২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:০৬:২১ পূর্বাহ্ন


রিডা ও টেক্সাস গভর্নরের মাইগ্রেন্ট বিতাড়ন
মূল টার্গেট প্রতিযোগিতা থেকে ট্রাম্পের অপসারণ
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
মূল টার্গেট প্রতিযোগিতা থেকে ট্রাম্পের অপসারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প


টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ এবোট এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি সেন্টিস ইমিগ্রেশন নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির করে দৃষ্টি আকর্ষণের চমক সৃষ্টি করেছে। এই স্ট্যান্টবাজি দেখতে শুনতে কিছুটা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি। টেক্সাস ও ফ্লোরিডার এই রিপাবলিকান গভর্নর দুজন আমেরিকার সীমান্ত স্টেট থেকে বাস ভর্তি ও প্লেনভর্তি করে মাইগ্রেন্টদের নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো ও মার্থার ভাইন ইয়ার্ডে পাঠাচ্ছেন। 

চুপিসারে দুটি প্লেনে করে ৫০ জন মাইগ্রেন্টকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ধনীদের জন্য নির্মিত ম্যাসাচুসেটস এর সমুদ্র তীরের ছিটমহলে নামিয়ে দেয়া হয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে আশ্চর্য ঠেকেছে। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি সন্টিস এই চমক সৃষ্টি করেছেন বলে দাবি করেন। তার স্ট্যান্টবাজি টেক্সাস গভর্নর এবোটকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বাসে ভর্তি করে গত এপ্রিল মাস থেকে মাইগ্রেন্টদের ওয়াশিংটন ডিসি ও নিউইয়র্কে পাঠাচ্ছেন। গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবারে এসাইলাম আবেদনকারী মাইগ্রেন্টদের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের যুক্তরাষ্ট্রের লেট অবজারভেটরীর বাড়িতে ফেলে এসেছেন। ইমিগ্রেশন এর বিরোধী হকিশ এডভোকেটরা এনবিসির মিট দ্যা প্রেসে বাইডেন বর্তমানে বর্ডার ‘নিরাপদ’ বলে মন্তব্য করায় এবোট এই ইমিগ্র্যান্টদের আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গভর্নর ডি সেন্টিস যেসব মাইগ্রেন্টদের ভাইন ইয়ার্ডে পাঠিয়েছে, তাদের তিনি নিয়েছেন টেক্সাস থেকে, ফ্লোরিডা থেকে নয়। কিন্তু মাইগ্রেন্টরা বুঝতে পারেনি তাদের কেন প্লেনে তোলা হচ্ছে। শুরুতে তারা এই বিমান ভ্রমণের প্রশংসা করেছে। কিন্তু শীঘ্রই তারা বুঝতে পারে যা হবার তা নয়। এইসব দুস্থ মাইগ্রেন্টরা ভাইন ইয়ার্ডে গিয়ে বিপদেই পড়েছে। 

ডি সেন্টিসের এই নষ্ট উদ্যোগ কি বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে? অনেকে এতে দ্বিমত পোষণ করেন, তারা বলেন, আপাতত ডি সেন্টিসের উদ্দেশ্য আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সাথে কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত ভোটের জরিপে এগিয়ে থাকলেও সম্প্রতি পিছিয়ে যায়। ডি সেন্টিসের বিরুদ্ধে ট্রাম্প সরাসরি কিছু না বললেও ডি সেন্টিস প্রাইমারীর জন্য প্রস্তুতি সকলের চোখে পড়ার মতো। সে কারণে ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেন, যে কোনভাবে হোক তিনি ২০২৪ সালে প্রার্থী হচ্ছেন। তার সমর্থক আছে, অর্থ আছে, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ডি সেন্টিসের এতে টনক নড়ে। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের ক্যাম্পে ভাঙন ধরেছে কিছুটা, এখন লিন্ডসে গ্রাহাম তার ফফর দালালি করলেও অন্যরা তাকে ধীরে ধীরে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে তার বিরদ্ধে সোচ্চার। আর এই সুযোগে ডি সেন্টি ট্রাম্পের ছিটকে পড়া সমর্থকদের নিজের দিকে আনতে এই চমকের সৃষ্টি করেছে বলে অনেকের ধারণা। তবে ডি সেন্টিস ফ্লোরিডার লোকদের ক্ষ্যাপাতে চায় বলে প্লেনের মধ্যে তুলেছে টেক্সাসের মাইগ্রেন্টদের। বুদ্ধি আছে বটে। কারণ ফ্লোরিডাতে তিনি যদি প্রাইমারীতে লড়েন তাহলে ট্রাম্পের সাথে যদি জিততে না পারেন তার ভবিষ্যত অন্ধকার। তাই এই খেলাটা বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে হলেও টার্গেট কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থকরা। এক ডিলে দুই পাখি শিকার। কিন্তু তার বেহুদা চমক আমেরিকার এলিট সমাজে বেসামাল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। 

এসব মাইগ্রেন্টরা এদেশে অবৈধ নয়। তারা এখানে এসাইলাম চেয়েছেন। ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের মামলা প্রসেস করে তাদেরকে কোর্টে প্রেরণ করেছে। তারা সকলেই কোর্ট ডেটের অপেক্ষায় আছে। কাজেই তারা অবৈধ নয়।

কোথা থেকে মাইগ্রেন্টরা আসছেন? যদিও এই সব মাইগ্রেন্টরা মেক্সিকোর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসেছে আসলে তারা এসেছে সেন্ট্রাল আমেরিকার দারিদ্র্য ও ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও তাদের আসা বৃদ্ধি পেয়েছে। এশিয়া থেকে যদিও আসছে তাদের সংখ্যা বড়ই নগণ্য। তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে। এশিয়া থেকে আসছে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান থেকে বেশি। বাংলাদেশের অনেকেই এই প্রসেসের মধ্যে আছে। 

তবে যাদের টেক্সাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে তাদের জোর করে যানবাহনে তোলা হচ্ছে না। এসাইলাম যারা চেয়েছেন তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় গাড়িতে ও প্লেনে উঠছে। তারা ফ্রি রাইড নিচ্ছেন উন্নত জীবনের আশায়। কারণ গত ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে দক্ষিণ সীমান্তে ৭৫০ জন মাইগ্রেন্ট এর মৃত্যু হয়। আর এখন তারা ফ্রি রাইড পেয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখে। তাদের অনেকেই বলেন, তারা স্বপ্নের আসায় বাসে চড়েছে। কিন্তু এখন সবই গরল বেল। অনেকে অবশ্য শিকাগো ও নিউইয়র্কে তাদের আত্মীয়দের খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু তারা ১৮০ দিন পর্যন্ত বৈধভাবে কাজ করতে পারে না। 

এসাইলামের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া দীর্ঘদিনের ব্যাপার। আর এর মধ্যে তাদের কঠিন অবস্থার মধ্যে যেতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে গড়ে ইমিগ্রেশন মামলা নিষ্পত্তিতে ১১১০ দিন সময় লাগে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ৬ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নিউইয়র্ক এসাইলাম অফিসে ইন্টারভিউ হওয়ার পর মাসের পর মাস রেজাল্ট আটকিয়ে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরে এসাইলাম আবেদনের মাত্র ৫০ শতাংশ অনুমোদন লাভ করেছে। ট্রাম্পের আমলে ৭০ শতাংশ আবেদন নাকচ হয়। এ বছর দক্ষিণ সীমান্তে ২০ লাখ লোক প্রবেশের চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও বর্ডার প্রটেকশন এই রিপোর্ট দিয়েছে। অবশ্য অনেকে একাধিকবার প্রবেশের চেষ্টা করেন। অন্যদের ট্রাম্প সময়ের কোভিড-১৯ পলিসিতে মেক্সিকোতে রাখা হয়। 

নিউইয়র্ক, ইলিনয় ও ওয়াশিংটন ডিসিতে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করেছে মাইগ্রেন্ট ইস্যু মোকাবিলার জন্য। এখন কিভাবে মাইগ্রেন্ট আসছে তার কোন হিসেব নেই। এ ব্যাপারে টেক্সাস, আরিজোনা ও ফ্লোরিডা থেকে হুশিয়ারি সংকেত পেতে চায়। 

টেক্সাস ১২ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে ৯০০০ মাইগ্রেন্টকে উত্তরের নগরীগুলোতে পাঠিয়েছে। সর্বমোট বাস ও এখন প্লেনে হাজার হাজার মাইগ্রেন্ট আসছে। কিন্তু বর্তমানে ৭ লাখ এসাইলাম আবেদন স্থগিত আছে। আর বিচার বিভাগ ধীরে সুস্থে এসব বিষয় মোকাবেলা করছে। এবোট এর আসন্ন নির্বাচন ক্লান্তিকালে। ডেমোক্রেট প্রার্থী ও রুরকের কাছে হারার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ডিসেন্টির ট্রাম্প এর সাথে পাল্লা দেবার মনোভাব। চলছে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। ট্রাম্প ছাড় দেওয়ার পাত্র নয়। ডিসেন্টিও কম যায় না তাই প্রমাণের লড়াই চলছে মাইগ্রেন্ট সরিয়ে। যত না এই কৌশলগত ইমিগ্র্যান্ট অপসারণ বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে তার চেয়ে বেশি নিজেদের মধ্যে ঝাপটা ঝাপটি। বিশেষ করে টাম্পের অপসারণ প্রতিযোগিতা থেকে।  

শেয়ার করুন