১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৫:৩৬:০৯ পূর্বাহ্ন


মূল চ্যালেঞ্জ হাইব্রিড আর অবাধ দুর্নীতি
২০২৩ সালের নির্বাচনে বিপদে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ সরকার
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৪-২০২২
২০২৩ সালের নির্বাচনে বিপদে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ সরকার গনভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সেন্টাল ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন, ফাইল ছবি


ক্রমাগত তিন টার্মে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সংকটসমূহ হলো- দলে হাইব্রিড সামলানো এবং সর্ব পর্যায়ে দুর্নীবাজদের দমন। কিছু দলীয় নেতাদের প্রশ্রয়-আশ্রয়ে আগাছার মতো দলে অনুপ্রবেশ করেছে বিভিন্ন দল থেকে সুবিধাবাদী দুর্নীতিপরায়ণ গোষ্ঠী। ঘুষ, মারামারি, ধর্ষণ এখন নিত্যদিনের খবরের শিরোনাম।

বঙ্গবন্ধু আদর্শের  ঘোরতর বিরোধীরাও পোশাক পাল্টে সরকারি অফিস-আদালতে শীর্ষপর্যায়ে আসীন হয়ে প্রতিনিয়ত দেশ এবং জাতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। ১৯৭২-৭৫-এর মতোই কিছু আত্মীয়স্বজন দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে ক্ষেত্রবিশেষে সরকারপ্রধানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সুবিধাবাদী আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির প্লাবন। মেগা প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রক্কলন থেকে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্বলতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেই সাথে মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বিচলিত হওয়া। বা শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে পড়ার বিষয়ে শঙ্কা নয়। 

শঙ্কা নিজেদের শুদ্ধি এবং ভাবমূর্তি। সময় ২০২২। এই সময়ে নিজেদের ধুয়ে মুছে সাফ না করা সম্ভব হলে, যেভাবেই ২০২৩ জাতীয় নির্বাচন করা হোক বিপদে পড়তে পারে সরকার। ১৯৭৫, ১৯৯১, ২০০১ নিজেদের ভারেই তলিয়ে গিয়েছে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা। মোক্ষম সময়ে কিছু  ইঁদুর নৌকা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। জানি, এখন দেশ শাসনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প নেই। কিন্তু উনি ছাড়া খোদ শাসক দলে কার কোনো অবস্থান আছে জনগণের মাঝে? প্রশ্ন উঠছে, পাচার হয়ে গেছে লক্ষ কোটি টাকা। কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর। সেই সব দেশে হাইব্রিড সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ সংগঠন, বাংলাদেশ দূতাবাস কি ওদের চিহ্নিত করতে পেরেছে? সংকট মুহূর্তে পাচারকারী দুর্নীতিবাজ চক্র কি শাসক দলের পাশে দাঁড়াবে? 

শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন

কেন, কীভাবে শ্রীলঙ্কার মতো শিক্ষিত সুশীল দেশ এখন দেউলিয়া হয়ে পড়েছে অধিকাংশ মানুষ জানে। ওদের ভ্রান্তনীতি কারণে-অকারণে উচ্চসুদে ঋণ গ্রহণ, বাছবিচার না করে বড় বড়  প্রকল্প  গ্রহণ, করোনা সময়ে শুল্ক ছাড় সুন্দর দেশটিকে পতনের গিরিখাদে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এই সময়ে অনেক ঋণনির্ভর মেগা প্রকল্প হাতে নিলেও পরিস্থিতি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের কৃষক সমাজ কিন্তু ফসলের বাম্পার ফলন ক্রমাগত করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখেছে। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বেড়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। বাজার সিন্ডিকেটে নিয়ন্ত্রণে আছে। রফতানির প্রবৃদ্ধি ঘটায় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ অক্ষুণ থাকায় রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক আছে।

ঋণনির্ভর অধিকাংশ প্রকল্প চালু হওয়ার পর স্বল্প সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বিধায় ঋণ নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই। আর যাই হোক বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে না।  তবে এখন থেকে প্রকল্প গ্রহণ বিষয়ে বিজনেস অ্যাজইউজুয়াল নীতি পরিহার করতে হবে। পাতাল রেলের মতো বিলাসী কার্যক্রম গ্রহণ না করে, নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ, মেধাসম্পদ সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। মেধাবী নবীন প্রজন্মের জন্য এগিয়ে যাবার পথ সুসমতল করতে হবে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ, র‌্যাব, সরকারি প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিদেশি মিশন যেখানে হাইব্রিডের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সেগুলি ঝেড়ে মুছে শুদ্ধ করতে হবে।  

আরো একটি শঙ্কা হলো জ্বালানি নিরাপত্তা। নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উত্তোলন করে জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রণ না হলে বিপদে পড়বে অর্থনীতি, বিদেশি বিনিয়োগ হবে না। বাংলাদেশকে জ্বালানির জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে কয়লা সম্পদ কাজে লাগানোর মতো কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে, সাগর সম্পদ আরোহনের সূচনা করতে হবে। জ্বালানি সেক্টরকে পেশাদার নির্ভর করে গতিশীল করতে হবে।  

মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগের কিছু আছে বলে মনে করি না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার হরণে চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশে সব কিছু শতভাগ ভালো বলবো না। কিন্তু অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ ভালো আছে। তবে সরকারের উচিত হবে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সহায়তা করা। আমি  বিশ্বাস করি স্বচ্ছ নির্বাচন হলেও জয় পাবে সরকারি দল, যদি তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে নির্বাচনের আগেই সরকারকে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা।  মাফিয়া সিন্ডিকেটেদের আইনের যেতে এনে বিচার করতে হবে। একই সাথে কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী হত্যাকাণ্ডেরও বিচার করতে হবে।


শেয়ার করুন