০৪ মে ২০১২, শনিবার, ০১:১৭:৩৬ পূর্বাহ্ন


দেশকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবো
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবো নজরুল ইসলাম মঞ্জু


খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, খুলনা বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ-কষ্ট-বেদনা তো আছেই। আমরা এসব নিয়ে এখনো স্টাডি করছি। তবে দল ইলেকশন না করলে দলের বাইরে গিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবো? আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোটের তারিখ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৫ মে। আর খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২১ জুন। এসব ভোট হবে ইভিএমে। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র পদে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহের কথা শোনা যাচ্ছে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম মঞ্জু খোলামেলা কথা বলেন দেশ পত্রিকার সঙ্গে।  

নজরুল ইসলাম মঞ্জু ১৯৯২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একযুগ ছিলেন সভাপতি। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট থেকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মঞ্জু। কিন্তু ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর তাকে বাদ দিয়ে মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ১২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন মঞ্জু। এর পরদিন শোকজ এবং ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ক্ষোভ, কষ্ট আর অপমানে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মঞ্জুর অনুসারী সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এমনকি গত বছর ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও সেখানে রাখা হয়নি তাকে। কেউ কেউ বলছেন দলের এমন সিদ্ধান্তের নীরব প্রতিবাদ তিনি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েই দেখাতে চান। সে কারণে তার অবস্থান জানান দিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। 

দেশ : আপনি কি আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে চান?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : না না, এটা ঠিক না। দল ইলেকশন না করলে দলের বাইরে গিয়ে কীভাবে নির্বাচন করবো বলেন? 

দেশ : না বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে আপনি স্বতন্ত্র পার্টি হচ্ছেন?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : না সেটাতো তারা একটি প্রশ্নবোধকভাবে উল্লেখ করেছে (একটু হাসি দিয়ে)

দেশ : না, তাহলে কি ধরে নেবো আপনি নির্বাচন করছেন না? 

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : না এখনো নির্বাচন করবো বলে সিদ্ধান্ত নেয়নি (একটু ইতস্তত করে)। এটা নিয়ে আরো পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। দল ইলেকশন করবে কি-না। তবে একটি জেনারেল সিদ্ধান্ত আছে যে এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু এটা তো স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। একটা বড় সিটি করপোরশেনের নির্বাচন। এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক তা জনগণ চায়। আর তাছাড়া পার্টির নেতাকর্মীরাও আছেন, যারা চাপ দিচ্ছেন..

দেশ : তাহলে কি বলবো দল না চাইলে স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়ানোর ইচ্ছা আছে আপনার?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : না, মানে এখনো আমরা অবজার্ভ করছি (আবারো ইতস্তত বোধ..)। তাছাড়া খুলনায় দলের মধ্যে বিভক্তি তো আছে। খুলনা বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ-ব্যথা-বেদনা তো আছেই। আমরা এসব নিয়ে এখনো স্টাডি করছি। তবে দল নির্বাচনে না গেলে দলের বাইরে আমরা যাবো না (হালকাভাবে না বললেন)। অপেক্ষায় আছি দেখা যাক। 

দেশ : আসলে আপনার বক্তব্য পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না..যাবেন কি যাবেন না বড়ই ডিপ্লোমেটিক উত্তর দিচ্ছেন আপনি।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : দুই রকমই আছে..আচ্ছা ঠিক আছে ক্লিয়ারই বলি..দলের সিদ্ধান্ত মেনেই না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের। এটা ঠিক আমরা দলের বাইরে যাবো না। আরেকটা হচ্ছে দল এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নেয় কি-না।

দেশ : দল আপনার প্রতি অবিচার করেছে, আপনার ত্যাগকে মূল্যই দেয়নি..কানকথা কথা শুনে আপনাদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শোনা যায়। আর এই কারণে আপনারা যারা আছে তারা সেই অভিমান থেকেই এমন সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন যে নির্বাচনে অংশ নেবেন..এটা কি ঠিক?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : হা হা (অট্টহাসি দিয়ে)। অভিমান কি আর..আমাদের তো অসম্মান করা হয়েছে..আমাদের পদচ্যুত করা হয়েছে..নানানভাবে আমাদের অপমান করা হয়েছে।

দেশ : সে বিষটি জানি বলেই বলছি সেকারণেই কি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : দেখেন একটি দলের একটি অঞ্চলকে আমরা সমৃদ্ধ করেছি। আমরা হচ্ছি খুলনায় দলের প্রতিষ্ঠাতা..তিলে তিলে এখানে বিএনপিকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু দল আমাদের যে ব্যবহার করেছে..তাই বলবো কোনো অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। আমরা খুব অসম্মানিত হয়েছি।  আমরা আশা করবো যে, দল আমাদের মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে আনবে। 

দেশ : আপনারা কি মনে করেন দল আমাদেরকে সম্মান দিয়ে ফিরিয়ে আনবে? এটা আশা করেন?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : অবশ্যই। কারণ দল সেদিকেই যাবে। কারণ খুলনা তো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিভাগীয় শহর। এখানে যদি স্ট্যান্ডার্ড লিডারশিপের কাছে দল না থাকে, তাহলে যে ধরনের প্রতিক্রিয়ার হওয়ার কথা তাতো হবেই।

দেশ : আচ্ছা, দলের বাইরে গিয়ে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে উত্তর দেন। এ সরকারের অধীনে কি নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : না না, নিরপেক্ষ তো হবেই না। এই খুলনায় ভোট ডাকাতি করেই বা খুলনা মডেলে ভোট ডাকাতি করেই এ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। এই প্রসেসটাই শুরু হয়েছে খুলনা থেকে। এ অঞ্চলে তো বিএনপি পরাজিত হওয়ার কথাই ছিল না। বিএনপিকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

দেশ : কিন্তু আপনার ভাষায় আপনাদের মতো নেতাকর্মীদের যদি দল অবহেলা বা অসম্মানিত করে সেক্ষেত্রে কি বিএনপি পারবে খুলনায় বিএনপির শক্ত অবস্থান বজায় রাখতে?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : না, এটাতো ঠিক যে এটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন। এটাকে আন্দোলনে অংশ হিসাবে নেয়..জাতীয় নির্বাচন বাদ দেন..দল এটাকে আন্দোলনে অংশ হিসাবে নিতে পারে। দেখি বর্তমান নির্বাচন কমিশন কেমন নির্বাচন করে। ২০১৮ সালের পরে তো এ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাইনি..সেক্ষেত্রে পাঁচ বছরের মাথায় এসে দেখানো উচিত ছিল যে, কেমন করে তারা? এ সরকারের অধীনে শেষ টেস্ট কেস হিসেবে নিতে পারতো বিএনপি। 

দেশ : আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম যে, আপনাদেরকে দল যদি মূল্যায়ন না করে সেক্ষেত্রে খুলনা কি বিএিনপির ঘাঁটি হিসেবে থাকবে?

নজরুল ইসলাম মঞ্জু :  না না, পারবে না (অত্যন্ত জোর দিয়ে) । কোনোভাইে পারবে না। এই শহরে তো দেশের প্রধানমন্ত্রীর চার ভাই আছেন। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে কীভাবে দল করেছি তাতো সবাই জানেন। 

দেশ : এর অর্থ আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন যে সরকারি দলের এমন শক্ত অবস্থানকে আপনারাই রাজনৈতিকভাবে রুখে দিতে পারেন এবং বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে ধরে রাখতে পারবেন? খুলনায় বিএনপির শক্ত অবস্থানের পেছনে আপনাদেরই অবদান- এই তো বোঝাতে চান।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু : অবশ্যই। 

শেয়ার করুন