২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪৬:৩১ পূর্বাহ্ন


শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে আ. লীগ নেতাকর্মীরা নার্ভাস
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে আ. লীগ নেতাকর্মীরা নার্ভাস


একের পর এক শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও মন্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একিই সঙ্গে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী দলটি সর্ম্পকে দেশে বিদেশে জনমনেও নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশিও সর্বস্তরের জনগণ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এমন বক্তব্যে নার্ভাস হয়ে পড়ছে। এসব তথ্য মিলেছে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকমীরা পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সাথে একান্তে কথা বলে।

কি বলা হচ্ছে শীর্ষ থেকে

মাত্র কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে। এমন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি তথ্য দেন যে, গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে যাতে গণতান্ত্রিক কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। অগণতান্ত্রিক ধারা। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ’আর সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাবেদারি করে। পদলেহন করে।’ জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে আনা ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাব ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের সময়ে বিবিসির ইয়ালদা হাকিমের সাথে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলেই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তিনি এসময় দাবি করেছেন ওই সাক্ষাৎকারে যে, গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। 

কেন চায় না আমেরিকা

এধরনের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে ধরেন কেনো কি কারণে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে তার বিরুদ্ধে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলো। এব্যাপারে তিনি বলে বসেন আমেরিকা সেন্ট মার্টিন চায়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায় এমনটি দাবি করেছেন ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও। এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একিই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তবে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের কোনও ভূখণ্ডের ওপর দাবি করেনি তারা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। আর এসব সব বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যের মাঝে বিএনপি নেতারা বলছেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোটের বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। এমন আলোচনার ঝড় যখন বইছে তখনে তুলে ধরা হয় যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। আর তা হলে এই অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এমন মন্তব্য উঠে আসে আওয়ামী লীগের একেবারে শীর্ষ থেকে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। 

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ও আশঙ্কা নিয়ে তোলপাড়

একেবাবে শীর্ষ থেকে যখন বলেই ফেলা হচ্ছে পৃথিবীর ক্ষমতাধররা চাচ্ছেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনকে সরিয়ে দিতে তখন তোলপাড় করা বক্তব্য দিয়ে দিলেন খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে, এমন মন্তব্য করেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে বসেন, ‘নির্বাচনে শেখ হাসিনা হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। গরিব মানুষদের বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে জেতাতে হবে।’ এপ্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা খালি হাতে লড়ব। তবে আগুন হাতে এলে আমরা তা শক্ত হাতে প্রতিহত করব। সম্প্রতি আরেক জায়গায় বলেন, ‘বিএনপি সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বড় ঠিকানা এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তারা আবারো ক্ষমতায় আসলে গণতন্ত্র গিলে খাবে, এ দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে। কোনো ভাল মানুষকে তারা রাখবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্বকে তারা নিশ্চিহ্ন করে দেবে। বিএনপির হাতে ক্ষমতায় গেলে, তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তাান বানাবে নিশ্চিত।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলতে তারেক রহমান যেকোনো সময় খালেদা জিয়াকে মেরে ফেলতে পারেন। 

কি বলেছে বিরোধী দল

এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমেরিকা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকাকে বলেন, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য চরম দায়িত্বহীন, উসকানিমূলক ও আতংক সৃষ্টির প্রয়াস। তিনি মনে করেন সরকার দলের নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত গণআতংক  তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন সরকারি দলের কথাবার্তা তাদের অস্থিরতা ও বেসামাল অবস্থার বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে সরকারি দলের সাধারণ  সম্পাদক  বিরোধী দলসমূহের আন্দোলন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ভুলবার্তা দেওয়ারও প্রয়াস নিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ বেসামাল হয়ে ধারাবাহিকভাবে স্ববিরোধী কথা বলছেন। একদিকে তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ এত শক্তিশালী যে তাদেরকে হারানোর ক্ষমতা কারও নেই, আবার বলছেন বিরোধীরা ক্ষমতায় আসলে এক রাতেই আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যাবে। এসব তাদের চরম  বেসামাল  অবস্থা ও অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রোববার এক আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব- ‘আমরা শেষ হয়ে যাবো’-এই কথাগুলো বলে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখার চেষ্টা করলেও কি আর মনোবল চাঙা হবে? 

দলে ও জনমনে প্রতিক্রিয়া

এদিকে শীর্ষ পর্যায় থেকে এধরনের বক্তব্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ে। কেউ কেউ মনে করেন প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মহলে দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের আগাম তথ্য দিয়ে নেতাকর্মীদেরই সজাগ করে দিচ্ছেন। তিনি মাঠে বার্তা দিতে চান যে দলের কোন্দল সৃষ্টি ও বিভিন্ন বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে সামনের দিনে আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। হতে পারে অতীতের চেয়ে আরো ভয়ঙ্কর। এমন সর্তক বার্তা তিনি সম্প্রতি দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সভাতেও বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোন্দল সৃষ্টিকারীদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নেওয়া তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা নিজ নিজ এলাকার দলীয় কোন্দলের কথা তুলে ধরেছিলেন অনেকে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও অবমূল্যায়ণের অভিযোগ তুলেছেন। আর এজন্য অনেকেই মনে করেন দেশবিরোধী যড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ঠিকই করেছেন। 

তবে তৃণমূল পর্যায়ে অনেকে এই সময়ে দলের শীর্ষদের মুখে বিশেষ করে ওবায়দুল কাদেরের সর্ববেশ বক্তব্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। এব্যাপারে অনেকে মনে করেন দলকে চাঙ্গা রাখতে এধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকমীদের মতে, অতীতে সঙ্কটকালীন সময়ের অনেক সমস্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ম্যানেজ করে ফেলেছেন তার রাজনৈতিক ও কূটনৈতক প্রজ্ঞায়। কিন্তু বর্তমানে দলের কেউ যদি বলে বসেন যে কেউ বা কোনো দল ক্ষমতায় এলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে- তাহলে মাঠ পর্যায়ে কি বার্তা যায়? অনেকে মনে করেন এটি মাঠে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। কারো কারো বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন মহলের কোনো সমস্যা নিশ্চয়ই আছে। আছে কোনো খবর- তা না হলে- এমন করে ক্ষমতায় এলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে- এমন বক্তব্য দেয়া হবে কেনো? এমন প্রশ্নই এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। 

শেয়ার করুন