২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:৩৯:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অহিংস শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই বিএনপি
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
অহিংস শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই বিএনপি


রাজনীতির মাঠে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি বরং এতে অংশ না নেয়া এবং ভোট দিতে কেউ যেন কেন্দ্রে না যায়, সে জন্য লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন তথা ব্যাপক গণসংযোগ কর্মসূচি করেছে বিএনপি। নির্বাচনটা যথাযথ সময়ে হয়ে যাবার পর অনেকটাই নিস্তব্দ হয়ে যায় বিরোধী দলের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মত সরকার গঠন নিয়ে ব্যস্ত এক দিকে, অন্যদিকে নির্বাচনে না যাওয়া বিরোধীদের পিনপতন নিরাবতা। অবশ্য বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি করেই নির্বাচনটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। ফলে এ ধারাতে নির্বাচন শেষে রাজনীতিটা কী হবে সেটা নিয়ে কিছুটা ছিল দ্বিধাদ্বন্দ্ব। 

নতুন সরকার বা পুরানো সরকার নতুন করে সবকিছু গঠন করার পর এক এক করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারামুক্তি দেয়ার পর আবারও ফ্রন্টলাইনে চলে আসে সরকার বিরোধী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি।

বিএনপি মহাসচিবকে কেন্দ্র করেই উৎসুক ছিলেন সবাই। কী বলেন তিনি। কিন্তু মুখ খুলেননি। কারামুক্তি হওয়ার পর একবার মাত্র তিনি পিটার হাসের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছিলেন। লাঠি ভর দিয়ে এক ছবিতে পোজ দিতেও দেখা যায়। এরপর তিনি চলে যান সোজা সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে। 

অনেকেই মনে করেন সিঙ্গাপুরেই ঠিক হয় বিরোধী দলের আন্দোলনে কী হবে পরবর্তি পদক্ষেপ। অবশ্য যাবার আগে মির্জা ফখরুল কোনোভাবেই মুখ খুলেননি। বলেছেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ফিরে দলের অবস্থান জানাবেন আন্দোলন কিভাবে কী হবে। 

সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে তিনি অংশ নিলেন কূটনৈতিকদের নিয়ে ইফতার মাহফিলে। সেখানেই তিনি কূটনৈতিকদের জানিয়েছেন বিএনপি কী করবে। সেখানে তিনি ইফতারপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “অধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনকে আমরা গভীরভাবে মূল্যায়ন করি-যার মধ্য দিয়ে প্রকৃতভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে। যতক্ষণ না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এটা অর্জন করতে না পারি, ততক্ষণ জনগণের শান্তিপূর্ণ ও অসহিংস আন্দোলন চলবে।” মির্জা ফখরুলের এ বক্তব্য ছিল ইংরেজীতে ও লিখিত বক্তব্যে। গত ২৪ মার্চ রোববার ওই অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ, এনডিআই, আইআরআই এবং ৩৮টি দেশের প্রতিনিধিগণ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন- যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন ল্যাফেইব, পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্দির সিম্পসন, জার্মান অ্যাম্বাসেডর আখিম ট্রোসটার, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ প্রমুখ। 

এ ইফতার মাহফিলে শুধুই যে বিএনপি ও কূটনৈতিকবৃন্দই ছিলেন তা নয়। ছিলেন বিগত সময়ে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বা সমমনা দলসমূহের নেতৃবৃন্দ। 

এর আগে স্বাগত বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আয়োজিত ইফতারে অংশগ্রহণ করায় আগত কূটনীতিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বিএনপি এ নেতা কুটনীতিবিদদের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রেশ টেনে বলেন, “বাংলাদেশ গভীরভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটকাল অতিক্রম করছে। রাষ্ট্র আবারও ফ্যাসিবাদী শাসনের কবলে পড়েছে। বিশ্ববাসী জানেন, গত ৭ জানুয়ারি (২০২৪) যা হয়েছে, তা কোনও নির্বাচন নয়। বরং জাতির গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাকে অপমান করা হয়েছে।” 

মূলত মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের মধ্যদিয়ে বিএনপি যে সেই পুরানো ধারার আন্দোলনেই বহাল থাকলো সেটার প্রকাশ মিললো। যা আরেকটু ক্লিয়ার করলে, ‘সরকারের পদত্যাগ করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে’ এমনটা। আর এ দাবিতে বিএনপি এবারও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে কূটনৈতিকরা আকুন্ঠ সাপোর্টও তিনি আশাপোষণ করেছেন, যতক্ষন না বিএনপি ও সমমনা দলসমূহ নির্দিষ্ট করা ওই দাবি পূরনে সমার্থ না হয়। 

বিএনপির এ ইফতারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু,শামা ওবায়েদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। 

সিঙ্গাপুরে শুধু মির্জা ফখরুলই নন, গিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদেরও। এমনকি সেসময় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশ পায়। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন ছিল, ওই ত্রয়ী কোনো বৈঠকে বসেছিল কি না। কিন্তু ওবায়দুল কাদের অস্বীকার করেন বিষয়টা। তিনি বলেন, শুনেছি তারাও সেখানে গিয়েছিল। একই সময় তার কাছে প্রশ্ন ছিল মধ্যবর্তি নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গ। তিনি বিএনপির এমন দাবি (যদি থাকে) সেটাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, মধ্যবর্তি নির্বাচন মামাবাড়ীর আবদার। অবশ্য মধ্যবর্তি নির্বাচন প্রসঙ্গ ভাসতে শুরু করেছিল নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চক্ষমতাধর প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের পর থেকেই! 

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে মুখ খুললো বিএনপি 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বললেও বিএনপি এ ব্যাপারে নিরাবতা পালন করেই আসছিল। ইসরায়ের কর্তৃক নির্যাতিত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বিএনপি কেন নিশ্চুপ ছিল সেটা ক্লিয়ার না করলেও বিএনপির সে সময়ের বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য মনক্ষুন্ন হতে পারে এমনটা কাজ করছিল বলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে। এবার সে বিষয় ক্লিয়ার করলো তারা। 

কূটনৈতিকদের ইফতার অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক হত্যাকা-ের বিষয়ে বিএনপি গভীরভাবে অবহিত বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি উল্লেখ করেন, দুই রাষ্ট্রের কৌশলেই এই সংকটের সমাধান হতে পারে। 

এদিকে পবিত্র মাহে রমজানে ইফতার অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। এভাবে ইফতার অনুষ্ঠান না করে বরং ওই অর্থ বঞ্চিতদের মাঝে বিতরণের সিদ্ধান্ত দলটির। সরকারিভাবেও এভাবে আয়োজন করে অর্থ অপচয় না করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে বিএনপি অন্যসব বারের মত ইফতার মাহফিল আয়োজন করে চলছে।

শেয়ার করুন