০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:১৪:৫৩ অপরাহ্ন


৫ কেন্দ্রে ৫৯০২ ভোট, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন
বাংলাদেশ সোসাইটি : রব-রুহুল প্যানেলের জয়জয়কার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২২
বাংলাদেশ সোসাইটি : রব-রুহুল প্যানেলের জয়জয়কার বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে বিজয়ী প্যানেলকে ফুলেল অভিনন্দন


প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির বহুল কাক্সিক্ষত, আলোচিত এবং ব্যয়বহুল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন রব-রুহুলের নেতৃত্বাধীন প্যানেল। মূলত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে এই প্যানেলেরই জয়জয়কার ছিলো। দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে একক প্যানেলের জয় হলো। বাংলাদেশ সোসাইটির এই নির্বাচন হবার কথা ছিলো ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর। কিন্তু মামলার পর মামলা এবং করোনা মহামারীর কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটি সম্পন্ন হয় ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মামলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। এই চেষ্টায় ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা ওসমান চৌধুরী এবং সদস্য নীরা এস নীরু। তাদের প্রতিহত করা হয় আদালতে। আর এই দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ সোসাইটির আইনজীবী। সাথে ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী এবং কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী। মামলা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে ছিলো বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অশুভ শক্তির হাত পরাভূত হয়।

এবারের নির্বাচনে লাইফমেম্বারসহ বাংলাদেশ সোসাইটির ভোটার সংখ্যা ছিলো ২৭৫১০ জন। কেন্দ্র ছিলো ৫টি। উডসাইডের গুলশান টেরেস, ব্রুকলিনের পিএস ১৭৯ স্কুল, জ্যামাইকায় ইকরা সেন্টারে, ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্লেসে এবং ওজনপার্কের দেশি সেন্টারে। মামলা-মোকাদ্দমার কারণে নির্বাচন বারবার পিছানো এবং দীর্ঘসময় অতিবাহিত হবার কারণে ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিলো একটু কম। যে কারণে প্রায় ২৮ হাজার ভোটরের মধ্যে মাত্র ৫৯০২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৫টি কেন্দ্রে ৫৭টি মেশিনে এই ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনিসহ ৬ জন কমিশনার মোহাম্মদ হাকিম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, খোকন মোশাররফ, রুহুল সরকার ও কয়ছারুজ্জামান কয়েক ৫টি কেন্দ্রে তাদের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করেন। যদিও কোন কোন কেন্দ্র মৃদু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে তা নির্বাচনের পরিবেশ ব্যাহত করেনি। সেই সাথে কোন কোন কেন্দ্রে ২০ থেকে এক ঘণ্টা বিলম্বে নির্বাচন শুরু হয়। যদিও সেই সময়টি বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এই জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

৫ কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষে প্রধান কেন্দ্র উডসাইডের গুলশান টেরেস থেকে নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়। শত শত মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, উল্লাস এবং স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত এবং করতালির মাধ্যমে নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি। নির্বাচন কমিশনের সদস্য আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় এই সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য আব্দুল হাকিম মিয়া, খোকন মোশাররফ, রুহুল আমিন সরকার ও কয়ছারুজ্জামান কয়েস। আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজ, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হাজি মফিজুর রহমান, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, আজিমুর রহমান বোরহান, ওয়াসি চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলীসহ উভয় প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।

অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া। তিনি পেয়েছেন ৩১৬০ ভোট (৫৩.৫৪ শতাংশ)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন পেয়েছেন ২৫৪০ ভোট (৪৩.০৪ শতাংশ)। জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ৬৭ ভোট (১.১৪ শতাংশ)। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী আশরাফ হোসেন নয়নের চেয়ে ৬২০ ভোট। সিনিয়র সহ-সভাপতি ৩২১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মহিউদ্দিন দেওয়ান। তার ভোটের হার ৫৪.৪৬ শতাংশ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার পেয়েছেন ২৪২০ ভোট (৪১ শতাংশ)। ভোটের ব্যবধান ৭৯৪। সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফারুক ইউ চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ৩০৫২ ভোট (৫১.৭১ শতাংশ)। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম সগির পেয়েছেন ২৪৪০ ভোট (৪১.৩৪ শতাংশ)। তার ভোটের ব্যবধান ৬১২ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী। তিনি পেয়েছেন ৩১৮৯ ভোট (৫৪.০৩ শতাংশ)। এই পদে ২৪৭৯ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী। তিনি পেয়েছেন ৪২ শতাংশ। এই পদে আব্দুল মোমেন পেয়েছেন ৬৭ ভোট। রুহুল আমিন সিদ্দিকী মোহাম্মদ আলীর চেয়ে ৭১০ ভোট বেশি পেয়েছেন। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ২৮৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার ভোটের হার ৪৮.৭১ শতাংশ। তার সাথে পরাজিত হয়েছেন মিয়া মোহাম্মদ দুলাল। তিনি পেয়েছেন ২৬৫০ ভোট (৪৪.৯০ শতাংশ)। তাদের ভোটের ব্যবধান ২২৫। কোষাধ্যক্ষ পদে নওশাদ হোসেন ২৯৮২ ভোট (৪৯.৭৬ শতাংশ) পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ খান ডিউক ২৫৩৩ (৪২.৯২ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন। তাদের ভোটের ব্যবধান ৪৪৯। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ২৯৩৭ (৪৯.৪৬ শতাংশ) পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে আবুল কালাম ভুইয়া। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আহসান হাবিব পেয়েছেন ২৫৯৪ (৪৩.৯৫ শতাংশ) ভোট। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে সবাইকে অবাক করে নির্বাচিত হয়েছেন ডা. শাহনাজ লিপি। তিনি পেয়েছেন ২৯৯০(৫০.৬৬ শতাংশ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সোসাইটির বর্তমান সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায় পেয়েছেন ২৫৬০ (৪৩.৩৮ শতাংশ) ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে সর্বাধিক ৩২৯১ ভোট (৫৫.৭৬ শতাংশ) পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রিজু মোহাম্মদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হায়দার আলী পেয়েছেন ২২৩৯ (৩৭.৯৪ শতাংশ)। সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার পদে নির্বাচিত হয়েছেন খান মোহাম্মদ টিপু। তিনি পেয়েছেন ২৯৪৩ (৪৯.৮৬ শতাংশ) ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কাশেম চৌধুরী পেয়েছেন ২৫৩২ (৪২.৯০ শতাংশ)। সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফয়সল আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ৩০২০ ভোট (৫১.১৭ শতাংশ)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হাসান জিলানী পেয়েছেন ২৪৯৩ (৪২.২৪ শতাংশ) ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে ২৯৭৫ ভোট (৫০.৪১ শতাংশ) পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মাইন উদ্দিন মাহবুব। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রশিদ রানা পেয়েছেন ২৫৫১ (৪৩.২২ শতাংশ) ভোট। স্কুল ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য্য। তিনি পেয়েছেন ২৭৫৯ (৪৬.৭৫ শতাংশ)। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সামাদ মিয়া পেয়েছেন ২৬৭২ (৪৫.২৭ শতাংশ) ভোট। কার্যকরি সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফারহানা চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ৩২১০। আক্তার বাবুল। তিনি পেয়েছেন ৩১৬৭ ভোট। আবুল বাশার ভুইয়া। তিনি পেয়েছেন ২৯৯৩ ভোট। সুশান্ত দত্ত। তিনি পেয়েছেন ২৯৪৯ ভোট। সাদী মিন্টু। তিনি পেয়েছেন ২৯১৩ ভোট। শাহ এস রহমান। তিনি পেয়েছেন ২৯০৯ ভোট। কার্যকরি সদস্য পদে যারা পরাজিত হয়েছেন তারা হলেন এবি সিদ্দিক (২৬০৬), আহসান উল্যাহ (২৫০৩) ভোট, এম ডি মাহমুদ আলম (২৩৪০) এবং সাঈদুর খান ডিউক (২২৫১ ভোট)।

এবারের নির্বাচন হয়েছে অর্থের বিরুদ্ধে ভালোবাসার লড়াই। সেই লড়াই এ ভালোবাসার জয় হয়েছে। ভালোবাসার কাছে অর্থ পরাজিত হয়েছে। তা না হলে প্রায় ১৭ হাজার ভোট করেও নয়ন-আলী প্যানেলের এই দুরবস্থা কেন? তবে ভোটের ব্যাবধান করে দিয়েছেন ব্রুকলিন কেন্দ্র। বলা চলে বৃহত্তর নোয়াখালী ভোটে ক্লিন সুইপ হয়েছে নয়ন-আলী প্যানেল। রব-রুহুল পরিষদ ব্রুকলিন কেন্দ্রে যে লিড নিয়েছে তাতে বিজয় পতাকা উড়েছে। আবার ব্রুকলিন কেন্দ্রেই সর্বাধিক ভোট পড়েছে। সভাপতি প্রার্থী জয়নাল আবেদীনের ভোটও এই জয় পরাজয়ের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। নয়ন-আলী প্যানেল জ্যামাইকা এবং ব্রঙ্কস কেন্দ্রে জয়লাভ করেছে এবং রব-রুহুল প্যানেল ব্রুকলিন, উডসাইড এবং ওজনপার্ক কেন্দ্রে জয়লাভ করেছেন।

এদিকে সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটার, সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড, কার্যকরি কমিটি, সর্বোপরি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান যখন নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করছিলেন সেই সময় গুলশান টেরেসে অন্য রকম এই পরিবেশ তৈরি হয়। রব-রুহুল প্যানেলের কর্মী এবং সমর্থকরা প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন মানেই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস এবং উদ্দীপনা। বাংলাদেশ সোসাইটির ভাবমূর্তি কখনো ম্লান হবে না।

শেয়ার করুন