেলা এবার খেলতে দেয়া হবে না, সেই লেখা খেলতে দেয়া হবে না।”

‘‘এরা (সরকার) মনে করেছে এভাবে ক্যারিকাচার করে, ডিগবাজী খেয়ে খেয়ে ’১৪ ও ’১৮’র মতো আবার নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায় যাবে। দেশের মানুষ কি যেতে দেবে? আর যেতে দেবে না।”

ফখরুল বলেন, ‘‘দেশের মানুষ এখন একতাবদ্ধ হয়েছে। দেশে ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবী, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত রাজনৈতিক সংগঠন, সকল দেশপ্রেমিক মানুষের এখন একটাই আওয়াজ- 

এই অবৈধ, ফ্যাসিবাদী একনায়ক শেখ হাসিনা সরকার নিপাত যাক।”

‘‘এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ তাদের অধিকার রক্ষার জন্য একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে চেতনা তা বাস্তবায়নের জন্য, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্যে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, যে গণতন্ত্র পেয়েছি তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবার আমাদের লড়াই জীবনপণ লড়াই। ভয়ভীতি-জেল-জুলুম-কারাগার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ভয়াবহ দানব, যারা আমাদের সব অর্জন শেষ করে দিচ্ছে তাদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার গঠন করতে সক্ষম হবো।”

‘৩১ দফায় নতুন রাষ্ট্রের চিন্তা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দিয়েছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। যেখানে আমরা একটা নতুন রাষ্ট্র তৈরি করব, যেখানে আমরা মানুষ যেন সম্মানের সঙ্গে, ইজ্জতের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করব। সবাই দুই বেলা খেতে পারে তার ব্যবস্থা করব, আমার যুবক ছেলেরা যাতে চাকরি পায় তার ব্যবস্থা করব, সবাই যেন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে তার ব্যবস্থা করব।”

রাজধানীতে বিএনপির উদ্যোগে দুটি গণমিছিল হয়। একটি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেলের কাছে এবং অন্যটি মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে কমলাপুর স্টেডিয়ামের কাছ থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত হয়।

বিএনপি মহাসচিব বাড্ডার গণমিছিলে এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দক্ষিণের গণমিছিলে নেতৃত্বে দেন। দুটি গণমিছিলে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়।

বিএনপি ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাব, ১২ দলীয় জোট বিজয় নগর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন, এলডিপি তেজগাঁও এফডিসির কাছে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগ, গণঅধিকার পরিষদ (নূর) ফকিরাপুল কালভার্ট রোড এবং এনডিএম মালিবাগ থেকে গণমিছিল করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে বিএনপিসহ সমমনাজোটগুলো ‘এক দফা’র আন্দোলন শুরু করে। তার অংশ হিসেবে তারা ১৮ ও ১৯ জুলাই সকল মহানগর ও জেলা সদরে পদযাত্রা, ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি করেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল। টানা ছয় মাসের বেশি সময় তারা ঢাকাসহ সারাদেশে যুগপৎভাবে পদযাত্রা, গণমিছিল, সমাবেশের বিভিন্ন কর্মসূচি করেছে।

‘মহানগর উত্তর’

বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।  

বাড্ডার থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ কিলোমিটারের এই পথে নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে সরকার বিরোধী স্লোগান দেয়। বিকেল ৪টায় গণমিছিলটি শুরু হয়ে আবুল হোটেলের কাছে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়। এই গণমিছিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আববুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, শাহাজাদা সম্রাট, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্যামা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

‘মহানগর দক্ষিণ’

কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের সামনে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘এদেশের নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না হবে না, হতে দেয়া হবে না… এটা আমাদের সাফ কথা।”

সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে জনগণ মাঠে সোচ্চার হয়েছে উল্লেখ করে রাজপথেই ওদের পতন ঘটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

সমাবেশ শেষে গণমিছিলটি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সবুজবাগ, খিলগাঁও সড়ক দিয়ে মালিবাগ রেল গেইটের সামনে এসে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৬টায়। এই মিছিলে মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, জয়নাল আবেদিন ভিপি জয়নাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, ইশরাক হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

শেয়ার করুন