২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:২৮:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


উত্তপ্ত পরিস্থিতি : পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, মিছিল মিটিং
এবারও প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা হাইজ্যাকের পথে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
এবারও প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা হাইজ্যাকের পথে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের র‌্যালি (এমদাদ)


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং সন্ধ্যায় নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনাকে নিয়ে নিউইয়র্কে বর্তমানে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে। তারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে এবং মিছিল-মিটিং করছেন। সেই সব মিছিল মিটিংয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। বিএনপির প্রয়োজন নেই অশান্তির আগুন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগকে। আবার নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি। সেই বিভক্তিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। একপক্ষ আরেক পক্ষের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন, যা এখথন টক অব দ্য কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র নতুন নয়। তবে এবারের রূপটি একটি ভিন্ন। ঝি দিয়ে মালিককে শাসন করার ব্যবস্থা। মূলত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে বিভক্তি দীর্ঘদিনের। বিভক্তি ছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করেই এই বিভক্তি চরম আকার ধারণ করতো। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আসতেন আব্দুস সোবহান এমপি। তিনিই আগে এসে সবার সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ফলাফল ছিল শূন্য। তারপরই তাকে কেন বারবার সমঝোতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়-এমন প্রশ্ন অনেকের। তার কারণে গত কয়েক বছরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি। গত বছর তাকে হোটেল লবিতে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালও দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঙ্গসংগঠনের কাউকে কাউতে বহিষ্কার আবার কাউকে শোকজ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও তাকে কেন দায়িত্ব দেওয়া হয়? দায়িত্ব কি তাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে দেওয়া হয় না কি তিনি নিজেকে জাহির করার জন্য এসব বিতর্কিত কর্মকা- করেন-এমন প্রশ্ন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিভিক্ত গ্রুপের নেতৃত্বে একাংশে থাকতেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বাধীন অংশ। আরেক অংশের নেতৃত্বে থাকতেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কয়েস, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম বাদশা, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এবং চন্দন দত্তরা। এবার কিন্তু তাদের বিরোধ করতে দেখা যাচ্ছে না। উভয় গ্রুপের বিভক্তির কারণে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা ২০১৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাছ থেকে হাইজ্যাক হয়ে যায়। বিরোধের কারণে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে নো মোর সিদ্দিক, নো মোর সিদ্দিক বলে স্লোগান দেওয়া হয়। সেই স্লোগান দেখে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিরক্ত হয়েছিলেন। নিজেই নাগরিক সংবর্ধনার সভাপতিত্ব করেন এবং সরকারি আমলারা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ২০১৮ সাল থেকেই এই সিলসিলা চলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ সারা বছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, বরফে দাঁড়িয়ে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সামনে প্রতিপক্ষের মার খেয়েও আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যান। তাদের প্রত্যাশা থাকে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংগবর্ধনায় অংশ নেবেন, দুটি কথা বলার, ফুল দেওয়ার, মঞ্চে বসার সুযোগ পাবেন, কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করেন।

এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা হাইজ্যাকের চেষ্টা চলছে। রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে বিভেদ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই বিভেদের আগুনে এখন জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির মর্যাদায়। আর দলীয় সভাপতি যদি আসেন বা তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয় তার দায়িত্বে থাকবে যুক্তরাাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবারও গবেষণা উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশকে নাকি প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘোড়া ডিঙিয়ে অনেক ঘাস খাওয়ার মতো অবস্থা। আর এই কাজটি করেছেন আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি। তিনিই নাকি নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশকে নাগরিক সংবর্ধনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এই বিষয়টি তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিকেও জানিয়েছেন দেশ থেকে আসার সময়। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান গত ৬ সেপ্টেম্বর দেশ থেকে নিউইয়র্ক আসার সময় (এয়ারপোর্টে অবস্থান) আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি ফোনে তাকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করবে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ। তিনি যেন তাকে সহযোগিতা করেন। ঐ সময় ড. সিদ্দিকুর রহমানের আর কিছু করার ছিল না। তিনি ফ্লাই করে আমেরিকায় চলে আসেন। আমেরিকায় এসে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আমরা আড়াই মাস আগে হল বুকড করেছি। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ তো হল বুকড করেনি। তারাতো আমাকে বলেনি, তারা দায়িত্ব পেয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন আব্দুল সোবহান এমপিকে কেন প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা নিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে গেলেন? এখানে তার কী স্বার্থ? তিনি কেন ঘরের মধ্যেই মারামারি লাগিয়ে দিলেন? তিনিই প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা হাইজ্যাকের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত?

আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা যে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশকে দেওয়া হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানে না। তাহলে দলের মধ্যে এই ষড়যন্ত্র কেন? আব্দুস সোবহান গোলাপ কার স্বার্থ রক্ষা করছেন- এমন প্রশ্ন অনেকের। সব নেতাকর্মীর প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এই সমস্যার সমাধান হবে।

শেয়ার করুন