২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:২৬:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


২০২৪, ২০২৫ সালে গভীর জ্বালানি সংকটে পড়বে বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
২০২৪, ২০২৫ সালে গভীর জ্বালানি সংকটে পড়বে বাংলাদেশ


আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। নতুন সরকার বা বর্তমান সরকার নতুনভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে শুরুর দুই বছর তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি গভীর জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকটে পড়বে। সরকারি তহবিল প্রায় শূন্য। অর্থাভাবে বিপিসি, পেট্রোবাংলা, বিপিডিবি দেনার দায়ে জর্জরিত। বিপুল বকেয়া নিয়ে অস্তিত্বের সংকটে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের সব প্রতিষ্ঠান। 

দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রমাণিত গ্যাস সম্পদ। ভুল পরামর্শে বিভ্রান্ত পলিসি মেকার্সরা উঁচু মানের, মাইনিং গভীরতায় থাকা কয়লা সম্পদ আহরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। দুর্বল পেট্রোবাংলা কারিগরি দক্ষতার সীমাবদ্ধতা এবং অর্থসংকটে স্থলভাগ বা সাগর তোলার গ্যাসসম্পদ আহরণে কার্যকরি ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সাগর উপকূল অগভীর থাকা সত্ত্বেও কয়লা পরিবহন সংকট থাকা সত্ত্বেও পায়েরা, রামপালে আমদানি কয়লাভিত্তিক বড় ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট গড়ে তুলেছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সূলভ মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাস ব্যবহারকারী বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহকে অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। ফার্নেস অয়েলভিত্তিক খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্থাভাবে তেল কেনায় সংকটের কারণে বাধাগ্রস্ত। এক সময় ৯০ শতাংশ নিজস্ব জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ আমদানি জ্বালানি নির্ভর। ২০২৪-২০২৫ নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন আতঙ্কজনকভাবে কমে যাবে। এই সময়ের মধ্যে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় সমগ্র দেশবাসীকে আনার আত্মতৃপ্তিতে থাকলেও আগামীতে ক্ষমতায় এসে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে সেটি দেখার অপেক্ষায়।

ভুল বাস্তবায়ন কৌশল পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সংকটে ফেলেছে দেশে এখন বাপেক্স অনুসন্ধান এবং উৎপাদন কোম্পানি, বিজিএফসিএল এবং এসজিএফএল দুটি উৎপাদন কোম্পানি। পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানি শেভরন এবং আইরিশ কোম্পানি টালো পেট্রোবাংলার সঙ্গে সম্পাদিত উৎপাদন বণ্টন চুক্তির আওতায় চারটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন করছে। ২০০০-২০২৩ বাপেক্স স্থলভাগে একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অনুসন্ধান কাজের দায়িত্বে। বাপেক্সের ঠিকাদার হয়ে কাজ করেছে এবং করছে রাশিয়ার গ্যাজপ্রম নিয়োজিত উজবেক খনন ঠিকাদার এরিয়েল। মূলত উৎপাদনরত গ্যাস ক্ষেত্রসমূহের উৎপাদন বাড়িয়ে একসময় দৈনিক উৎপাদন ২ হাজার ৭৫০ এমএমসিএফডি পর্যন্ত বাড়ানো হলেও বর্তমানে ওয়াটার ড্রাইভ প্রকৃতির প্রতি গ্যাস কূপের উৎপাদন আতঙ্কজনকভাবে কমছে। ৩০ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর ২০২৩ গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২১০০ এমএমসিএফডি। এর সঙ্গে ৫১৬ এমএমসিএফডি আমদানিকৃত এলএনজি যোগ হয়ে মোট সরবরাহ হয়েছে ২৬১৬ এমএমসিএফডি। চাহিদা ৪২০০-৪৫০০ এমএফসিএফডি। গ্যাস সংকটে উৎপাদন সমস্যায় সিরাজগঞ্জ, মেঘনাঘাট, ভেড়ামারা, আশুগঞ্জ, ঘোড়শাল, সিদ্ধিরগঞ্জে এলাকার অধিকাংশ গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এমতাবস্থায় বিপিডিবি যেমন অনেক সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ আদায় করতে পারছে না। ঠিক তেমনি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সারকারখানাগুলোর কাছে বিপুল বকেয়া পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর কাছে। উপরন্তু পেট্রোবাংলা থেকে জিডিএফ ফান্ডের অর্থ এবং পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলো থেকে ফিক্সড ডিপোজিট ফান্ড সরকার তুলে নেওয়ায় অধিকাংশ কোম্পানি অর্থ সংকটে পড়েছে। সরকার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি কেনার সুবিধার্থে সাবসিডির অর্থ সময় মত চার করতে পারছে না। আগামীতে সরকার অর্থসংকট সামাল দিয়ে কীভাবে এগিয়ে যায় দেখার অপেক্ষায়। 

পেট্রোবাংলার দৈনিক উৎপাদন এবং গ্যাস বিপণন বিবরণ থেকে দেখা যায় বর্তমান উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আসছে একমাত্র বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। সেখান থেকে গত বেশ কয়েকবছর যাবৎ উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উৎপাদন করে এখন ডিপ্লেশন সুস্পষ্ট। আগামী ২ বছরে উৎপাদন আরো দ্রুত কোমর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন বাপেক্স কার্যক্রম এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। ২০২৬-এর আগে নতুন করে এলএনজি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে কৃচ্ছ্রসাধন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দ্রুত স্থলভাগে বাপেক্সের পাশাপাশি আইওসি নিয়োগ করে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে অনুসন্ধান কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া গতি অন্তর নেই। অবাস্তব পরিকল্পনায় সরকার বাপেক্সকে দিয়ে ১০৮ কূপ খননের পরিকল্পনা করেছিল। এখনো যে পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে সেটিও অপ্রতুল। 

জিটিসিএলকে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ করিয়ে পঙ্গু করা হয়েছে গ্যাস অরবরাহ বৃদ্ধির সঠিক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করেই জিটিসিএলকে বিপুল বিনিয়োগ করানো হয়েছে গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো সম্প্রসারণে। বর্তমান জিটিসিএল সঞ্চালন গ্রিড ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সঞ্চালন করার সক্ষমতা রাখে। অথচ সরবরাহ হচ্ছে ২৬০০-২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মিত হলেও সীমিত গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। একই কথা প্রযোজ্য রাজশাহী, বগুড়া অঞ্চলে। এর পরেও বিপুলভাবে দিনাজপুর হয়ে রংপুরে গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়েছে। অথচ বিপুল পরিমাণ আবিষ্কৃত গ্যাস অলস পড়ে আছে ভোলায়। পাইপলাইন নির্মাণ দীর্ঘায়িত হওয়ায় মেঘনাঘাটে নির্মিত কয়েকটি জ্বালানি দক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সিরাজগঞ্জ, ভেড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ভুগছে গ্যাস দুর্ভিক্ষে। কেন কিছু এফেসারও এবং ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ বিলম্বিত হলো? এখন সামিট গ্রুপ, Excelerate এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং এলএনজি সরবরাহের চুক্তি সম্পাদন করেছে। কাতার, ওমানের সঙ্গেও এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি ২০২৬ থেকে কার্যকর হবে ২০২৪, ২০২৫ জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে ভুগতে থাকা সরকার কি পারবে অস্থির বিশ্ব বাজার থেকে উচ্চমূল্যে জানি কিনতে? জ্বালানিসংকটের কারণে রফতানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো কীভাবে টিকে থাকবে? 

শেয়ার করুন