৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:২৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


প্রয়োজন গণতন্ত্রের স্বার্থে উদার ভূমিকা
ভারত তোষণ বা বিরোধিতা দুটিই অবমাননাকর
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
ভারত তোষণ বা বিরোধিতা দুটিই অবমাননাকর


মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট থাকলেও সরকারের বিবিধ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে জনজীবনে অস্বস্তি থাকলেও সংকট ততটা নেই। যেভাবে বলছে রাজনৈতিক ময়দানে অনুপস্থিত, অথচ মিডিয়ায় সরব প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, ঠিক সেই অবস্থা দেশে বিরাজ করছে বলা যাবে না। সারা দেশে ঈদ বাজারে জনগণের সরব উপস্থিতি, বিপুলসংখ্যক নগরবাসীর অপেক্ষাকৃত স্বস্তিতে মফস্বল শহর এবং গ্রামে ঈদ উপলক্ষে গমন প্রমাণ করে দেশে তথাকথিত মহাসংকট নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপুল উন্নয়ন ঘটায় অপেক্ষাকৃত স্বস্তি এবং নিরাপদেই গন্তব্য স্থানে গমন করেছে নগরবাসী। ঈদের কিছু দিন আগে তীব্র গরমের সময় বিদ্যুৎ সংকটে মহানগরীর বাইরের জনগণ হাঁসফাঁস করলেও এখন ঈদের ছুটিতে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংকট নেই বললেই চলে। তাই দেশে মহাসংকট চলছে বা সংকটমুক্ত এই নিয়ে বিরোধীদল এবং সরকারি দলের নেতাদের নিত্য বাহাস করা অর্থহীন। 

মূল্যস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য 

নানা বৈষয়িক ঘটনা এবং সরকারের সঠিক দল সময়ে যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতার কারণে মূল্যস্ফীতি এখনো বিদ্যমান এটি অস্বীকার করা যাবে না। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উচ্চমূল্য সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে নিঃসন্দেহে। অনেকেই খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলেছেন। কিন্তু তাই বলে দেশে মানুষ না খেয়ে আছে বলবো না। বিরোধীদল প্রতিনিয়ত যেভাবে বলছে দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে, সেটি সত্যের অপলাপ। সরকার দেরিতে হলেও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করায় মুদ্রাস্ফীতি সীমাহীন হয়ে যায়নি। এখনো সরকারি হিসাবে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে আছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যহ্রাস, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় কমে যাওয়া, এর মধ্যে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত বিদেশি ঋণের সুদসহ মূল পরিশোধ শুরু হওয়ায় সরকারের ব্যয় সংকোচন এবং মিতব্যয়ী হওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সরকারের গৃহীত আমদানি সংকোচন নীতির কিছুটা শুভ প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু এর ফলে শিল্প বিকাশ এবং চালু শিল্পকারখানাগুলো পরিচালনা অসুবিধাজনক হয়ে পড়েছে। বিশেষত জ্বালানি আমদানিতে প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রার সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সরকার দেরিতে হলেও নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে তৎপরতা শুরু করেছে। শুভ ফল আসতে তিন-পাঁচ বছর অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ জাতীয় সমস্যা। 

এগুলো নিয়ে বাহাস না করে সরকার এবং বিরোধীদলের উচিত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। সরকারের কৃচ্ছতামূলক কর্মকাণ্ডের সফলতায় জনগণের সচেতনতা সৃষ্টি বিশেষত অশুভ সিন্ডিকেটসমূহের তৎপরতা বন্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা। 

বিরোধীদল বিগত নির্বাচন বয়কট করার পর আন্দোলনের নতুন ইস্যু হিসেবে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় ভারতীয় পণ্যের অবাধপ্রবাহ বজায় থাকায় এই সময়ে এই ধরনের হঠকারীমূলক আন্দোলন করে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে নেওয়া শিশুসুলভ কাজ। বাংলাদেশ কেন নিজ দেশে অধিকাংশ দ্রব্যাদির যথেষ্ট উৎপাদন এবং সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও উত্তরোত্তর ভারতীয় দ্রব্যাদীর যাকে যুখে পড়েছে সেটি অনুসন্ধান এবং নিবারণমূলক কার্যক্রম প্রয়োজন। উদাহরণ হিসাবে বলি কিছু দিন আগেও ভারতীয় গবাদি পশু আমদানি করা ছাড়া বাংলাদেশে কোরবানি হত না। একসময় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশে অনেক গরু মহিষের খামার গড়ে উঠেছে। ভারতীয় গবাদি পশু বৈধপথে এখন আর আমদানির প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে নানা ধরনের তৈরি পোশাক, উন্নত মানের টেক্সটাইল দ্রব্যাদি প্রস্তুতিতে এখন শীর্ষস্থানীয়, বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণে রফতানি হচ্ছে। কিন্তু তবুও একশ্রেণির মানুষের বিকলাঙ্গ মানসিকতার কারণে ভারতীয় পোশাকের নেশা থাকায় ব্যবসায়ী মহল ভারতীয় পোশাক আমদানি করছে। প্রয়োজন মানসিকতা পরিবর্তন। সরকার এবং বিরোধীদল যৌথভাবে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করলে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার সীমিত হয়ে আসবে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট নির্মূল করা সময়ের দাবি। এবারের রমজানের সময় সরকারের কিছু কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বাজার মূল্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। ঈদ উপলক্ষে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি সীমিত আয়ের মানুষ প্রিয়জনদের জন্য বাজারে স্বাভাবিকভাবে কেনা কাটা করেছে। সরকারের পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, কিছু মহানুভব ব্যক্তি, করপোরেট হাউস সুলভে অথবা ক্ষেত্রবিশেষে খাদ্য বিতরণ করেছে। জনগণের মাঝে সচেতনতা আসছে। 

বলতে পারেন রমজানের অধিকাংশ সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কেন ঈদের আগে শেষ কয়েকদিন দেশজুড়ে নতুন করে বিদ্যুৎ সংকট হলো? দেখুন রমজান মাসের অধিকাংশ সময় প্রকৃতি সময় থাকায় আবহাওয়া উষ্ণ ছিল না। বিদ্যুৎ চাহিদা ১২০০০-১৩০০০ মেগাওয়াট ছিল। শেষ কয়েক দিন দাবদাহ সৃষ্টি হওয়ায় চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ালো ২০০০-২৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করে তীব্র গরমের সময় ঢাকা মহানগরীর বাইরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। মূল কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ সংকট। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট এনার্জি মালিকানাধীন কক্সসবাজারের মহেশখালী উপকূলে স্থাপিত এফেসারু সিঙ্গাপুরে রক্ষণাবেক্ষণের পর ফিরে এসে যথাসময়ে চালু না হওয়ায় সংকট ঘনীভূত হয়। ৩০০-৪০০ এমএম সিএফডি গ্যাস সরবরাহ বাড়লে সংকট অনেকটাই সীমিত থাকত। এখন ঈদের বিরতিতে স্বস্তি বিরাজ করছে। এই সময় জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে সরবরাহ সামাল দেওয়ার পরিস্থিতি পুনরায় বিবেচনা করে কঠোরভাবে কৃচ্ছ্রতা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সরকার এপ্রিলের মধ্য ভাগ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্তই পিক বিদ্যুৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে জনরোষের সৃষ্টি হবে। 

স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা 

এবার কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঈদযাত্রা মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল। সড়ক এবং রেলপথে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুটির উপযোগিতা উপলব্ধি করা গেছে, জলপথেও সংকট হয়নি। রেলের টিকেট নিয়ে শুরুতে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হলেও শেষদিকে স্বস্তি এসেছে। উন্নত হতে থাকা সড়ক ব্যবস্থাপনার শুভ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আশা করা যায় সড়ক ব্যবস্থাপনা ক্রমান্বয়ে উন্নত হতে থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিং, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-দক্ষিণ বাংলা সড়ক যোগাযোগের ক্রমাগত উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকা-সিলেট সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসের বাকি কাজ, আশুলিয়া-বাইপাল এলিভেটেড এক্সপ্রেস কাজ, ঢাকা বাইপাস নির্মাণ শেষ হলে দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব সূচিত হবে। রাজধানী শহরেও যানজট অনেকটাই সহনীয় হয়ে আসবে। 

প্রয়োজন গণতন্ত্রের স্বার্থে উদার ভূমিকা 

এখন যেটি প্রয়োজন দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকারের উদার ভূমিকা। যে কোনোভাবে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সরকার এবং বিরোধীপক্ষ আলোচনার টেবিলে আসতেই হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি সংঘাতময়। অর্থনীতি ভঙ্গুর। জাতীয় সমস্যাগুলো সমধান করতে জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য, অর্থনীতি ভেঙে পড়লে সেটি কারো জন্যে শুভ হবে না। উদ্যোগটি আসতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। নাহলে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবে, জ্বালানি সংগত অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে ফেলবে। সরকার আর বিরোধীদলের নিত্যদিনের বাহাস অবিলম্বে বন্ধ করে আলোচনার পথ নকশা সৃষ্টি করাই হবে এখন দায়িত্বশীল রাজনীতি। ভারত তোষণ বা ভারত বিরোধিতা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজনীতির মূলকথা হতে পারে না। দুটি বিষয়ই লজ্জার। যা বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য অবমানকরও!

শেয়ার করুন