১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:৫৫:২৬ পূর্বাহ্ন


পদ্মাসেতু আবেগ উচ্ছ্বাসে যেন লক্ষ্যচ্যুত না হয়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২২
পদ্মাসেতু আবেগ উচ্ছ্বাসে যেন লক্ষ্যচ্যুত না হয়


নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ জনগণের অর্থে সম্পাদিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর সফল বাস্তবায়ন স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অর্জন। দক্ষিণ বাংলাদেশের ২৩ জেলার উন্নয়নের দুয়ার খুলে দিয়েছে এই সড়ক এবং রেল সেতু। বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার সরাসরি সংযুক্ত হয়েছে দেশের সকল অংশের সঙ্গে। উন্মুক্ত হয়েছে অবহেলিত বিশাল অঞ্চলে শিল্প বিপ্লবের। গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত হলে, কাঁচামালের সহজলভ্যতা এবং সস্তা শ্রমের কারণে দক্ষিণ অঞ্চলে দ্রুত শিল্পবিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা যায়। 

তবে দেখতে হবে অতি উচ্ছ্বাস আর অতিরিক্ত আবেগের কারণে পদ্মাসেতুর অর্জন যেন ব্যর্থ না হয়। সেতুর দুই পাড়, জাজিরা থেকে পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে যেন পরিকল্পিত, সাম্যভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। যমুনা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের পরেও কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত হয়নি গ্যাস-বিদ্যুতের সুষম সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায়। বিষয়টি বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে হবে। 

সবাই স্বীকার করবেন পদ্মাসেতু এবং যমুনা সেতুর মধ্যে পার্থক্য আছে। পদ্মাসেতু দুটি প্রধান বন্দর মংলা,পায়রা দেশের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম সুন্দরবন, কুয়াকাটার মতো দর্শনীয় অঞ্চলে যাতায়াত সহজতর হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটানসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগে মংলা এবং পায়রা বন্দরের ভূমিকা সহজতর হচ্ছে। শুধু সড়ক পথ নয়, রেলসংযোগ সম্পাদিত হলে উন্নয়ন নতুন গতি পাবে। 

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে বিদ্যুতের সহজ প্রাপ্যতার কারণে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সেই সঙ্গে গ্যাসের প্রাপ্যতা সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা গেলে শিল্পায়নত্বরান্বিত হবে। তবে দেখতে হবে শিল্পায়ন যেন মূলত কৃষিনির্ভর হয়। কৃষিকে বঞ্চিত করে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো শিল্প গড়ে না ওঠে। বাংলাদেশে কিন্তু ভূমির পরিমাণ সীমিত। প্রতি ইঞ্চি জমি যেন সঠিকভাবে ব্যাবহরিত হয়। প্লাবন ভূমিকে বিঘ্নিত করে শিলায়ন না হয়। পরিবেশ বিঘ্নিত করে যেন কোনো উন্নয়ন না হয়। 

সুষম উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে জ্বালানি, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সমতাভিত্তিক উন্নয়ন। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভারোর থেকে কুষ্টিয়া অঞ্চল দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানি দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করলেও এখন পর্যন্ত বৃহত্তর খুলনা, বৃহত্তর বরিশাল বা ফরিপুরের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় টেকসই, মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও দক্ষিণ অঞ্চল গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে বঞ্চিত। পদ্মাসেতু কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলে গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহের নতুন জানালা খুলে দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে যতো দ্রুত ভোলার গ্যাস দক্ষিণ অঞ্চলে সরবরাহ এবং গ্যাস গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে ততোই মঙ্গল হবে।  গ্যাস বিদ্যুতের সুষম উন্নয়নের ওপর নির্ভর করবে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক উন্নয়ন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেতুর উভয়প্রান্তে হংকংয়ের আদলে নগরায়ন হবে। আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর গড়ে উঠবে, অলিম্পিক ভিলেজ, স্মার্ট সিটি, স্বনির্ভর অঞ্চল গড়ে উঠবে। আশা করি, এগুলো সব একটি সুসমন্বিত পরিকল্পনা এবং পেশাদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।  মনে রাখতে হবে পদ্মা বহুমুখী সেতু কিন্তু জাতীয় অর্জন,সমগ্র জাতির অর্জন। আবেগ, উচ্ছ্বাস থাকবে।  কিন্তু সেই আবেগের প্রকাশ যেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে।


শেয়ার করুন